ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১১ কার্তিক ১৪৩২
দেশে দেশে আন্দোলন
ভারতের জেন জি কেন রাস্তায় নামছে না?
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Thursday, 23 October, 2025, 11:28 AM

ভারতের জেন জি কেন রাস্তায় নামছে না?

ভারতের জেন জি কেন রাস্তায় নামছে না?

দেশে দেশে যখন নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠছে তরুণ প্রজন্ম, তখন ভারতের জেন জি কেন রাস্তায় নামছে না? ভারতে ২৫ বছরের নিচে জনসংখ্যা প্রায় ৩৭ কোটি, অর্থাৎ দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি হচ্ছে তরুণ-তরুণী। স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে তারা রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্য সম্পর্কে সব সময়ই অবহিত থাকে। কিন্তু রাস্তায় নামা বা প্রতিবাদ করা তাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ও অকার্যকর বলে মনে হয়। ‘দেশদ্রোহী’ তকমা পাওয়ার ভয়, জাতি ও ভাষাভিত্তিক বিভাজন, বেকারত্বের চাপ, এবং কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তাদের নিরুৎসাহিত করে তুলছে।

এর বিপরীতে, এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশেই জেন জি প্রজন্ম সম্প্রতি একের পর এক আন্দোলনে মুখর। গত মাসে নেপালে তরুণদের নেতৃত্বে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় সরকার পতন হয়, মাদাগাস্কারে যুব আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয় নেতা, ইন্দোনেশিয়ায় চাকরির সংকট ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সরকারকে ছাড় দিতে হয়, আর বাংলাদেশে চাকরির কোটা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সরকার পতন হয়।

কিন্তু ভারতে এখনো সে ধরনের ঢেউ দেখা যায়নি। যদিও কিছু ক্ষীণ প্রতিবাদের আভাস মিলেছে। লাদাখে রাজ্যের মর্যাদা দাবিতে বিক্ষোভে সহিংসতাকে অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক ‘জেন জির চাপা ক্ষোভের বিস্ফোরণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। বিরোধী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও সম্প্রতি বলেছেন, ‘জেন জি প্রজন্মই ভোট জালিয়াতি ঠেকিয়ে সংবিধান রক্ষা করবে।’

কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ভারতের তরুণ সমাজ নেপাল বা বাংলাদেশের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত নয়। তাদের ক্ষোভ স্থানভিত্তিক ও বিচ্ছিন্ন, জাতীয় পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ভারতে জেন জির মধ্যে বিভাজন
ভারতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ধর্ম, ভাষা ও জাতিগত পরিচয়ভিত্তিক বিভাজন গভীর। কেউ বেকারত্ব বা শহুরে পরিকাঠামো নিয়ে চিন্তিত, কেউ জাতিভিত্তিক বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার, আবার কেউ আঞ্চলিক অধিকার বা সংস্কৃতির প্রশ্নে রাস্তায় নামে। ফলে একটি অভিন্ন আন্দোলন গড়ে ওঠা কঠিন।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ তকমার ভয়। ২৩ বছর বয়সী রাজনীতি বিভাগের স্নাতক ধৈর্য চৌধুরীর ভাষায়, ‘ভারতে এখন প্রতিবাদ মানেই অনেকের চোখে দেশবিরোধিতা।’ এমনকি দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও রাজনৈতিক কার্যক্রম ও মিছিল-মিটিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, যেগুলো একসময় ছিল ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র।

সরকার বলছে, তরুণদের শক্তি ও উদ্যমকে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে কাজে লাগানোই তাদের লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তবে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক চাপ অনেক তরুণকে বিদেশমুখী করছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৩০ শতাংশ তরুণ রাজনীতি এড়িয়ে চলছেন।

তবু এই প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতার শিকড় গভীর। তারা দেখেছে ২০১০-এর দশকের আন্দোলনগুলো—আন্না হাজারের দুর্নীতি বিরোধী বিক্ষোভ, ২০১২ সালের দিল্লি ধর্ষণ মামলা নিয়ে উত্তাল প্রতিবাদ, ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও কৃষি আইনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে এসব আন্দোলনের পরিণতিও তারা দেখেছে—পুলিশি অভিযান, গ্রেফতার ও ‘দেশবিরোধী’ তকমা।

সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত বলেন, যুবশক্তি অস্থায়ী—প্রতিটি প্রজন্ম নিজস্ব ইস্যুতে জাগে, আগের প্রজন্মের লড়াই উত্তরাধিকার হিসেবে নেয় না। আজকের ভারতের জেন জিরা তাই আপাতদৃষ্টিতে নীরব, কিন্তু তাদের নীরবতার ভেতরে রয়েছে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, অদম্য আকাঙ্ক্ষা ও পরিবর্তনের প্রত্যাশা।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status