যুগের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমেই বিলীন হওয়ার পথে দেশের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। নিত্য ব্যবহার্য মাটির তৈজসপত্র তার চাহিদা হারিয়েছে। সে স্থান দখল নিয়েছে প্লাস্টিক শিল্প। যা এখন চোখে পড়ে তার বেশিরভাগই ঘর সাজানোর উপকরণ হিসাবে।
তবে কিছু মানুষ এখনো মৃৎশিল্প আকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তেমনই একটি গ্রামের দেখা মিলে ডুমুরিয়া উপজেলার রানাই পাল পাড়া, যেখানে প্রায় ৫০টি পাল পরিবারের বসবাস। তবে মৃৎ শিল্পকে আকড়ে রেখেছে মাত্র ১০টি পরিবার। সেখানে কথা হয় নমিতা রানী পাল ও গুরুপদ পাল দম্পতির সঙ্গে তারা জানান প্লাস্টিকের যুগে এখন আর মৃৎশিল্পের তেমন গুরুত্ব নেই বাজারে বা মানুষের কাছে। তবুও বাপ দাদার কাজ ছাড়তে পারিনী আমরা,তা ছাড়া ছোট থেকে এই কাজ বাদে অন্যকাজ পারতে পারিনা। তাই এই কাজ নিয়ে পড়ে আছি।
তারা জানান দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব সংগ্রহ করে ব্যবসায়ী এবং সৌখিন মানুষেরা। তাদের কারণে কোন রকমে টিকে আছি।
প্রতিবন্ধকতায় অনেক দিক থেকেই পিছিয়ে আছেন কুমারপাড়ার এই মানুষগুলো। মৃৎশিল্পের আধিপত্য কেমন ছিল? তা প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে ফিরে তাকালেই স্পষ্ট দেখা যাবে। বংশ পরম্পরায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কুমার পাড়ার মানুষগুলো। কোন ছাঁচে নয়, চোখের আন্দাজ আর হাতের জাদুকরী ছোঁয়ায়, কাঠের চাকায় ঘূর্ণির বলয়ে কাঁদা, মাটি আর পানির মিশ্রণে তৈরি হয় প্রতিটি তৈজসপত্র। চোখে পড়বে, পরম মমতায় মাখা মসৃণ আঁচড়, মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁকা হয় নকশা। ঐতিহ্য আর শুদ্ধতা অক্ষুণ্ণ রাখতে, অগ্নি পরীক্ষা পেরিয়ে পৌঁছে যায় সৌখিনদের হাতে। তবে দুঃখ কষ্টের শেষ নেই এই কারিগরদের, টুকরো টুকরো গল্পে উঠে এসেছে তারই কিছুটা অংশ। শীত গরমের মাঝামাঝি সময়টুকু ভালো কাটলেও, কষ্টের শেষ নেই বর্ষা মৌসুমে।
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে মরিয়া তারা, রাত থাকতেই ঘুম ভাঙ্গে তাদের কাজ করে গভীর রাত পর্যন্ত। পরিবারের একটু খানি স্বচ্ছলতার আশায়।