রাজনৈতিক রোষানলে ৪৭ দিন গুম ছিলাম: রিয়াজুল ইসলাম
শামীম শেখ
|
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে দীর্ঘ ৪৭ দিন গুম ছিলাম। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (২) রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ দৈনিক নতুন সময়কে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। পাঠকের উদ্দেশে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। নতুন সময়: রাজনীতিতে বর্তমান আপনার অবস্থান কী, কীভাবে আসলেন এ অবস্থানে? রিয়াজুল ইসলাম: বর্তমানে আমি সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক(২) দায়িত্বে আছি। আমি ২০০৯ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করি । ২০১১ সাল থেকে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাথে আছি। পরবর্তীতে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে ছিলাম। নতুন সময়: সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনার পরিকল্পনা কী? রিয়াজুল ইসলাম: শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি স্লোগান নিয়ে ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা হয়। আমি যেহেতু একটি ইউনিটে রাজনীতি করি সে ক্ষেত্রে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যেভাবে পছন্দ করে এবং সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের মনোভাবকে কেন্দ্র করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। নতুন সময়: বিগত সরকারের আমলে আপনি কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন? রিয়াজুল ইসলাম: বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ২০১৫ সালের ৫ মার্চ আমি র্যাব কর্তৃক গুম হই। দীর্ঘ একমাস ১৭ দিন গুম থাকার পরে আমাকে সূত্রাপুর থানায় হস্তান্তর করা হয় বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্যাদি দিয়ে। তারপর দীর্ঘ দেড় বছর কারাবন্দি থাকার পর জামিনে মুক্ত হই। আমার পরিবার মনে করেছিল আমি স্বৈরাচারী সরকারের বাহিনীর কর্তৃক গুম হয়েছি। ওই সময় এমন একটা পরিস্থিতি ছিল অনেকেই গুম হয়েছে আর ফিরে আসেনি। আমার পরিবারের লোকজন থানায় গিয়ে একটা সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত করতে পারেনি। ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ম্যাডাম খালেদা জিয়ার হাজিরা ছিল। ওই সময় ম্যাডামের গাড়ি বহর থেকে হাইকোর্ট এলাকায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় সাড়ে চার মাস পর জামিনে বের হই। ২০১৮ সালের শেষ দিকে ঐক্যফ্রন্টের জাতীয় প্রোগ্রাম থেকে ফেরার পথে রমনা এলাকায় গ্রেফতার করা হয় তখন আড়াই মাস কারাবন্দি ছিলাম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর মহাসমাবেশের পূর্বে ৭ অক্টোবর যে গণগ্রেপ্তার করা হয় ঐ সময় আমাকেও গ্রেফতার করে তখন দুমাস কারাবন্দি ছিলাম। ২০২৩ সালে ৪ ডিসেম্বর পার্টি অফিসের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং ঐ সময়ে দুই মাস কারাবন্দি ছিলাম। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পাঁচ বার গ্রেপ্তার হই, আমার নামে ১১ টি মামলা রয়েছে সর্বমোট প্রায় আড়াই বছর কারাবন্দী ছিলাম। নতুন সময়: রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নির্বাচনের দাবি উঠেছে, অন্তর্র্বতী সরকারকে কী সময় দেয়া উচিত? রিয়াজুল ইসলাম: অন্তবর্তী সরকারকে অবশ্যই সময় দেয়া উচিত। সবেমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। বিগত ১৫ বছর যাবত সকল সেক্টর ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে ছিল। সে ক্ষেত্রে পুরোপুরি সংস্কার করে তারপরে নির্বাচন দেয়া উচিত তবে সংস্কার কাজটা অতি দ্রুতই করা উচিত বলে আমি মনে করি। নতুন সময়: গত ৫ ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশব্যাপী যে সহিংসতা হয়েছে এর পিছনে কি কারণ আছে বলে আপনি মনে করেন? রিয়াজুল ইসলাম: ফ্যাসিস্ট সরকারের যে গুন্ডা বাহিনী ছিল তাদের প্রধান তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার দোসরেরা বাংলার মাটিতে রয়ে গেছে। তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা করেছে, এই দায়ভার যাতে জাতীয়তাবাদী দলের উপর আসে। আর যদি প্রশাসনের কথা বলি ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে যুক্ত ছিল তাই তারা নীরব ছিল। নতুন সময়: ছাত্র-জনতার উদ্দেশে কিছু বলুন। রিয়াজুল ইসলাম: আমি ছাত্র জনতাকে শ্রদ্ধা জানাই তাদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। যেভাবে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছি সেভাবে আমরা দেশটাকে গড়তে চাই আমাদের হিংসাত্মক রাজনীতি ও মনোভাব দূর করতে হবে এ প্রত্যাশাই থাকবে। নতুন সময়: ধন্যবাদ আপনাকে। রিয়াজুল ইসলাম: নতুন সময়কেও ধন্যবাদ।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |