নয়নাভিরাম এমন সব দৃশ্যের দেখা মিলবে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে
সুন্দরবন থেকে ফিরে বিপ্লব বিশ্বাস
|
রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ বিচিত্র নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত। ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে এই বন। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী। চাঁদপাই রেঞ্জের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে দুবলা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এখানে লাল বুক মাছরাঙা, মদনটাক পাখির দেখা মেলে। এখানকার সৌন্দর্যের একটি দিক হচ্ছে হরিণের ঘাস খাবার দৃশ্য। দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। মেহেরআলীর খাল, আলোরকোল, মাঝেরচর, অফিসকেল¬া, নারিকেলবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাফরাখালী ও শ্যালারচর ইত্যাদি এলাকায় জেলে পল¬ী স্থাপিত হয়। এই ছয় মাস কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ এই চরে অবস্থান নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরা ও শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে আহরিত শুঁটকি চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারী বাজারে মজুদ ও বিক্রয় করা হয়। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ, গাছে গাছে বানরের দস্যিপনা। নির্জন সবুজ বনে নাম না জানা হাজারো পাখির কিচিরমিচির। একই সঙ্গে এত সবকিছুর দেখা পেতে কার না মন চায়? নয়নাভিরাম এমন সব দৃশ্যের দেখা মিলবে ম্যানগ্রোভ বন এই সুন্দরবনে। তাইতো দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক ছুটে যান সেখানে। সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নোনা জলের বন বা ম্যানগ্রোভ বন। যার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অপার বিস্ময়, শিহরণের হাতছানি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে নানা প্রজাতির বৃক্ষ, লতাগুলো আর প্রাণের অভয়ারণ্য এটি। এরই মধ্যে সুন্দরবন স্থান পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। সৌন্দর্য আর গা ছমছম অনুভূতির কারণে পর্যটকদের একটি বড় আগ্রহের জায়গা সুন্দরবন। বিশ্বসেরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, খাল পাড়ের অলস কুমির কিংবা গাছের ডালে বানরের দুরন্তপনা, কি নেই এখানে! সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো কটকা ও কচিখালি। এখানে যেতে আগে থেকেই নিতে হবে বন বিভাগের অনুমতি। এছাড়া নীলকমল, দুবলার চরসহ বেশ কয়েকটি জায়গা দেখার মতো। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই ঘুরে বেড়ানো যায় এই বনে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বর্ষাকালে। সারি সারি সুন্দরী, পশুর, গেওয়া, কেওড়াসহ নানা প্রজাতির গাছ আর গোলপাতা আছে এই বনে। চিত্রা হরিণের দল, বন মোরগের ডাক, বানরের চেচামেচি, মৌমাছির গুঞ্জন মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। আর ভাগ্য ভালো হলে দেখা মিলতে পারে বনের রাজা বাঘেরও। ঠান্ডা জলের পরশ মেলে কটকার সমুদ্র সৈকতে। তবে এ সময়টা অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। কাঠের ট্রেইল ধরে হেঁটে দেখা যায় সুন্দরনের আরও জায়গা। ছোট ট্রলারে করে খালের মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় বনের গহীনে। আর ওয়াচ টাওয়ারে উঠলে দেখা যায়, বনের উপরিভাগ। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখারও চমৎকার জায়গা এই সুন্দরবন। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |