ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১১ কার্তিক ১৪৩২
যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে সৌদি আরবের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Saturday, 25 October, 2025, 11:02 AM

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে সৌদি আরবের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে সৌদি আরবের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা নিতে চায় সৌদি আরব। দেশটি হামাসকে নিরস্ত্র ও প্রভাবহীন করতে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়ে পুনরায় শক্তিশালী করতে চায়। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে এই পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরব ‘গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগকে সমর্থন করবে।’ এমন একটি বাহিনীতে সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অংশ নিতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

দলিলটিতে বলা হয়, রাজত্বটি ‘গাজা উপত্যকা ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য সৌদি আরবের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন’ করতে চায়। এটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘গাজায় শাসন ব্যবস্থায় হামাসের ভূমিকা প্রান্তিক করা’ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে এমনভাবে সংস্কার করা হবে, যাতে ‘১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের’ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।

সৌদি আরব মনে করে, হামাস ‘শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং বিভাজনকে আরও গভীর করছে’, তাই তাকে প্রান্তিক করা জরুরি। প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাসকে নিরস্ত্র করার কাজটি হবে ‘আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চুক্তির মাধ্যমে ধাপে ধাপে, যা নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে’।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধীরে ধীরে গাজায় প্রশাসনিক দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিলে হামাসের প্রভাব কমবে। এই প্রক্রিয়াকে ‘দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে সংযুক্ত’ করার কথাও উল্লেখ আছে।

দলিলটি জানায়, পুরো উদ্যোগটি মিসর, জর্ডান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা মানাল বিনতে হাসান রাদওয়ান।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালের পর থেকে গাজায় কোনো উপস্থিতি বজায় রাখতে পারেনি। সে সময় হামাসের নির্বাচনী বিজয়কে কেন্দ্র করে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সৌদি আরব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার আনতে চায়—দুর্নীতি মোকাবিলা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে। ‘জাতীয় ঐক্য ও কার্যকর, স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষের সংস্কার মৌলিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত,’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

রাজত্বটি ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাও দেবে, যদিও কত অর্থ প্রদান করা হবে তা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। পাশাপাশি, ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় সংলাপের’ আহ্বান জানানো হয়েছে—যাতে বিভিন্ন গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। সৌদি আরব এই সংলাপকে সহায়তা করতে আঞ্চলিক কর্মশালা ও সম্মেলনের আয়োজন করবে।

তবে হামাসকে এই সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। পুরো প্রতিবেদনে ইসরায়েলের নামও একবারও আসেনি।

কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

প্রতিবেদনটি তারিখিত ২৯ সেপ্টেম্বর—এর আগের দিনই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা বন্ধে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গ্রীষ্মকালে সৌদি আরব ও ফ্রান্স যৌথভাবে গাজার জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করে, যা চলমান গণহত্যা বন্ধ, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ পুনরায় চালুর আহ্বান জানায়।

তবে অক্টোবরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজস্ব যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করেন, যেখানে কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র সহযোগিতা করে। ওই চুক্তিতে সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবের অনেক অংশই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর বন্দি বিনিময় ও আংশিক ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ঘটে। এতে বলা হয়, হামাস নিরস্ত্র হবে—যা হামাস নেতারা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ইসরায়েলি দখল শেষ হয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়।

জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার ও মিসরসহ বিভিন্ন আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনে এসব দেশের সেনা পাঠানোর আহ্বান জানান।

পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মিসরের শারম আল শেখে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এক শীর্ষ বৈঠক ডাকা হয়। তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বৈঠকে অংশ নেননি।

মিসর, সৌদি ও আমিরাতি সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আই-কে জানায়, তাদের অনুপস্থিতির কারণ ছিল—চুক্তিতে প্রত্যাশিত প্রভাব ও ভূমিকা না পাওয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি।

অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকেই গাজার মানবিক ত্রাণ ও পুনর্গঠনের মূল ব্যয় বহন করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

এদিকে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বলেছেন, সৌদি আরব যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়, তবে ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করবে।

তিনি বলেন, ‘যদি সৌদি আরব বলে, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিনিময়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চাই, তাহলে না ধন্যবাদ, বন্ধুরা। তোমরা তোমাদের মরুভূমিতে উট নিয়ে ঘুরো, আমরা আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র আরও উন্নত করব।’

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status