বয়স যখন আঠারো বছর
নতুন সময় ডেস্ক
|
১৮ বছর কী অসাধারণ একটি বয়স। এটি একটি উচ্ছ্বাসপূর্ণ, অপ্রতিরোধ্য ও ঝুঁকি গ্রহণের সময়। এ বয়সে সব বাধা পেছনে ফেলে, দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি আসে। নজরুল ও সুকান্ত এই বয়সের তরুণদের নিয়েই অসংখ্য বিদ্রোহী কবিতা ও গান রচনা করেছেন। এই সময় কিছু পরিবর্তন আসে, তারা সবকিছুতে নিজেদের আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে চায়। শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনও ঘটে। বিশেষ করে, কীভাবে নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করবে, কী পরবে, কী খাবে এবং কাদের সঙ্গে মিশবে- এসব বিষয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে। পোশাক এই বয়সে সবাই ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়। মানানসই রং ও দেশি-বিদেশি পোশাকের ট্রেন্ড অনুসরণ করে। বর্তমানে মেয়েরা ওয়েস্টার্ন এবং দেশীয় পোশাক পরার পাশাপাশি লং কুর্তি, লং শার্ট, ফতুয়া, এবং টপসও পছন্দ করে। বাইরে বের হওয়ার সময় বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কুর্তির সঙ্গে জিন্স, লেগিংস অথবা পালাজ্জো পরে বেরিয়ে পড়ে। ত্বকের যত্ন এই বয়সে পড়াশোনা এবং ঘোরাঘুরির কারণে বাইরে বেশি সময় কাটাতে হয়, যা ত্বকে ধুলোময়লার প্রভাব ফেলে। এ সময় ত্বকের যত্নে রাসায়নিক উপাদানযুক্ত প্রসাধনী কম ব্যবহার করা উচিত। ঘরে তৈরি ফেসওয়াশ এবং স্ক্রাবার দিয়ে মুখ ও হাত পরিষ্কার করা ভালো। সপ্তাহে একবার স্ক্রাবার ব্যবহার করা যায়। পর্যাপ্ত পানি পান, ত্বক ময়েশ্চারাইজ রাখা, রোদে গেলে ছাতা ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকবে। ত্বকের বড় কোনো সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘুরে বেড়ানো এই বয়সে পৃথিবী ঘুরে দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রবল থাকে। বন্ধুরা দলবেঁধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। ভ্রমণ কেবল আনন্দই দেয় না, মানসিক বিকাশেও সাহায্য করে। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, শরীরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, এবং মস্তিষ্কের উন্নতিতে সহায়তা করে। প্রকৃতির কাছে গেলে মন শান্তি পায় এবং ভ্রমণে মনের ক্ষুধা মেটে। মনের যত্ন এই বয়সে মেয়েদের মধ্যে মুড সুইং হওয়া সাধারণ বিষয়। তাই মনের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধ্যান বা মেডিটেশন নিয়মিতভাবে করা উচিত, যা মনকে শান্ত রাখে, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে। এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো, যেগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও ‘ছাড়তে দেওয়া’ সহজ নয়, তবে চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো রাখতে ইতিবাচক বই পড়া উচিত এবং বড় মানুষদের জীবন থেকে শেখা উচিত যে তারা কীভাবে চাপ সামলেছেন। ভেতরের অপ্রয়োজনীয় আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দায়িত্ব নিতে শেখা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বও বাড়তে থাকে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিখাদ সময় পাওয়া কমে যেতে পারে, কিন্তু নিজের ভালো রাখার দায়িত্ব নিতে শিখলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং শক্তভাবে দাঁড়ানো যায়। ব্যক্তিগত জীবন, বিবাহিত জীবন, কিংবা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার এই বয়সে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রনসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত, কারণ শারীরিক বিকাশ, পড়াশোনায় মনোযোগ, খেলাধুলা, এবং শরীরচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে পরিমিত পুষ্টি, নিয়মিত যত্ন, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম জরুরি। প্রতিদিনের খাবারে উজ্জ্বল রঙের সবজি, টকজাতীয় খাবার, পরিষ্কার পানীয়, প্রোটিন, এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। মাদককে না বলুন অ্যালকোহলসহ যেকোনো নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে। মাদক গ্রহণ করলে চাহিদা বাড়তে থাকে, যা বিপজ্জনক। তাই নিকোটিন বা অ্যালকোহলে আসক্তি এড়াতে সচেতন থাকতে হবে। যা মানতে হবে ১৮ বছর বয়সে যা খুশি করা যায় না। কোনো ভুল করলে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়তে হবে। এই বয়সে দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো সব আইন মেনে চলতে হবে। নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবার মতামতকে উপেক্ষা করা যাবে না। আইন মানার পাশাপাশি নৈতিকতাও বজায় রাখতে হবে। কর্মক্ষমতা অর্জন করা দরকার, তাই ১৮ বছর বয়স থেকেই স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করতে হবে। এই বয়সের কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে।ছবি: জয়িতা তৃষা
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |