|
কুবিতে শিক্ষক নিয়োগে বাধার অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
অমি দেব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
|
![]() কুবিতে শিক্ষক নিয়োগে বাধার অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন রবিবার (২৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে বেলা ১২টার দিকে এই মানববন্ধন করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে দ্রুত স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা 'বহিরাগতদের মাতব্বরি, চলবে না-চলবে না', 'কুবিয়ানদের এক দাবি, শিক্ষক নিয়োগ জরুরি', 'সেশনজট, আর নয়-আর নয়,' 'শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে', 'এসো ভাই, এসো বোন-গড়ি তুলি আন্দোলনে' ইত্যাদি স্লোগান দেন। মানববন্ধনে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক নাহিয়ান বলেন, 'গত সময়ে ও শিক্ষক সমিতির দণ্ডের কারণে আমরা ভুক্তভোগী হয়েছিলাম। তারা শিক্ষক নিয়োগ অনৈতিকভাবে করার জন্য একটা অংশ অন্তর্ভুক্ত করেন। আমরা আগে ইলিয়াস গ্রুপ, রেজা গ্রুপ দেখেছি, বর্তমানে ও এমন একটা আদু ভাই গ্রুপ দেখতেছি যারা বিভিন্নভাবে চাটুকারিতা করতেছে। আমরা রেজা গ্রুপ, ইলিয়াস গ্রুপ খেদায় দিয়েছি। আপনারাও যদি সঠিক পথে না থাকেন আপনাদের ও সরাতে বেশি সময় লাগবে না।' ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানুল ইসলাম বলেন, 'আমরা অনেকদিন যাবৎ শিক্ষক সংকটে ভুগতেছি যার কারণে আমরা প্রায় ০৬ মাস যাবৎ ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আসছি এবং আমরা ইউজিসি পর্যন্ত স্মারকলিপি দিয়ে এসেছি। তার ফলে আমরা শিক্ষক নিয়োগের একটা আশা পেয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপির একজন মনোনীত এমপি প্রার্থী তিনি শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এটি খুবই কষ্টদায়ক এবং আমরা এটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।' তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করা মোটেই কাম্য নয়। আমরা চাই আমাদের ডিপার্টমেন্টে খুবই দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ বাস্তবায়ন করা দরকার। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করতে চাই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন শিক্ষক নিয়োগ বাস্তবায়ন করা হয়।' গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হোসেন আল আমিন বলেন, 'আমরা ৫ই আগস্টের পর যে বাংলাদেশ চেয়েছি, সেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, কোনো রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ থাকবে না। কিন্তু, আমরা দেখতে পাচ্ছি—এক বিএনপি নেতা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হবে কি হবে না, এ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন এবং তিনি ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছেন। আমি তাকে বলতে চাই বিশ্ববিদ্যালয় কারো বাপের সম্পত্তি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেখবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে। আপনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হয়ে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন তখন এ বিষয়ে আমরা কথা বলতে বাধ্য হই। আমি আপনাকে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই—বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে তা নির্ধারণ করবে সাধারণ শিক্ষার্থী, রাষ্ট্র ও সরকার। আপনি নির্ধারণ করার কেউ নন। ৫ই আগস্টের পরবর্তী সময়ে এ ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আমরা কখনোই মেনে নেব না।' এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুধু পড়াশোনার জন্য না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুইটা কাজ। এটাতো কিন্ডারগার্টেন না, শুধু পড়া নয়। তাদের গবেষণার সময় দিতে হয়। সেজন্য সারা পৃথিবীর একটা নিয়ম আছে যে, ১৪ থেকে ১৬ জন ছাত্রের জন্য একজন শিক্ষক থাকতে হয়। কিন্তু, সেখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৮ -৩৯ জন ছাত্রের একটা শিক্ষক। শুরু থেকেই অনেক শিক্ষক কম। যে যাই বলুক, যোগ্যতা ছাড়া আর অন্য কোনো মাপকাঠিতে আমি নিয়োগের পক্ষে না।' তিনি আরও বলেন, 'সব দল আমার বিপক্ষে, সবাই সমালোচনা করে। আমি যেগুলো নিয়ে দিয়েছি প্রত্যেকটা নিয়োগ প্রশ্ন করেছি এখানে, সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার জন্য পরীক্ষার আগের রাতে টেলিফোন করে বোর্ড মেম্বারদের প্রশ্ন তৈরি করতে বলেছি। এখানে কোন রকম অনিয়ম করেনি। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। শিক্ষার্থীরা গিয়েছিল ইউজিসিতে। ইউজিসির একটা বছর তালবাহানা করে দেয়নি। আমরা নিয়োগ শুরু করেছি। এখানে কিছু অশুভ চক্রান্ত চলছে কীভাবে নিয়োগ বন্ধ করা যায়। ইনশাল্লাহ আমরা আল্লাহর রহমতে ডিসেম্বরের শুরু থেকে ২৪শে ডিসেম্বরের ভিতরে নিয়োগ প্রক্রিয়াটা শেষ করব।' উল্লেখ্য, সম্প্রতি কুমিল্লা-৬ আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আর্থিক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়ম তদন্ত ও প্রতিকার প্রসঙ্গ তুলে নিয়োগ বন্ধ রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠান। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
