|
আলফাডাঙ্গায় নওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের মহোৎসব প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে
আলমগীর কবির, আলফাডাঙ্গা
|
![]() আলফাডাঙ্গায় নওয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের মহোৎসব প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক মফিদুল ইসলামের দায়িত্বহীনতা ও অদক্ষতার কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভয়াবহভাবে নষ্ট হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষকে রান্নাঘরে পরিণত করেছেন, যেখানে ক্লাস চলাকালীন সময়েই রান্না হয়। এতে পাঠদান দীর্ঘ সময় ব্যাহত হয়। সহকারী শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। তিনি প্রতিনিয়ত দেরিতে বিদ্যালয়ে আসেন এবং অফিসের মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ব্যক্তিগত কাজে চলে যান। অভিভাবকদের অভিযোগ, তিনি নিজের সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করেও প্রতিদিন নওয়াপাড়া বিদ্যালয়ে এনে নিজের ক্লাস বাদ দিয়ে তাকে পড়ান। অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন কিংবা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের (যেমন ওয়াশব্লক সংস্কার, ক্ষুদ্র মেরামত, প্রাক বরাদ্দ ইত্যাদি) টাকার সঠিক ব্যবহার না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। কাগজে-কলমে কাজের হিসাব দেখানো হলেও বাস্তবে তার কোনো চিহ্ন নেই। স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক মফিদুল ইসলাম নওয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং সহকারী শিক্ষক এনামুল হক নওয়াপাড়ার জামাই ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার শিকদারের পুত্র। একই গ্রামের আরও দুই শিক্ষক ও নৈশপ্রহরী থাকায় বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি তাদের হাতে। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিদ্যালয়ের সরকারি জায়গা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। সহকারী শিক্ষক এনামুল হক সবার জুনিয়র হয়েও বিদ্যালয়ের স্লিপ কমিটির টি.আর প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন। স্থানীয়দের দাবি, তিনি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন। নওয়াপাড়া গ্রামের নারী অভিভাবক রাজিয়া সুলতানা বলেন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষকরা সময়মতো আসেন না, পড়ান না অথচ সরকারি ভাতা ঠিকই তোলেন। আমরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ চাই। নওয়াপাড়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা মাহমুদ মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমি লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছি। বাকাইল গ্রামের অভিভাবক শামীম মিয়া বলেন, বিদ্যালয়টি এখন কয়েকজনের পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। বাচ্চারা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক এনামুল হক মুঠোফোনে বলেন, “আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকি এবং দায়িত্ব পালন করি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। যাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তারাই এসব অভিযোগ করছে। প্রধান শিক্ষক মো. মফিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিছু অভিভাবক ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছি। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসের উদ্দিন টিটো বলেন, “শিক্ষকরা যদি দায়িত্বে অবহেলা করেন, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে পড়বে। অভিযোগগুলো সত্য প্রমাণিত হলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। দোষ প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ পুনরুদ্ধারে এবং অনিয়মে জড়িত শিক্ষকদের দ্রুত বদলি ও তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
