চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর পেঁয়াজ পাতা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
নতুন সময় ডেস্ক
|
শীতকালীন সবজির মধ্যে পেঁয়াজপাতা বেশ জনপ্রিয়। খেতেও বেশ সুস্বাদু এই সবজিটি। একে স্প্রিং অনিওন বা সবুজ পেঁয়াজও বলা হয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে আদি যুগ থেকেই পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ পাতার প্রচলন শুরু হয়েছে। পেঁয়াজ একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম এলিয়াম সেপা। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজ পাতা খুবই জনপ্রিয়। দেশভেদে এর নামের বৈচিত্র্য রয়েছে। পাতা পেঁয়াজের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলো হল- জাপান, তাইওয়ান, শ্রীলংকা, ভারত, কোরিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়া। বাংলাদেশেও পেঁয়াজ প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। পেঁয়াজ হয় মাটির তলায়। তবে পেঁয়াজের সবুজ পাতা মাটি ভেদ করে ওপরে উঠে আসে। পেঁয়াজ পাতাকে পেঁয়াজের কলি হিসেবে বেশি চিনি। পেঁয়াজের মতো পেঁয়াজ পাতা যে অসাধারণ গুণাবলির অধিকারী তা আমাদের অনেকেরই অজানা। পেঁয়াজের পাতা অনেক ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তরকারিতে পেঁয়াজের পাতা মিশিয়ে দিলে স্বাদ বেড়ে যায় অনেকটা। সবজি হিসেবে এর কদরও আছে। চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল খাবারে পেঁয়াজের পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পেঁয়াজ পাতা ও পেঁয়াজের কন্দ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এতে উচ্চ মাত্রার সালফার থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই নরম কচি পেঁয়াজে ক্যালরি কম থাকে। একে স্প্রিং অনিওন বা সবুজ পেঁয়াজ ও বলা হয়। পেঁয়াজে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। পেঁয়াজ পাতা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২ এবং থায়ামিন সমৃদ্ধ। পেঁয়াজের কন্দে ভিটামিন এ ও ভিটামিন কে থাকে। এছাড়াও কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার থাকে। কোয়ারসেটিন নামক ফ্ল্যাভনয়েডের উৎস এই পেঁয়াজ পাতা। পাতা পেঁয়াজের প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আর্দ্রতা ৭৮.৯%, আমিষ ১.৮%, চর্বি ০.১%, খনিজ পদার্থ ০.৭%, শর্করা ১৭.২%, ক্যালসিয়াম ০.০৫%, ফসফরাস ০.০৭%, লোহা ২.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ৩০ আই ইউ, ভিটামিন-বি১ ০.২৩ মি.গ্রাম, ভিটামিন-সি ১১ মি. গ্রাম ও এনার্জি ৩৪ কিলোক্যালরি আছে। পেঁয়াজ পাতা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে । এর অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি খাওয়া কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । কোলেস্টেরলের পাশাপাশি এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতেও সহায়ক । ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হজমের জন্যও উপকারী । এছাড়াও এটির প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী বলে বিবেচিত হয় । ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে সবুজ পেঁয়াজেও পাওয়া যায়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শক্তিশালী হাড়ের জন্য অপরিহার্য । আপনি যদি শুধুমাত্র একটি সবজি থেকে এত উপকার পান তাহলে এটি আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজনীয় হতে পারে । কোন উপায়ে পেঁয়াজ পাতা আপনার ডায়েটের অংশ করতে পারেন। পেঁয়াজ পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো জানা যাক এবার। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর লুটেইন ও জেনান্থিন নামক ক্যারোটিনয়েড এর উপস্থিতির জন্য পেঁয়াজ পাতা চোখের প্রতিরক্ষায় প্রভাব বিস্তার করে। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন এ যা স্প্রিং অনিওন এর সবুজ অংশে থাকে। ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যানসার প্রিভেনশনে বলা হয়েছে, যাঁরা নিয়মিত পেঁয়াজের পাতা খান, তাঁদের ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। সবুজ পেঁয়াজের সালফার যাতে অ্যালাইল সালফাইড থাকে তা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। সবুজ পেঁয়াজে ক্যান্সার রোধী উপাদান ফ্লেভনয়েড থাকে। হৃদরোগের জন্য উপকারী পেঁয়াজ পাতার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলের কাজে বাঁধা প্রদান করে কোষ কলার এবং ডিএনএ-এর ক্ষতি রোধ করতে পারে। পেঁয়াজ পাতার ভিটামিন সি কোলেস্টেরল ও রক্ত চাপের উচ্চ মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। পেঁয়াজ পাতার সালফার করোনারি হার্ট ডিজিজ এর ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে পেঁয়াজ পাতা রক্তের চিনি কমায়। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য খুব উপকারী। শ্বাসযন্ত্র ভালো থাকে অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় পেঁয়াজ পাতা সাধারণ ঠাণ্ডা, ফ্লু ও ভাইরাল ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শ্বাসযন্ত্রের কাজকে উদ্দীপিত করা ও কফ বাহির করে দিতে সাহায্য করে পেঁয়াজ পাতা। হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে পেঁয়াজ পাতায় উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে থাকে যা হাড়ের স্বাভাবিক কার্যাবলীর জন্য প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি কোলাজেনের সমন্বয় সাধনে কাজ করে যা হাড়কে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে ভিটামিন কে হাড়ের ঘনত্ব রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। পাকস্থলীর জটিলতা প্রতিরোধ করে সবুজ পেঁয়াজ গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টাইনাল সমস্যা প্রশমনে উপকারী ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া এবং পাকস্থলীর জটিলতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রতিকার হচ্ছে স্প্রিং অনিওন। অধিকন্তু রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও পেঁয়াজ পাতার উচ্চ মাত্রার ফাইবার হজম সহায়ক। ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে পেঁয়াজ পাতার খনিজ উপাদান সালফার ছত্রাকের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে এবং ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এছাড়াও এঁরা রক্ত সংবহনের উন্নতি করে এবং শরীরে ভিটামিন বি১ এর শোষণের মাধ্যমে চাপ ও ক্লান্তি কমায়। শরীরের কলার প্রদাহ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে পেঁয়াজ পাতার ভিটামিন সি। উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে পেঁয়াজ পাতা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২ এবং থায়ামিনসমৃদ্ধ। কোয়ারসেটিন নামক ফ্ল্যাভনয়েডের উৎস এ পেঁয়াজ পাতা। পেঁয়াজ পাতার ভিটামিন সি কোলেস্টেরল ও রক্ত চাপের উচ্চ মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অ্যাজমার চিকিৎসায় পেঁয়াজ পাতায় অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকে যা আর্থ্রাইটিস ও অ্যাজমার চিকিৎসায় ভালো ফল দেয়। বিপাকে সহায়তা করে। পা ফুলে যাওয়া রোধ করে বেশি হাঁটা কিংবা পরিশ্রমে পা ফুলে যায় কখনো কখনো। পা ফোলার জন্য অনেকই ওষুধ খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তখন পেঁয়াজের পাতা বেটে পেস্ট বানিয়ে পায়ে মাখলে উপকার পাবেন। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |