আদানির বিদেশি যোগসূত্রের অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থা
নতুন সময় ডেস্ক
|
ভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আদানি গ্রুপে বিদেশি কোনো লিঙ্ক বা যোগসূত্র থাকার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ আদানি গ্রুপে বিদেশি বিনিয়োগে নিয়ম লঙ্ঘন নিয়ে যে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল সেটি তদন্ত করতে গিয়ে প্রমাণ করার মতো কিছু পায়নি তদন্তকারীরা। সেজন্য এরকম অভিযোগ তদন্ত করাকে ‘গন্তব্যবিহীন যাত্রা’বলে উল্লেখ করেছে আদালতের নিযুক্ত একটি প্যানেল। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এই প্যানেল গঠন করেছিল। চলতি বছরের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে ভারতের শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে ব্যাপক পতন ঘটে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো তখন ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি বাজারমূল্য হারায়। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি করার অভিযোগ তোলে। তবে আদানি গ্রুপ হিন্ডেনবার্গের তোলা কারসাজির অভিযোগ নাকচ করে দেয়। এ নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। তখন বিরোধিদলগুলো আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে সংসদীয় তদন্ত দাবি করে। এক পর্যায়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বাজারনিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে (সেবি) কিছু অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং আদালতের গঠিত ছয় সদস্যের প্যানেলের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলে। মার্চ মাসে গঠিত ওই প্যানেলে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকসহ অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের রাখা হয়। আদালতের গঠিত প্যানেল এক প্রতিবেদনে বলেছে, সেবির সন্দেহের ভিত্তি হচ্ছে আদানি গ্রুপে বিদেশি সংস্থাগুলোর মালিকানা সংক্রান্ত। সে অনুযায়ী তদন্ত পরিচালিত হয়েছে। তদন্তের লক্ষ্য ছিল, আদানি গ্রুপে একটি ‘অস্বচ্ছ’ কাঠামো রয়েছে। প্যানেল গত ৬ মে প্রতিবেদনটি পেশ করে, যা বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার দেখেছে৷ প্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘আদানি গ্রুপে ১৩টির বেশি বিদেশি কোম্পানির মালিকানা থাকার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আদালতের গঠিত প্যানেলের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ নিয়ে সেবি বিভিন্ন দেশে তদন্ত করেছে। তদন্তর সময় বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে তারা। তা সত্ত্বেও সেবি তদন্তে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আদানি গ্রুপে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কে বিনিয়োগ করেছে তা প্রমাণের চেষ্টা করা একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রতিবেদন মতে, এটা স্পষ্ট যে এই ধরনের তদন্ত একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ হতে পারে, কিন্তু সম্ভাবনা বা কার্যকারিতার দিক থেকে এটি একটি গন্তব্যহীন যাত্রাই বৈকি। কারণ চূড়ান্তভাবে উপকৃত মালিককে তো খুঁজে বের করা একটি বিশাল কাজই বটে। আদালত ঘটনা তদন্তে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে (সেবি) অতিরিক্ত সময় দিয়েছে। গত বুধবার আদালত তদন্তের জন্য আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বাড়তি সময় মঞ্জুর করেছে। সে অনুযায়ী আদানি গোষ্ঠী সিকিউরিটিজ আইন এবং তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে কিনা সেই তদন্ত সেবিকে অতিরিক্ত এই সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে হবে। আদালত প্রথমে ২ মে'র মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন। রাইট রিসার্চ নামক গবেষণা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সোনম শ্রীবাস্তব বলেছেন, “আদালতের গঠিত প্যানেল প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে বটে। তবে চলমান অনিশ্চয়তা এবং বর্ধিত সময়ে সেবির তদন্ত থেকে আরও কোনো কিছু উদ্ঘাটনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে বাজারে আদানি গ্রুপের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়তে পারে।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |