|
অধিকারের প্রতিবেদন
১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যা ৪০, গণপিটুনিতে মৃত্যু ১৫৩
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যা ৪০, গণপিটুনিতে মৃত্যু ১৫৩ অধিকার তাদের ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে গত বছর ৯ আগস্ট থেকে এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪ মাসের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত, ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ভারতে বসে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতীয় শাসক গোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এতে দেশে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ৯ আগস্ট থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য অধিকারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ নিয়ে সরব ছিল দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদিলুর রহমান বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাইকোর্টের রায়ে খালাস পান তিনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু বর্তমান আইনে এই কমিশনের কাজ সীমিত, যা এর স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। অথচ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন ও স্বচ্ছ নিয়োগের মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকা এবং এটি বন্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে ঘটছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ৯ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। তবে পরের মাসেই গুলিতে নিহত হয়েছেন চারজন এবং নির্যাতনে মারা গেছেন পাঁচজন। এর পরের তিন মাস, অর্থাৎ অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন একজন করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ এবং ফেব্রুয়ারিতে তিনজনের। মার্চ ও এপ্রিলে একজন করে মারা গেছেন। মে মাসে চার, জুনে তিন, জুলাইয়ে ছয়, আগস্টে তিন ও সেপ্টেম্বরে দুজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১ জন নিহত হয়েছেন, এর তিনটি ঘটনার জন্য পুলিশ, একটি ঘটনার জন্য সেনাসদস্য এবং সাতটি ঘটনার জন্য যৌথ বাহিনীকে দায়ী করেছে অধিকার। অধিকারের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মব সৃষ্টির মাধ্যমে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে, ১৮ জন গণপিটুনিতে মারা গেছেন। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে মারা গেছেন ৪৫ জন। অধিকারের হিসাবে ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে সাত হাজার ৯৭৯টি। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে চলতি বছরের মার্চে, ৯৪৪টি। গত বছরের ৯ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে ৫০০টি। পরের মাসে ৮৬২টি, অক্টোবরে ৪৭৮, নভেম্বরে ২৬৬ ও ডিসেম্বরে ৪৬২টি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৪৮, ফেব্রুয়ারিতে ৬৪৫, এপ্রিলে ৭৯৮, মে মাসে ৪৪৭, জুনে ৫১০, জুলাইয়ে ৫৯৮, আগস্টে ৬৭০ এবং সেপ্টেম্বরে ৩১৫টি। ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হন ২৮১ জন, আহত হয়েছেন সাত হাজার ৬৯৮ জন। সবচেয়ে বেশি নিহত চলতি বছরের মার্চে, ৪৪ জন। অধিকারের পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়কালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ২৪২টি। ১৪ মাসে কারাগারে ৮৮ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৮৭ জন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, একদিকে বিএসএফ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভারতীয় শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশে অবৈধভাবে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে এবং সীমান্ত আরও শক্তিশালী করতে হবে। এই সময়কালে সীমান্তে ৩৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৩৪। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে সংগঠনটি আরও বলেছে, এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে। এতে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর আগের মাসে এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। এসব লাশের পরিচয় জানার অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবরে কারা হেফাজতে ১৩ বন্দির মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল আট। অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন দুজন। নিহতরা বিএনপির কর্মী-সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল। অক্টোবর মাসে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। গণপিটুনিতে মারা গেছেন ১২ জন। সেপ্টেম্বরে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি এবং নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।
|
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
