| 
			
							
			
			 ঢাকায় বিষধর গোখরার দেখা মিলছে কেন? 
			
			নতুন সময় প্রতিবেদক 
			
			
			 | 
		
			
			![]() ঢাকায় বিষধর গোখরার দেখা মিলছে কেন? বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের গত কয়েক মাসে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। গত চার মাসে ঢাকার বিভিন্ন জনবহুল এলাকা থেকে তিনশো'র বেশি বিষধর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। মানুষের বাসার ভেতরে, গ্যারেজে এমনকি বহুতল ভবনের নয়তলায়ও সাপ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পদ্মগোখরা, রাসেল ভাইপার, খৈয়া গোখরা, রাজ কেউটের মতো বিষধর সাপও রয়েছে। বাংলাদেশে বর্ষাকালে সাধারণত সাপ বেশি দেখা যায়। কারণ সাপ আবাসস্থল হিসেবে যেসব গর্ত তৈরি করে তাতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়লে সে আশ্রয়ের জন্য শুকনো স্থানের সন্ধানে উঁচু স্থান ও মানুষের বসতি বা ঘরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় এ ধরণের বিষধর সাপ পাওয়ায় গবেষকদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, আবার কোনো কোনো গবেষক বিষয়টি স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান বিষয়টি 'আনইউজুয়াল এবং চিন্তার' বলে উল্লেখ করেছেন। মি. আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, " এটা আনইউজুয়ালতো বটেই। সাপ থাকতে পারে ঢাকা শহরে যদি ঝোপঝাড় থাকে। কিন্তু এতো সাপ কি করে হলো এটাতো চিন্তার বিষয়।" এর আগেও ঢাকায় কিছুসংখ্যক বিষধর সাপ পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম এতো বেশিসংখ্যক সাপের খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ এসোসিয়েট মো. মিজানুর রহমান অবশ্য মনে করেন, জলাশয় ও খালবিল ভরাট করে মানুষ বাসস্থান তৈরি করায় সাপের বাসস্থান সংকট তৈরি হয়েছে। তাই সাপ মানুষের বাসায় ঢুকে পড়ছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব সাপগুলো উদ্ধার করছে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংস্থা। এই সংস্থার আহ্বায়ক আদনান আজাদ জানিয়েছেন, গত চার মাসে ৩৫১ টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি নির্বিষ সাপ এবং বাকিগুলো বিষধর সাপ। যদিও বন বিভাগের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহ আস সাদিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকায় সাপের এতো উপদ্রবের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এমনকি এই উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে সংগঠনটি কোনো অনুমতি নেয়নি বলেও জানান মি. সাদিক। কোন কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি সাপ পাওয়া গেছে? ঢাকার বনশ্রী, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, বসিলা, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর, খিলগাঁও, কচুক্ষেত, মিরপুর-২, নিকেতন, উত্তরার উত্তরখান, দক্ষিণখান থেকে এখন পর্যন্ত বিষধর সাপগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাপ পাওয়া গেছে উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউকের ফ্ল্যাট প্রকল্প এলাকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বনশ্রী এলাকা। এর মধ্যে নতুন করে খিলগাঁও-এ গত এক সপ্তাহ ধরে সাপ বেশি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, " উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজউকের যে ফ্ল্যাট ওখানে সবচেয়ে বেশি সাপ পেয়েছি। সাততলা, নয়তলা থেকে সাপ উদ্ধার করেছি। এখানকার ১১টা বিল্ডিং থেকে সাপ উদ্ধার করেছি।" এতো উঁচু ভবনে কিভাবে সাপ গেলো এমন প্রশ্নে মি. আজাদ ধারণা করেন, যেসব ভবনের উপরের ফ্ল্যাটে সাপ পাওয়া গেছে সেগুলোর প্রতিটি ভবনের গেইটের সাথে বাগান বিলাসের মতো লতানো গাছ রয়েছে, সেই গাছগুলো বেয়ে উপরে ওঠার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকেই হয়তো সাপ বেয়ে উঁচু ভবনে উঠেছে। যেসব বিষধর সাপ পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে পদ্মগোখরা সাপই সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বলে জানান মি. আজাদ। ৩৫১টি সাপের মধ্যে প্রায় দুইশ সাপই পদ্মগোখরা বলে জানান তিনি। গত দুই দিনে খিলগাঁও-এর কয়েকটি বাসা থেকে আটত্রিশটি পদ্মগোখরা সাপ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মি. আজাদ। এগুলোর মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী (মা) পদ্মগোখরা যেমন রয়েছে তেমনি বাচ্চা সাপও রয়েছে। মি. আজাদ জানান, " গত পরশু খিলগাঁওয়ের এক বাসায় তিনটা রুমের পুরা ফ্লোর ভেঙে মা সাপটা পেয়েছি। একই বাসা থেকে দুইটা বড় সাপ ও সাতটা বাচ্চা এবং আঠারটা পদ্মগোখরার ডিম উদ্ধার করেছি। গতকালকেও এক বাসা থেকে ১৮ টা পদ্মগোখরার বাচ্চা পেয়েছি।" গতকালকে যাদের বাসা থেকে সাপ উদ্ধার করা হয়েছে তারা আজ আবার বড় ও বাচ্চা সাপ দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছে মি. আজাদকে। সেখানে আবার সাপ উদ্ধারে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান জানান, " পদ্মগোখরা সাপ মূলত পানিপ্রেমী। নদী, জলাশয়, খাল-বিলে থাকতে পছন্দ করে। তবে, পানির নিকটস্থ ঝোপঝাড় ও গর্তেও এই সাপের দেখা মেলে। " এই সময়ে ঢাকায় কেন এতো বিপুল সংখ্যক সাপ পাওয়া যাচ্ছে? গত চার মাসে ঢাকায় পাওয়া সাড়ে তিনশ সাপের সংখ্যা নিয়ে স্থানীয় অনেকের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও সাপের কামড়ের ঘটনা তেমন দেখা যায়নি। তবে কেন হঠাৎ করে এতো বিপুল সংখ্যক বিষধর সাপের দেখা মিলছে এমন প্রশ্নে চট্টগ্রামের মেডিকেল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ এসোসিয়েট মো. মিজানুর রহমান জানান, মানুষ সাপের আবাসস্থল ধ্বংস করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। " কোন কোন এলাকায় সাপগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। যেসব এলাকায় পাওয়া গেছে তার প্রতিটি জায়গায় জলাশয়, খাল-বিল ভরাট করে মানুষ বাসস্থান গড়ে তুলেছে। সাপ তার নিজের জায়গায়ই আছে কিন্তু আমরা তার জায়গায় চলে গেছি " বলেন মি. রহমান। তার মতে, এতো সাপের দেখা মিলছে বিষয়টি স্বাভাবিক। কারণ আগে বাংলাদেশে সাপ উদ্ধারকারী এরকম সংগঠন কম ছিলো। মানুষ সাপ দেখলেই মেরে ফেলতো। কিন্তু এখন সাপ উদ্ধারের অনেক সংগঠন গড়ে উঠেছে। ফলে 'সাপের ঘটনা লাইমলাইটে' আসার এটাই বড় কারণ বলে মনে করেন এই গবেষক। আবার যেসব মাসগুলোতে এসব সাপের দেখা মিলছে তখন তাদের প্রজননকাল। তাই যেখানেই সাপ উদ্ধার করা হচ্ছে সেখানে প্রচুর বাচ্চা এবং সাপের ডিমও পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মি. আজাদ জানান, এমনও হতে পারে নভেম্বর মাস জুড়ে আরো বেশি সাপ পাওয়া যাবে। কারণ অক্টোবর ও নভেম্বর পদ্মগোখরার প্রজননকাল। " সাপের সংখ্যা বেড়ে গেছে কারণ অগাস্ট মাসে খৈয়া গোখরার প্রজননকাল। ওই মাসে এক বাসা থেকেই মা গোখরাসহ ২৭টা বাচ্চা, ২৮টা সাপ উদ্ধার করছি " বলেন মি. আজাদ। মানুষ বাসস্থানের কারণে জলাশয়, খাল-বিল, গর্ত ভরাট করায় সাপের বাসস্থান সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, " পাঁচ-ছয় বছর বা সাত বছর আগেও উত্তরার দিয়াবাড়িতে কোনো আবাসিক ভবন ছিল না, জলাশয় ছিলো। আফতাব নগরেরও একই অবস্থা। এই জলাশয়েই সাপের বাসস্থান ছিল। মানুষ নিজের আবাসনের জন্য এখানে বাসস্থান করেছে।" " ফলে সাপগুলো কোথায় গেছে? সাপের থাকার জায়গা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে গেছে। ফলে সে পেছনের যেসব প্লট যেখানে ভবন তৈরি হয়নি সেখানে চলে গেছে। ওই এলাকার গর্তে সে আবাস গড়েছে " বলেন মি. আজাদ। ফলে যখন টানা তিন-চারদিন প্রবল বৃষ্টি হয় তখন পানিতে গর্তগুলো পূর্ণ হয়ে গেলে সাপ বের হয়ে শুকনো স্থানের খোঁজে মানুষের বাসা-বাড়িতে চলে আসে বলে উল্লেখ করেন মি. আজাদ। এ কারণেই এ সময় সাপের দেখা বেশি মিলছে। সাপ উদ্ধারের পর সেগুলো কি করা হয়? বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন ২০১২ অনুযায়ী, বন্যপ্রাণী ধরা ও মারা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ। ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের গবেষক মি. রহমান জানান, আইনানুযায়ী বন্যপ্রাণী বা সাপ উদ্ধারের পর সেগুলোকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করে দিতে হবে। উদ্ধারকৃত ওই সাপ কোন ব্যক্তির নিজের কাছে রাখার অনুমোদন নেই বলে জানান তিনি। তবে, গবেষণার জন্য সাপ রাখার শুধুমাত্র ভেনোম রিসার্চ সেন্টারেরই এই অনুমোদন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন মি. রহমান। এদিকে ঢাকায় উদ্ধারকৃত সাপগুলো কোথায় রয়েছে এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মি. আজাদ জানান, উদ্ধারকৃত সাপগুলো উদ্ধারের পর লোকালয় থেকে দূরে প্রাকৃতিক কোনো স্থানে অবমুক্ত করা হয়। সাধারণত বনাঞ্চল যেখানে সাপ তার নিজস্ব পরিবেশ খুঁজে পায় এবং মানুষের সংস্পর্শে না আসে এমন স্থানে এসব সাপ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। একইসাথে সাপ উদ্ধারের অভিযান এবং কতগুলো সাপ পাওয়া গেছে সে বিষয়টি তারা বন বিভাগকে অবহিত করেন বলে জানান মি. আজাদ। তবে সব সাপ উদ্ধারের কথা সবসময় জানানো কষ্টকর হয়ে পড়ে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যেসব সাপ পাওয়া গেছে সেগুলো শহরের বাইরের বিভিন্ন বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হয়েছে।  | 
		
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ | 
