| 
			
							
			
			 প্রোটিন পাউডারে উচ্চমাত্রার সিসায় ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বারা, যেভাবে সতর্ক হবেন 
			
			নতুন সময় ডেস্ক 
			
			
			 | 
		
			
			![]() প্রোটিন পাউডারে উচ্চমাত্রার সিসায় ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বারা, যেভাবে সতর্ক হবেন মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কনজিউমার রিপোর্টস নামের একটি সংস্থা। অলাভজনক ওই প্রতিষ্ঠানটি ২৩ ধরনের প্রোটিন পাউডার ও শেকের নমুনা পরীক্ষা করে জানিয়েছে, এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি পণ্যে প্রতিদিনের নিরাপদ গ্রহণমাত্রার চেয়ে বেশি সিসা রয়েছে। কনজিউমার রিপোর্টসের ফুড সেফটি রিসার্চ অ্যান্ড টেস্টিং বিভাগের ম্যানেজার সানা মুজাহিদ বলেন, এই পণ্যগুলো থেকে তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষতির ঝুঁকি নেই, বিশেষ করে যদি এগুলো কোনো সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি গ্রহণ করেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যেহেতু মানুষ অন্যান্য খাবার থেকেও সিসার সংস্পর্শে আসে, তাই এর মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি। যে প্রোটিন সাপ্লিমেন্টগুলোকে কনজিউমার রিপোর্টস ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর প্রত্যেক পরিবেশনে ০.৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা রয়েছে। যা ক্যালিফোর্নিয়ার কঠোর দৈনিক গ্রহণমাত্রার মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্ধারিত। তবে কিছু স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আরও উচ্চমাত্রার সীমা নির্ধারণ করেছে। ২০২২ সাল থেকে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) জানিয়েছে, শিশুদের জন্য দৈনিক ২.২ মাইক্রোগ্রামের বেশি এবং সন্তান ধারণক্ষম নারীদের জন্য ৮.৮ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবুও, সিসা গ্রহণের কোনো মাত্রাকেই সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা যায় না। সিসা অত্যন্ত বিষাক্ত এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে জমতে থাকে। অল্প পরিমাণ সংস্পর্শেও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও এই প্রতিবেদনের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. স্টিফেন লুবি বলেন, এই ফলাফল ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’ হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক ড. পিটার কোহেন সতর্ক করে বলেন, এই প্রতিবেদনটিকে ‘ক্রয় নির্দেশিকা’ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সাপ্লিমেন্টে সিসা এবং অন্যান্য ভারী ধাতু পণ্য তৈরির প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়তে পারে। অথচ স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে আমরা এগুলো গ্রহণ করি। যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য বা ওষুধের মতো সাপ্লিমেন্ট পণ্যগুলোও নিয়মিত কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে যায় না। ড. কোহেন পরামর্শ দেন, মানুষ যেন এমন কোম্পানির তৈরি সাপ্লিমেন্ট বেছে নেয় যারা গুণমান যাচাইকরণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। কনজিউমার রিপোর্টস জানিয়েছে, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে নেইকেড নিউট্রিশন কোম্পানির ভেগান মাস গেইনার (Vegan Mass Gainer) প্রোটিন পাউডারে, প্রতি সার্ভিংয়ে ৭.৭ মাইক্রোগ্রাম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে হুয়েল কোম্পানির ব্ল্যাক এডিশন পাউডারে, ৬. ৩ মাইক্রোগ্রাম। অন্য যেসব পণ্যে নির্ধারিত ০.৫ মাইক্রোগ্রামের সীমা অতিক্রম করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগে প্রতি সার্ভিংয়ে তিন মাইক্রোগ্রামের কম সিসা ছিল। নেইকেড নিউট্রিশনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা জেমস ক্লার্ক এক বিবৃতিতে জানান, প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় তারা একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষা করিয়েছেন, যা নিশ্চিত করেছে যে তাদের কোনো পণ্যের ভারী ধাতুর মাত্রা এফডিএ-এর রেফারেন্স সীমা অতিক্রম করেনি। তিনি আরও বলেন, ভেগান মাস গেইনার ওজন বাড়ানোর জন্য তৈরি। এর সার্ভিং সাইজ অন্যান্য উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন পাউডারের তুলনায় বড়। এ কারণে এতে সিসার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, হুয়েলের পুষ্টিবিষয়ক প্রধান রেবেকা উইলিয়ামস দাবি করেন, তাদের পণ্যে সিসার মাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপত্তা মানের মধ্যেই রয়েছে এবং কোম্পানির সব পণ্যই ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’। পরীক্ষায় পাওয়া সিসার মাত্রা ‘তাৎক্ষণিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করার মতো উচ্চ নয়’ বলে স্বীকার করেছে কনজিউমার রিপোর্টস। তবে তারা এটিও উল্লেখ করেছে, পরীক্ষার ফলাফল সব সার্ভিং বা ব্যাচে একই থাকবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্টিফেন লুবি বলেন, কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ চেইন যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করায় তিনি ‘বিস্মিত ও হতাশ’। উল্লেখ্য, সিসার মতো ভারী ধাতু দূষিত মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানি, কিংবা উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেসহ বিভিন্ন উপায়ে খাদ্য সরবরাহে প্রবেশ করতে পারে। কনজিউমার রিপোর্টস আরও জানায়, উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন সাপ্লিমেন্টগুলোতে দুগ্ধ বা মাংসজাত উৎসের তুলনায় বেশি সিসা পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত করে যে দূষিত ফসলই সমস্যার একটি বড় উৎস হতে পারে। তবে ড. লুবি বলেন, প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে যে মাত্রার সিসা পাওয়া গেছে, তা উৎপাদনের আরও অন্যান্য ধাপেও দূষণ ঘটতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি করছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিটার কোহেন বলেন, একবার সিসা শরীরে প্রবেশ করলে তা হাড়ে জমা হতে পারে এবং খুব ধীরে বের হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শ বিপজ্জনক। এতে স্নায়বিক সমস্যা ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তিনি আরও জানান, শিশুরা সিসা বিষক্রিয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকে। তাদের মধ্যে বিলম্বিত বিকাশ, শেখার অসুবিধা এবং খিঁচুনির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট আনলেডেড নামের গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক জেনা ফোরসাইথ বলেন, এই ফলাফল বিশেষভাবে গর্ভবতী নারীদের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ গর্ভাবস্থায় প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভবতী নারী বা যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের উচ্চ সিসাযুক্ত প্রোটিন পাউডার এড়িয়ে চলা উচিত। আর অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদেরও প্রতিদিন এমন সাপ্লিমেন্ট না খেয়ে বিকল্প উৎস বেছে নেওয়া ভালো। ড. স্টিফেন লুবি বলেন, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার আগে ভোক্তাদের উচিত এর ঝুঁকি বিবেচনা করা। তিনি বলেন, প্রোটিন পাউডার খাওয়া কি উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি ডেকে আনছে? আমাদের ভাবা উচিত। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, দোকান থেকে কেনার বদলে যদি বাড়িতেই প্রোটিন পাউডার বানিয়ে নেওয়া যায়, তা হলে সেটি নিরাপদ হবে। একই ভাবে প্রোটিন শেক বানিয়ে নিন বাড়িতেই। ছাতু, মুগ, কাবলি ছোলা, সয়াবিন, কিনোয়া, নানা রকম বীজে শুধু প্রোটিনই নয়, জিঙ্ক, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজও থাকে। তাই এই সব উপাদানকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কী ভাবে প্রোটিন পাউডার বানাতে পারেন? ডাল, ওটস, বাদাম এবং বীজ ভাল ভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন অথবা শুকনো খোলায় নেড়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, যাতে পুড়ে না যায়। দরকার হলে আলাদা আলাদা করে ভাজুন। ঠান্ডা হলে মিক্সার গ্রাইন্ডারে মিহি গুড়া করে নিন। তারপরে ছাঁকনিতে ছেঁকে নিন। একটি বায়ুরোধক জারে ঢেলে রাখুন। ১ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।  | 
		
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ | 
