ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৯ কার্তিক ১৪৩২
জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে নির্বাচনে সহায়তা বন্ধের আহ্বান আওয়ামী লীগের
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Tuesday, 4 November, 2025, 9:30 PM

জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে নির্বাচনে সহায়তা বন্ধের আহ্বান আওয়ামী লীগের

জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে নির্বাচনে সহায়তা বন্ধের আহ্বান আওয়ামী লীগের

বাংলাদেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যাদের ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।

শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বরাবর পাঠানো চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়। দলের পক্ষে চিঠিটি পাঠিয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

সেখানে বলা হয়, “অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা জাতিসংঘ এবং ইউএনডিপির প্রতি নির্বাচনি সহযোগিতা স্থগিতের, সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করার এবং যে কোনো নির্বাচনি সম্পৃক্ততার মূলভিত্তি হিসাবে মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”

‘বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনি সহযোগিতা এবং জাতিসংঘ সনদের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এবং মৌলিক অধিকারের মূলনীতি লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনি সহযোগিতা, ব্যালট প্রজেক্ট এবং আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার বিষয়ে আমরা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলকও নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়।

“এই ধরনের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের মূলনীতি এবং অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসারের ক্ষেত্রে ইউএনডিপির ম্যান্ডেট লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে।”

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচনের পরিবেশের দাবি নিয়ে জাতিসংঘে উদ্বেগ জানানো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার অভিযোগ রয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে সেই ব্যবস্থাই বাতিল করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।

সে অনুযায়ী ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়।

এর মধ্যে দশম ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দল।

তাদের বর্জনের ফলে দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দেয় ভোট বর্জন করা বিএনপি।

বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নীশিরাতের নির্বাচন’।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।

প্রশ্নবিদ্ধ ওই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।

গতবছর ডিসেম্বরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক বাতিল করে রায় দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পথ তৈরি হয়।

অবাধ ও নিরপেক্ষতা ‘নিশ্চিত করতে না পারায়’ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিন জাতীয় নির্বাচনে ‘জনগণের আস্থা ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয় ওই রায়ে।

‘জনগণের ভোট ছাড়া’ ওই নির্বাচনগুলো আয়োজনের অভিযোগে গত জুন মাসে একটি মামলাও করেছে বিএনপি। ওই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কমিশনের সব পদাধিকারীর পাশাপাশি ক্ষমতচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে সেখানে।

জাতিসংঘকে পাঠানো চিঠিতে আওয়ামী লীগ বলছে, “শক্তিশালী নির্বাচনি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে আমরা স্বীকার করি। তবে, এই সহযোগিতা অন্তর্ভুক্তি এবং মৌলিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

“বর্তমানে বাংলাদেশে নিবর্তনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী এবং নাগরিক আটক কিংবা হুমকির মুখে এবং কোনো রাজনৈতিক সংলাপ বা ঐকমত্যের সুযোগ ভেঙে পড়েছে। এখানে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উত্থান হয়েছে, যেটাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে প্রচার করছেন। দেশের উদার মূল্যবোধ ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে গেছে।”

আওয়ামী লীগ বলছে, “আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ইউএনডিপির ভূমিকা জরুরিভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাই, যাতে তাদের এই সমর্থন কাউকে বাদ দেওয়া বা নির্যাতনের কারণ না হয়।

“বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সত্যিকারের সংলাপ, সমঝোতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের পুনঃস্থাপন দরকার, যার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণও রয়েছে।”

জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে গত মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

এরপর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে, ছয় মেয়াদে দুই যুগের বেশি সময় সরকারে থাকা দেশের অন্যতম প্রাচীন এ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিরোধীদের দাবির মুখে আওয়ামী লীগ ‘দল নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণের’ কথা বলত। একই রকমের কথা এবার বলেছেন ঢাকায় জাতিসংঘের সদ্য বিদায়ী আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস।

আওয়ামী লীগ না থাকলেও জনগণের অংশগ্রহণ ‘সঠিকভাবে’ হলে আগামী নির্বাচন ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

গত জুনে ঢাকায় ডিপ্লোম্যাটিক করেসপেন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে গোয়েন লুইসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ না থাকা অবস্থায় নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি না।

উত্তরে তিনি বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে হচ্ছে, সমাজের প্রত্যেক অংশই যেন ভোট দিতে পারে––নারী, ১৮ বছর বয়সী, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়––‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বলতে আমরা এটাই বোঝাই। তবে প্রত্যেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবেশাধিকার ও সক্ষমতা যেন থাকে।”

তখন এক সাংবাদিক জানতে চান, “তার মানে এটা কোনো রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়?”

উত্তর জাতিসংঘের তখনকার আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, “না।”

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনো মন্তব্য করছি না। আমি বোঝাতে চাইছি, জাতিসংঘ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয়। এই প্রশ্ন করতে হবে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে।”

আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠির বিষয়ে মন্তব্য জানতে ঢাকায় ইউএনডিপির প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এবং সংস্থার মুখপাত্র বরাবর রোববার ইমেইল পাঠিয়েছে গণমাধ্যমকে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের জবাব পাওয়া যায়নি।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status