পঞ্চগড়ে পল্লী চিকিৎসক দিলো হাই এন্টিবায়োটিক , ঔষধ খেয়ে রোগী এখন মৃত্যু পথযাত্রী
নতুন সময় প্রতিনিধি
প্রকাশ: Monday, 23 September, 2024, 7:25 PM
পঞ্চগড়ে পল্লী চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ সেবনের পর মো: আশরাফুল ইসলাম (৫০) নামে এক মধ্যবয়সী পুরষ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড় ধাক্কামারা ইউনিয়নের খোলাপাড়া খান পুকুর গ্রামে। পল্লী চিকিৎসক মোঃ ফরিদুলের ভুল চিকিৎসা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সেবন করে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আশরাফুল ইসলাম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোঃ আশরাফুল ইসলাম গত ১১ অক্টোবর বিকেলে পল্লী চিকিৎসক মোঃ ফরিদুলের ফার্মেসীতে জ্বর ভাব ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা জনিত কারণে ঔষধ ক্রয়ের জন্য যায় এবং একটি ১১ টাকা মূল্যের সার্জেল (৪০ পাওয়ার) ও একটি ১ টাকা মূল্যের প্লেন নাপা ক্রয়ের জন্য মোট ১২ টাকা নিয়ে যায়। তখন পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল , আশরাফুল ইসলামকে বলে যে, একটি সার্জেল (৪০ পাওয়ার) ও প্লেন নাপা ঔষধ দুইটি তার কাজ করবে না, তাকে হাই এন্টিবায়োটিক ঔষধ নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
পরবর্তীতে পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল তাকে হাই এন্টিবায়োটিকসহ ১০টি (১ ডোজ) ঔষধ দেখাইলে এবং আশরাফুল ইসলাম ঔষধ নিতে চাইলে পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল তাকে বলে যে, তোমার ১ ডোজ ঔষধে কাজ করবে না, ২ ডোজ নেও। পল্লী চিকিৎসক ফরিদুলের কথা মতো আশরাফুল ইসলাম এন্টিবায়োটিকসহ ২ ডোজের ২০টি ঔষধ ১৬০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে। পরবর্তীতে আশরাফুল ইসলাম সেদিন রাতে ভাত খাওয়ার পর পল্লী চিকিৎসক ফরিদুলের কথা মতো ১০টি (১ ডোজ) ঔষধ সেবন করে। ঔষধ সেবনের কিছুক্ষণ পর আশরাফুল ইসলাম শারীরিক অবস্থা ভয়ঙ্কর হয়ে পড়ে। তার তলপেটসহ সারা শরীর বাকা হইয়ে মুচড়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণ পর তার দুই পা বাকা হয়ে যায়, ফলে সে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেনা। পরবর্তীতে পল্লী চিকিৎসক ফরিদুলকে তার শারীরিক অবনতির কথা জানাইলে পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল গত ১২ অক্টোবর সকালে আশরাফুল ইসলামের বাসায় গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা দেখে ও তার দেওয়া ঔষধগুলোর মধ্যে ০২টি ঔষধ ভুল করে দিয়েছে বলে স্বীকার করে এবং ঔষধ দুইটি পাল্টায় দিবে বলে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। অতঃপর আশরাফুল ইসলামের শারীরিক অসুস্থতার কোন উন্নতি না হলে পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডা. এস.এম মাহবুব-উল-আলম এর কাছে যাইতে বললে আশরাফুল ইসলাম তৎক্ষনাৎ গত ১২ অক্টোবর দুপুরে তার কাছে গেলে তিনি আশরাফুল ইসলামের রক্ত, প্রস্রাবসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং তার সেবনকৃত ঔষধ দেখে বলে যে, পল্লী চিকিৎসক ফরিদুলের দেওয়া ঔষধের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
আশরাফুল ইসলামের শারীরিক অসুস্থতা গুরুতর হলে পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল গত ৫ সেপ্টেম্বর আশরাফুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পিজি হাসপাতালে সিটি স্ক্যান ও এম.আর.ই করার পরামর্শ দেন। আশরাফুল ইসলাম একজন গরিব, অসহায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল অন্যায় লোভ ও লাভের আশায় সবকিছু জেনেও ইচ্ছাকৃত ভাবে আশরাফুল ইসলামকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ দিয়েছে। পরবর্তীতে আশরাফুল ইসলাম সুবিচারের প্রার্থনায় ৮নং ধাক্কামারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউ.পি সদস্য মো. ওয়াহেদ মেম্বার এর নিকট গেলে এবং তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও পল্লী চিকিৎসক ফরিদুলের বোন জামাই হওয়ায় তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল আশরাফুল ইসলামকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও হুমকি ধামকি দিয়া আসছে এবং বলতেছে যে, আশরাফুল ইসলাম কোথাও বিচার পাবে না এবং এ বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আশরাফুল ইসলামকে দেখে নিবে বলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল ভুল চিকিৎসার কারণে আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘ দিন যাবৎ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই পল্লী চিকিৎসকের হাতে গ্রামের গরীব রোগীরা প্রায় প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। এই পল্লী চিকিৎসকের কাছে ১০ টাকার ওষুধ কিনতে গেলে তিনি জোর করে ১০০/১৫০ টাকার ওষুধ হাতে ধরিয়ে দেন।
ঘটনার বিষয়ে পল্লী চিকিৎসক ফরিদুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আসলে এটা ভিত্তিহীন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এটা সম্পূর্ণ গুজব। আমি কালিবাড়ি ঠাকুরগাঁও থেকে এলএমএফ কোর্স সম্পন্ন করেছি ২০১১ সালে। এখন পর্যন্ত আমার দ্বারায় কোন রোগীর কোন সমস্যা হয়নি আল্লাহর রহমতে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনার একটি অভিযোগ পেয়েছি। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।