গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে (৬০) নিখোঁজের এক দিন পর পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কথা বলতে পারলেও বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকায় সড়কের পাশ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে স্থানীয়রা একটি গাছের সঙ্গে পা বাঁধা বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়।
খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে গেলে মুফতি মহিবুল্লাহ জানান, বুধবার (২২ অক্টোবর) ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হলে একটি এম্বুলেন্সে করে ৫ জন এসে তার মুখে কাপড় চেপে তুলে নিয়ে যায়। তারপরে তাকে অমানবিক নির্যাতন করে তারা।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরেই চিঠি দিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিলো। ইসকনের নেতা চিন্ময়ের পক্ষে কথা বলতে বলা হচ্ছিলো। বিএনপি, জামাত, এনসিপি- এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলা হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান প্রেমের পক্ষে কথা বলতে বলা হয়েছে। তাদের কথা মতো মসজিদে বয়ান দিলে আমাকে কোটি টাকা দেয়ার কথাও বলেছে তারা। আর না বললে আমাকে প্রাণনাশ ও আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকিও দেয়া হয়েছে।’
অ্যাম্বুলেন্সে তুলে আমাকে ৫ জন বিবস্ত্র করে মারধর করেছে। বোতলে পানি ভরে সেই বোতল দিয়ে আমার উরুতে মারধর করেছে। তারা প্রমিত বাংলায় কথা বলছিল। তাদের কথাবার্তা শুনে বাংলাদেশি বলে মনে হয়নি। তারা এক এক করে সব আলেমের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়েছে। আমি এখন নিরাপত্তা চাই, বিচার চাই।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আগে থেকেই তার মাথায় অপারেশন করা ছিলো। কিডনি ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।’ বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, ‘৯৯৯’ এ কলের মাধ্যমে আমরা ভোরে খবর পাই হেলিপ্যাড এলাকায় শেকলে বাঁধা একজন বয়স্ক মানুষ পড়ে আছেন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আমরা তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি। নিখোঁজের পর তারা টঙ্গী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ভোরে হাঁটতে বের হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে অপহরণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তার পরিবারের সদস্যরা এলে তাদের কাছে তাকে তুলে দেয়া হবে।’
এদিকে, এ ঘটনায় ইসকনকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে পঞ্চগড়ে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে পথসভায় বক্তারা মুফতি মহিবুল্লাহ অপহরণ ও নির্যাতনের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।