হুমকি দেওয়া সেই চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১৩ জনের আবেদন
মীর আলেয়া পারভীন, ঘাটাইল
প্রকাশ: Monday, 14 October, 2024, 4:06 PM
দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় ঘাটাইলের সাংবাদিককে হুমকি, সরকারি কর্মকর্তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল এবং উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মানববন্ধন করায় সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুল্লাহ্ এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে ইউএনওর মাধ্যমে টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালকের কাছে ১৯ সেপ্টেম্বর লিখিত আবেদন করেছেন উপজেলার ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান।
ঘাটাইল উপজেলায় ১৪ টি ইউনিয়ন রয়েছে ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনই সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয় সাগরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুল্লাহ্ সরকারি কর্মকর্তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে তিনি হুমকি দিয়েছেন। এই দুই ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ ও থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের তদন্ত করে উপজেলা প্রশাসন। এতে চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ্ ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর ইউএনও, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও উপজেলার কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে তার বাহামভুক্ত কতিপয় কিছু লোক নিয়ে নিজ এলাকা সাগরদিঘীতে মানববন্ধন করেন। লিখিত আবেদনে ১৩ জন চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন যাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে হাবিবুল্লাহ্ মানববন্ধন করেছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় সাগরদিঘী ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ স্থানীয় সরকারের সকল সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ্ এর কর্মকান্ডে উপজেলার সামগ্রীক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তার এ ধরনের কর্মকান্ডে উপজেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। লিখিত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে আনেহলা ইউপি চেয়াারম্যান তালুকদার মোঃ শাহজাহান ও ঘাটাইল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হিরা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সাগরদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে আমরা ১৩ জন চেয়ারম্যান আবেদন করেছি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাযায় উপজেলার যে কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেছেন তিনি ঘাটাইল বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ওয়াদুদুর রহমান। তার করা থানায় সাধারণ ডায়েরী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মর্তার কাছে করা লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই বন বিভাগের সাগরদিঘী বিট অফিসে প্রকাশ্য নিলামের কাজ করছিলেন ওয়াদুদুর রহমান। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সাগরদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুল্লাহ্ তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অর্তকিতভাবে সাগরদিঘী বিট অফিসে হামলা করেন, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে প্রাণনাশের হুমকি দেন। কারণ হিসেবে রেঞ্জ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন ওই বিট অফিসের প্রাঙ্গনে থাকা সেগুন গাছ চেয়ারম্যান কেটে নিতে চাইলে তিনি নিষেধ করেন। চেয়ারম্যান কর্তৃক বিট অফিসে হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই সময় ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে দেখা এবং শোনা যায় চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুল্লাহ্ রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল এবং হুমকি দিচ্ছেন।
অপরদিকে সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দের নয়-ছয় করায় গত ১৪ জুলাই ‘আড়াই হাজার টাকার সিসিটিভি ক্যামেরা ৩২ হাজারে ক্রয়’ এবং ১ সেপ্টেম্বর ‘চেয়ারম্যানের দুর্নীতির দোকান’ শিরোনামে সমকালে দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই সংবাদের জেরে দৈনিক সমকালের ঘাটাইল প্রতিনিধি ও ঘাটাইল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুম মিয়াকে বেঁধে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ্। হুমকির এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ঘাটাইল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন মাসুম মিয়া। চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়ে ০৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে জানতে সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুল্লাহ্ ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কিশোর কুমার দাস জানান বন কর্মকর্তা ও সাংবাদিককে সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক হুমকির বিষয়টি আমি অবগত। বন কর্মকর্তাকে হুমকির বিষয়ে তৎকালিন ইউএনও চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন তারপর কি হয়েছে তা তার জানা নেই বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মোঃ শিহাব রায়হান বলেন, সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যানের সই করা কোনো চিঠি আমি পাইনি।