|
এস আলম গ্রুপের লুকানো ঋণ প্রকাশ
ইউনিয়ন ব্যাংক ব্যালান্স শিটে কারচুপি, ৪৫০ কোটি টাকার গরমিল
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() ইউনিয়ন ব্যাংক ব্যালান্স শিটে কারচুপি, ৪৫০ কোটি টাকার গরমিল ধারাবাহিকভাবে চারটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা ইউনিয়ন ব্যাংক সংশোধিত আর্থিক বিবরণী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশ করেছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির জানান, আগের ম্যানেজমেন্ট প্রকৃত আর্থিক অবস্থা যথাযথভাবে প্রদান করেনি, ফলে পূর্ববর্তী নিরীক্ষক এম এম রহমান অ্যান্ড কোং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। অডিটররা পরে পুনর্নিরীক্ষার প্রস্তাব দেন এবং ব্যাংক সেই অনুযায়ী প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রকাশ করে। সংশোধিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) নেগেটিভ ২.৮ টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে আগে তা পজিটিভ ১.৫৮ টাকা দেখানো হয়েছিল। ডিএসইতে শেয়ারের দাম কমে ১ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। আগের সিস্টেমে গণঅভ্যুত্থানের প্রভাবের কারণে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত না হওয়ায় নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০২৪ সালের জুনে ১,০০০ কোটি টাকা থেকে মাত্র ছয় মাসে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পায়। খেলাপির হার ৩.৮২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৭ শতাংশে পৌঁছায়। এর ফলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াও সম্ভব হয়নি এবং ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ২০২২ সালে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক সম্পূর্ণভাবে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যার শেয়ার ছিল ২৬.১৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২৮,৫৩৩ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ২০,৬৩৪ কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের, যা মোট ঋণের ৭২ শতাংশ। গোষ্ঠীটি ২৪টি নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি এবং আরও ২৫৯টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ঋণ নিয়েছিল, তবে খুব সামান্যই ফেরত দিয়েছে। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক প্রভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক প্রায় এক দশক ধরে মন্দ ঋণ লুকিয়ে রেখেছিল। এর ফলে কৃত্রিমভাবে কম খেলাপি হার দেখিয়ে আর্থিকভাবে সুস্থ অবস্থার ভুয়া চিত্র তৈরি করা হয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর এসব গোপন সত্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটে দেখা যায়, পূর্বনিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও ২০২৩ সালের প্রকৃত ২,২৫৯ কোটি টাকার লোকসান গোপন রেখে ১২৮ কোটি টাকার মুনাফার মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছে। অডিটের পর ব্যাংকটির ঘোষিত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট অডিট সংস্থা সতর্কতা অবলম্বন করছে। ইউনিয়ন ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এবং এস আলম গ্রুপের লুকানো ঋণ এখন নজরদারির মূল বিষয়। ব্যাংকের পুনর্গঠন ও একীভূতকরণ প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা এ ঘটনায় আরও স্পষ্ট হয়েছে।
|
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
