|
শুক্রাণুর শেষ দৌড়ের শক্তি রহস্য ভেদ করলেন বিজ্ঞানীরা
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() শুক্রাণুর শেষ দৌড়ের শক্তি রহস্য ভেদ করলেন বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানীরা এমন এক ক্ষুদ্র রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা ‘সুইচ’ চিহ্নিত করেছেন, যা শুক্রাণুকে ডিম্বাণুর দিকে ছুটে যাওয়ার আগ মুহূর্তে অতিরিক্ত শক্তি ও গতি দেয়, যাতে শুক্রাণু ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাতে ও নিষেক ঘটাতে পারে বলে দাবি তাদের। এ গবেষণার ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে এবং পুরুষদের জন্য নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রণের নতুন উপায় উদ্ভাবনেও সাহায্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। ‘মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি’র জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ও এ গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক মেলানি বালবাখ বলেছেন, “শুক্রাণুর বিপাকক্রিয়া বিশেষ ধরনের। কারণ শুক্রাণুর একমাত্র লক্ষ্য, নিষেক বা ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়া। আর সে কারণেই এর সমস্ত শক্তি কেবল নিষেক প্রক্রিয়ার লক্ষ্য পূরণের জন্যই কাজ করে।” পুরুষ দেহে থাকা অবস্থায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর শুক্রাণুর শক্তি কম থাকে। এরপর যখন এরা স্ত্রী প্রাণীর প্রজনন পথে সাঁতার কাটতে শুরু করে তখন একাধিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। আর এসব পরিবর্তনই শেষ পর্যন্ত এদেরকে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাতে ও নিষেক ঘটাতে সাহায্য করে। যার মধ্যে রয়েছে দ্রুত সাঁতার কাটার পাশাপাশি এমনসব পরিবর্তন, যা শুক্রাণুর ঝিল্লিতে ঘটে ও ডিম্বাণুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে। বালবাখ বলেছেন, “অনেক ধরনের কোষই হঠাৎ করে কম শক্তি থেকে বেশি শক্তির অবস্থায় চলে যায়। আর এ প্রক্রিয়াটি বুঝতে ও গবেষণা করতে খুব ভালো উদাহরণ হচ্ছে শুক্রাণু।” ২০২৩ সালে এই বিষয়ে ‘মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি’তে গবেষণা শুরু করেছেন বালবাখ। ‘ওয়েইল কর্নেল মেডিসিন’-এ পোস্টডক্টরাল গবেষক হিসেবে কাজের সময় বালবাখ এমন গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন, যা সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল। ওই সময় তিনি দেখিয়েছিলেন, শুক্রাণুর এক বিশেষ এনজাইম বন্ধ করলে ইঁদুর কিছু সময়ের জন্য সন্তান ধারণ করতে পারে না, অর্থাৎ এরা সাময়িকভাবে বন্ধ্যাত্বে চলে যায়। শুক্রাণুর কাজের জন্যও বিপাক একইভাবে অপরিহার্য এবং বিজ্ঞানীরা জানতেন, নিষিক্তকরণের আগে আচরণগত পরিবর্তনের জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন। তবে এর আগে তারা নিশ্চিত ছিলেন না এই চাহিদা মেটাতে শুক্রাণু কীভাবে নিজেদের মানিয়ে নেয়। ‘মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টার’ ও ‘ভ্যান অ্যান্ডেল ইনস্টিটিউট’-এর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশেষ এক পদ্ধতি তৈরি করেছে বালবাখের গবেষণা দলটি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষকরা দেখেছেন, শুক্রাণু কীভাবে নিজের আশপাশে থাকা গ্লুকোজকে গ্রহণ করে তা ‘শক্তি বা জ্বালানি’ হিসেবে কাজে লাগায়। গবেষণা দলটি পরীক্ষা করেছে, শুক্রাণুর ‘জ্বালানি’ বা গ্লুকোজ কোষের ভেতরে কীভাবে কাজ করে। এই পরীক্ষায় তারা বুঝতে পেরেছেন, স্থির অবস্থায় থাকা শুক্রাণু ও সক্রিয় বা সাঁতার কাটার জন্য প্রস্তুত বা গতিশীল শুক্রাণুর মধ্যে গ্লুকোজ ব্যবহারের ধরনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। বালবাখ বলেছেন, “আপনি এই পদ্ধতিটিকে এমনভাবে ভাবতে পারেন যেন একটি গাড়ির ছাদ উজ্জ্বল গোলাপি রঙে রাঙানো হয়েছে এবং তারপর একটি ড্রোন ব্যবহার করে ট্রাফিকের মধ্যে দিয়ে সেই গাড়িটিকে অনুসরণ করা হচ্ছে।” সহজ করে বললে, বিজ্ঞানীরা বোঝাতে চাইছেন, গ্লুকোজকে গোলাপি রং ধরে নিলে, শুক্রাণুর ভেতরে যখন গ্লুকোজ নিজের রাসায়নিক পথ ধরে এগোতে থাকে, যেমন– ট্রাফিকের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলে তখন এরা খুব সহজ ও স্পষ্টভাবে সেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে ট্র্যাক বা অনুসরণ করতে পারে, ঠিক যেমন ড্রোন ব্যবহার করে অনুসরণ করা হয় বিষয়টি তেমনই। বালবাখ বলেছেন, “সক্রিয় শুক্রাণুর ক্ষেত্রে, আমরা দেখেছি শুক্রাণু যখন দ্রুত গতিতে সাঁতার কাটার জন্য প্রস্তুত হয় তখন এরা গ্লুকোজ ব্যবহারের জন্য দ্রুত ও একটি নির্দিষ্ট পথ বেছে নিচ্ছে। এমনকি শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা হচ্ছিল সেটিও স্পষ্ট দেখেছি আমরা।” এ গবেষণায় উঠে এসেছে, শুক্রাণুকে ডিম্বাণু নিষিক্ত করার চূড়ান্ত কাজটি করতে হলে কত বেশি শক্তির প্রয়োজন হয় ও এই শক্তি সরবরাহ ও ব্যবহারের প্রক্রিয়াটি কত জটিল। শুক্রাণুর যাত্রার বিষয়টি কেবল সাঁতার কাটা নয়, বরং এটি এক সুসংগঠিত ও শক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া। এর মধ্যে রয়েছে ‘অ্যালডোলেজ’ নামের বিশেষ এক রাসায়নিক উপাদান, যা শুক্রাণুকে গ্লুকোজ থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি রূপান্তর করতে সাহায্য করে। শুক্রাণু কেবল জ্বালানি নেয় না, বরং যাত্রা শুরুর সময় নিজের ভেতরে সঞ্চিত কিছু আণবিক জ্বালানিও ব্যবহার করে এরা। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, শুক্রাণুর ভেতরে কিছু উৎসেচক ট্রাফিক পুলিশের মতো কাজ করে। এরা নিশ্চিত করে, গ্লুকোজ যেন ঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে ও সঠিক গতিতে কোষের ভেতরে প্রবাহিত হয়, যাতে নিজের প্রয়োজন অনুসারে শক্তি ব্যবহার করতে পারে শুক্রাণু। ভবিষ্যতে শুক্রাণু কীভাবে নিজেদের শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের মতো বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি উৎস ব্যবহার করে তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাবেন বালবাখ। প্রজনন স্বাস্থ্যের বহু সমস্যা বুঝতে ও এর চিকিৎসায় নতুন পথ খুলে দিতে পারে এ গবেষণা। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ। গবেষণাটিতে সহায়তা দিয়েছে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট’। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
