|
ট্রাম্পের বুদ্ধিতে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ থামলে কার ঝুলিতে কী জুটবে?
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() ট্রাম্পের বুদ্ধিতে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ থামলে কার ঝুলিতে কী জুটবে? ট্রাম্পের শান্তি ফিরিয়ে আনার এ আলোচনা এখনও স্থবির হয়েই পড়ে আছে, যদিও গেল বছরের নির্বাচনি প্রচারে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেইন যুদ্ধের ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে, দখলে নেওয়া অঞ্চলগুলো তাদের হাতেই থাকতে হবে; সঙ্গে নতুন কিছু এলাকাও দিতে হবে। এসব দাবি মানার পরেই শান্তিচুক্তি নিয়ে এগোতে চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু ট্রাম্পের বুদ্ধিমতো যদি এখন যুদ্ধের ইতি ঘটে, তাহলে কোন দেশের ঝুলিতে কী থাকবে, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে। ট্রাম্পের প্রস্তাবটা আসলে কী? ট্রাম্পের কথা হলো—যুদ্ধ যেখানে যে অবস্থায় আছে, সেখানেই থেমে যাক। রোববার সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “তারা আলোচনা পরেও করতে পারবে। আমি বলেছি, যুদ্ধ যেখানে আছে, সেখানেই শেষ করে দাও। “আপনি যদি বলতেই থাকেন, ‘তুমি এটা নাও, আমরা ওটা নিই’, তাহলে বাকি আলোচনাটা এগিয়ে নেওয়া কঠিন।” মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আনা-নেওয়া করা উড়োজাহাজ—‘এয়ার ফের্স ওয়ানে’ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে এসব আলোচনা করেন ট্রাম্প। সেখানে ট্রাম্পের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, তিনি ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাশিয়ার দাবি মেনে ডনবাসের উত্তরাঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কিনা? জবাবে ট্রাম্প বলেন, এমন কোনো পরামর্শ তিনি দেননি। তিনি কী বলেছেন, সেটা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “এটা যেখানে আছে, সেখানেই থামিয়ে দেওয়া হোক, এখনই থামিয়ে দেওয়া হোক। আমার মনে হয়, ওই এলাকার ৭৮ শতাংশ এরই মধ্যে রাশিয়ার দখলে চলে গেছে।” তিনি বলেন, “যুদ্ধটা এখন যেভাবে আছে, সেভাবেই থাক। আলোচনাটা পরেও সারা যাবে।” যুদ্ধটা এখন কোথায় আছে, কীভাবে আছে? গত চার বছরের যুদ্ধে ইউক্রেইনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের চারটি প্রদেশের ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে রাশিয়া। এ তালিকায় রয়েছে—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া। খারকিভ প্রদেশের ক্ষুদ্র একটা অংশও রাশিয়ার দখলে রয়েছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে মূলত ডনবাস অঞ্চল, যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লড়াই হয়েছে। লুহানস্কের পুরোটা এবং দোনেৎস্কের অধিকাংশ অঞ্চল এখন রাশিয়ার দখলে। দোনেৎস্কে দখল করা অঞ্চলের মধ্যে স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরের আশপাশের এলাকাও রয়েছে। খেরসন ও জাপোরিঝিয়া প্রদেশে রাশিয়ার দখল ৭৫ শতাংশ এলাকায়। এর মধ্যে জাপোরিঝিয়া প্রদেশটি স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও বিমান তৈরি, সেই সঙ্গে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইউক্রেইন কিংবা তাদের ইউরোপের মিত্ররা কী বলছে? ইউক্রেইন ও ইউরোপ ট্রাম্পের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে। মঙ্গলবার জেলেনস্কি ও ইউরোপের নেতারা একটি বিবৃতিতে সই করেন, যেখানে ট্রাম্পের প্রস্তাবে জোরালো সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “যুদ্ধের বর্তমান রেখা আলোচনা শুরুর সীমানা হতে পারে।” এর আগে রাশিয়ার কাছে দখল হারানো সব ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে জোর দিয়েছিলেন জেলেনস্কি। কিন্তু ইউক্রেইনকে জমি ছাড়তে হবে কি হবে না, তা নিয়ে ওই সময় ট্রাম্পের মধ্যে দ্বিধা দেখা গেছে। গত অগাস্টে আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুদ্ধের ইতি ঘটাতে রাশিয়া ও ইউক্রেইন—দুই দেশকেই কিছু এলাকা ছাড়তে হতে পারে। “কিছু ভূখণ্ডের বিনিময় অব্যাহত থাকবে।” পরের মাসে একেবারে বিপরীত বক্তব্য আসে ট্রাম্পের মুখ থেকে। তিনি বলেন, ইউক্রেইন সামরিকভাবে যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে এবং ক্রিমিয়ান উপদ্বীপসহ রাশিয়ার দখলে যাওয়া অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করাও সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “ইউক্রেইন তাদের দেশকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। কে জানে, তার চেয়ে বেশি কিছুও মিলতে পারে।” রাশিয়া কী বলছে? রাশিয়া ট্রাম্পের পরিকল্পনা পত্যাখ্যান করেছে। মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই শান্তিচুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এমন কোনো চুক্তিতে নয়, যেটার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।” ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “রাশিয়ার অবস্থানে কোনো নড়চড় হবে না।” মঙ্গলবার রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গেল সপ্তাহে রাশিয়ার একটা বার্তা ওয়াশিংটনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেই বার্তায় বলা হয়েছে—শুধু দখল করা অঞ্চল নয়, ডনবাসের পুরোটাই রাশিয়াকে দিয়ে দিতে হবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক হওয়ার যে কথা ছিল, তা আপাতত শিকেয় উঠেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে ‘অযথা বৈঠকে’ বসতে চান না। বুধবার হোয়াইট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মনে হয়নি যে আমরা কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব, এ কারণে বৈঠকটি বাতিল করে দিয়েছি। কিন্তু আমরা পরে সেটা করব।” |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
