|
অ্যাপল গ্যাজেট অবৈধ পথে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনছে স্মার্টফোন, পাচার হচ্ছে ডলার!
সাজেদুর রহমান
|
![]() অ্যাপল গ্যাজেট অবৈধ পথে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনছে স্মার্টফোন, পাচার হচ্ছে ডলার! শুল্ক আইন অনুযায়ী, প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ব্যক্তিগত ব্যবহার্য পণ্য আনতে পারেন। তবে এ সুবিধাকে অপব্যবহার করে গড়ে উঠেছে বড় ধরনের পাচার সিন্ডিকেট। তারা প্রবাসীদের ব্যাগেজে শত শত স্মার্টফোন এনে অবৈধভাবে বাজারজাত করছে। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে এবং বাজারে আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেটের দাপট বাড়ছে। কেবল শুল্ক ফাঁকি নয়, একই সঙ্গে ঘটছে ডলার পাচার। বিদেশ থেকে আনা এসব স্মার্টফোন নগদ টাকায় বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে বিদেশে পাচার করছে চক্রটি। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ধরণের ডলার পাচার দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। দেশের অনুমোদিত আমদানিকারকরা বলছেন, বৈধভাবে স্মার্টফোন আনতে গিয়ে যেখানে শুল্ক ও ভ্যাট দিতে হয়, সেখানে অবৈধ চক্র কোনো ধরনের সরকারি রাজস্ব না দিয়েই ফোন বাজারজাত করছে। ফলে বাজারে মূল্য প্রতিযোগিতায় বৈধ আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভোক্তারাও অজান্তে ওয়ারেন্টিবিহীন হ্যান্ডসেট কিনে পরবর্তীতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লাগেজ পার্টির মাধ্যমে স্মার্টফোন পাচার বন্ধ করা না গেলে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি অর্থনীতি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে কাস্টমসের নজরদারি আরও জোরদার করা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাগেজ স্ক্যানিং প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় ব্যাগেজ সুবিধা কাজে লাগিয়ে সীমিত কিছু পণ্য আনতে পারেন। কিন্তু সেই সুযোগকে হাতিয়ার বানিয়ে চক্রগুলো গড়ে তুলেছে এক বিশাল ব্যবসা। লাগেজ পার্টির মাধ্যমে হাজার হাজার স্মার্টফোন ও অন্যান্য ডিভাইস ঢুকছে বাজারে। এতে সরকার যে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে তা তো বটেই, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার পাচারের ভয়াবহ বাস্তবতা। অ্যাপল গ্যাজেট কৌশলে বিদেশ থেকে আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট দেশে এনে নগদ টাকায় বিক্রি করে এর বিপরীতে হুন্ডি বা অন্যান্য অবৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো হয় বিদেশে। একদিকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে তৈরি হচ্ছে চাপ। বাজারের উপর প্রভাবও কম নয়। বৈধ আমদানিকারকরা নিয়ম মেনে শুল্ক-ভ্যাট দিয়ে ফোন আনে। ফলে তাদের খরচ বেড়ে যায়। অথচ চক্রগুলো শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ফোন এনে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করছে। এতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাধারণ ক্রেতারাও সমস্যায় পড়ছেন, কারণ আনঅফিসিয়াল ফোনে ওয়ারেন্টি নেই, নেটওয়ার্কে সমস্যা হয়, সার্ভিসিং সুবিধাও মেলে না। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (MIOB) প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া শাহিদ বলেন, অবৈধ পথে বিপুল সংখ্যক স্মার্টফোন দেশে প্রবেশ করায় দেশীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্প মারাত্মক চাপে পড়েছে। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া এসব ফোন বাজারে তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তায় বিক্রি হচ্ছে, ফলে বৈধ আমদানিকারক ও স্থানীয় প্রস্তুতকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে নিয়েছে এই অবৈধ ফোন, যা দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি কমিয়ে দিচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, অবৈধভাবে আসা ব্র্যান্ডগুলোর বেশিরভাগই নিম্নমানের—যার মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ডের কপি, নকল পণ্য ও রিফারবিশড ফোন। এসব নিম্নমানের ডিভাইস থেকে নির্গত রেডিয়েশনও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি, যা ভোক্তারা বুঝতে পারছেন না। এর ফলে শুধু সরকারের রাজস্ব ক্ষতিই হচ্ছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশের প্রযুক্তি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, বিটিআরসি এবং এনবিআর এর দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণেই মূলত বেড়েছে অবৈধ হ্যান্ডসেটের আমদানি। পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনের পণ্য এর দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণ। অবৈধ হ্যান্ডসেটের বিষয়ে কথা বলতে অ্যাপল গেজেট মোবাইল শপের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি, তবে তাদের মোবাইল শপের দুইজন কর্মী মামুন ও রাকিনের সাথে একাধিকবার কথা বলে এক মাসেও তাদের কাছ থেকে কোনো মনত্ব পাওয়া যায়নি।
|
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
