ইংরেজি শিক্ষাদান বিষয়ে সংকট ও উত্তরণের পথ
এ.এম.এম. হামিদুর রহমান
|
একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান বিশ্বে ইংরেজি বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগের সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যম। সেই সাথে এই ভাষা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষার প্রধানতম বাহন। এছাড়া এই ভাষা সংবাদ সম্প্রচার, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ইউটিউব, হোয়াট্সঅ্যাপ ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কারণে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বহুকাল থেকে বিবেচিত হয়ে আসছে। শুরুটা যদিও বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ঘটেছিল, কালের বিবর্তনে এটি বর্তমানে আমাদের দেশে মাতৃভাষার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে সর্বস্তরে পাঠদান করা হয়ে থাকে। এর গোড়াপত্তন ঘটে প্রথম শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে এবং শেষ হয় উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণিতে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই দীর্ঘ ১২ বছর অসফলতার সাথে আবশ্যিকভাবে পাঠদানের পর ছাত্র-ছাত্রীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে, তখন তাদের ইংরেজি দক্ষতার অপ্রতুলতার কারণে সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ তাদের জন্য English Remedial Course, Basic Grammar and Writing, Listening/ Speaking/ Reading/ Writing Development Courses, English for Academic Purposes, English for Employability প্রদান করে থাকে। এরপরও বহু ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজি ভাষার জ্ঞান ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতার কারণে কাঙ্খিত চাকুরি প্রাপ্ত হন না এবং বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন TOEFL বা IELTS পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় না। এখন সময় এসেছে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যর্থতার কারণসমূহ অনুসন্ধান করা এবং চিহ্নিত সমস্যাসমূহ উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া। সঠিক পথ খুঁজে বের করতে না পারলে আমরা জাতিগতভাবে অনগ্রসর হয়ে থাকব, আমাদের ইংরেজি পাঠদান সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ দূরীভূত হবে না এবং ইংরেজি শিক্ষায় প্রভূত অর্থ ও শ্রম ব্যায়ের অসাফল্যের বোঝা যুগের পর যুগ আমাদের বহন করে যেতে হবে। যদি কোনো ভাষা শিক্ষাদানের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি (Curriculum & Syllabus) যথোপযুক্ত না হয়, যদি সঠিকভাবে তা পাঠদান না করা যায়, পাঠদানের পরিবেশ যদি অনুকূল না হয়, শিক্ষার্থীদের সেই ভাষা শেখার জন্য আকর্ষণ বা প্রেরণা না থাকে এবং শিক্ষক যদি কৌশলী এবং নিবেদিতপ্রাণ না হন তবে শিক্ষাদান বছরের পর বছর অসাফল্যের গড্ডালিকা প্রবাহে নিমজ্জিত হতে থাকবে। এই অবস্থার উত্তরণ না ঘটলে পরিত্রাণের কোনো পথ পাওয়া যাবে না। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে “ সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দেব কোথা?” বহু বছর ধরে যথাযথভাবে বিদেশি ভাষা শিক্ষাদান নীতিসমূহ সঠিকভাবে প্রণীত না হওয়ায় এবং সময় সময় যে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাস্তরে বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি শিক্ষাদান একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্যার প্রকৃতি নিরূপণ একটি দুরূহ ব্যাপার। তবে মূল সমস্যার সূত্র সমূহ অনুসন্ধান করতে হলে নিম্ন বর্ণিত বিষয়সমূহ অনুধাবন করতে হবে: ১. একটি বাস্তবমুখী ভাষা-নীতি প্রণয়ন – কাকে, কখন থেকে, কত বছর বয়সে এবং কীভাবে একটি বিদেশি ভাষা শেখাতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে তা নিরুপণ। ২. শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রয়োজন কী, রাষ্ট্র বা সমাজ কোন ভাষায় তাদের কাছে কী কী দক্ষতা প্রত্যাশা করে তা সুনির্দিষ্টকরণ, শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক পটভূমি, শিক্ষার্থীদের ভাষা শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনের আগ্রহ ও লভ্য সুযোগ-সুবিধাসমূহের সম্ভাব্য ব্যবহারের প্রচেষ্টা। ৩. ভাষা শিক্ষার উপকরণ ও সুযোগসমূহের প্রতুলতা ও বিদ্যাপীঠে শিখন-শিক্ষাদান পরিবেশ (teaching learning situation), ছাত্র সংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বব্যাপী ভাষা শিক্ষাদান বিশেষদক্ষদেরঅভিমত এই যে একটি ভাষার ব্যাকরণের সূত্রসমূহ মুখস্ত করে ও অনুবাদ অনুশীলন করে সুচারুরূপে শেখা যায় না। এজন্য প্রয়োজন হয় যে ভাষাটি শিখতে হবে সেই ভাষায় শ্রবণ, কথন,পঠন ও লিখন (Listening, Speaking, Reading, Writing) দক্ষতাসমূহ বৃদ্ধির প্রয়োজনে এই দক্ষতাসমূহ বা skills এর পরিকল্পিত এবং বারংবার অনুশীলন, যেমনটি হয়ে থাকে মাতৃভাষা অর্জনের ক্ষেত্রে। ৪. এজন্য প্রয়োজন হয় অল্প সংখ্য ছাত্রের শ্রেণিকক্ষ। আন্তর্জাতিকভাবে একটি ভাষা শিখনশ্রেণিতে সর্বোচ্চ ছাত্র সংখ্যা হওয়া উচিত ১২ জন – যাতে শিক্ষক প্রত্যেক ছাত্রকে ওই চারটি Skill এর জন্য প্রচুর অনুশীলন করাতে পারেন। বলা হয়ে থাকে ভাষা শেখার মূলমন্ত্র তিনটি – Practice Practice and Practice. আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অল্পসংখ্যক ছাত্রের নীতির বাস্তবায়ন হয়তো সম্ভব নয়। তবে, এই সংখ্যা কোনক্রমেই ২০ বা ৩০ জনের বেশি হওয়া উচিত নয়। কারণ একটাই – প্রত্যেক ছাত্রকে শুনতে, বলতে, পড়তে এবং লিখতে দেয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং শিক্ষক প্রতিনিয়ত তাদের পাশে থেকে তাদের ভাষা শিখনের দক্ষতার কাজে সহায়তা করে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাই, স্কুল পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ৫০-১০০ জন ছাত্র এবং কলেজ পর্যায়ে তা ১০০-৩০০ জন পর্যন্ত হতে পারে। এই অকল্পনীয় ছাত্র সংখ্যার শ্রেণিতে একজন শিক্ষক কেবলমাত্র বক্তৃতাদানের মাধ্যমে পাঠদান করে থাকেন (Lecture Method) – যা ভাষা শিখন ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি ভাষা শিখতে হলে প্রতিটি Skill এর ক্ষেত্রে প্রভূত অনুশীলন প্রয়োজন। যতদিন তা না ঘটবে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদেশি ভাষা শিক্ষাদান একটি সোনার হরিণই থেকে যাবে এবং কোনোক্রমেই এই অবস্থার উত্তরণ ঘটবে না। ৫. প্রসঙ্গক্রমে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন আমাদের প্রচলিত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য উপকরণসমূহ ভাষা শিখনে সাফল্য লাভের জন্য উপযোগী কি না। আমাদের দেশে ইংরেজি ভাষা শিখন ও শিক্ষাদানের ইতিহাস সুপ্রাচীন। সেই ব্রিটিশ আমলে শুরু Grammar – Translation Method দিয়ে – যা পাকিস্তানি আমলে ১৯৫৭ সালে Ronald Mackin প্রণীত এবং East Pakistan School Textbook Board কর্তৃক গৃহীত alternative syllabus এর মাধ্যমে পরিবর্তিত। এটা ছিল একটি Structural Situational Syllabus যা চারটি language skill এর অনুশীলণের সুযোগ দিতো। ১৯৭৪ সালের ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয় যা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করার সুপারিশ করা হয়। পরবর্তিকালে বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আলোকে প্রথমে তৃতীয় শ্রেণি থেকে (১৯৮০ সালে) এবং পরে প্রথম শ্রেণি থেকে (১৯৯২ সালে) ইংরেজি ভাষাকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে (compulsory subject ) পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পাঠদান করলাম, কিন্তু সেই পাঠদান প্রণালী যদি কার্যকরী (effective) না হয় তবে আমাদের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থতাই পর্যবশিত হবে, যেমনটা এতদিন হয়ে আসছে। ১৯৮০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদানকে সফল করার জন্য অনেক আন্তরিক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সমূহের কাছে সঠিক পরামর্শ প্রদানের জন্য সঠিক বিশেষজ্ঞ নির্বাচনে অসাফল্য এবং পরিকল্পিত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা একটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ১৯৯৮-২০০৩ সাল পর্যন্ত – বৃটিশ সরকারের সহায়তায় ঊহমষরংয English language teaching improvement project (ELTIP) পরিচালিত হয়। বিভিন্ন শ্রেণিতে প্রচলিত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচিসমূহ পরিশীলিত করা হয়। বিশেষত : শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান পদ্ধতি communicative language teaching (CLT) বিষয়ে ৩৫ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের দেশের বিভিন্ন স্থানে হাতেকলমে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯-২০১৭ সাল পর্যন্ত বৃটিশ সরকারের সহায়তায় English in action (EIA) নামক প্রকল্প পরিচালিত হয়। এই প্রকল্প প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক ইংরেজি শিক্ষককে সুষ্ঠুভাবে ভাষা শিক্ষাদানকল্পে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এছাড়াও ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত OSSTEB orientation of secondary school teachers for teaching English ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরিচালিত SESIP ( Secondary Education Sector Investment project) ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পরিচালিত TQI-SEP (teaching quality improvement – Secondary Education project) ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পরিচালিত SEQAEP (Secondary Education quality and Access Enhancement Project ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন অনুসন্ধান ও গবেষণা করা প্রয়োজন বিপুল শ্রম ও অর্থব্যয়ে যে এত বিপুল সংখ্যক প্রকল্প পরিচালিত হলো – তাদের ফলাফল কী, শিখন ও শিক্ষাদান ক্ষেত্রে কোনো, গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে তা কতটুকু, ব্যর্থ হয়ে থাকলে তার কারণসমূহ কী। এ গুলো না জানলে ভবিষ্যতেও আমাদের বারংবার ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছো অবস্থায় নিপতিত হতে হবে। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের সাথে বাক্যালাপের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন গবেষকদের লেখায়যা জানতে পাই তা নিম্নরূপ: ১. প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষত: গ্রামাঞ্চলের স্কুল সমূহের ইংরেজি শিক্ষাদানকালে নিয়োজিত শিক্ষকগণ এই ভাষা ব্যবহারে পারদর্শী নন এবং শিক্ষাদানের আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে অবহিত নন, অথবা সেগুলো প্রয়োগের ব্যাপারে অনাগ্রহী। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষক ইংরেজি শিক্ষাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। তদুপরি আমাদের গ্রামঞ্চলের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বর্তমান যুগের ডিজিটাল সাক্ষরতা বঞ্চিত। একদিকে অদক্ষ শিক্ষক, অন্যদিকে শিখন পরিবেশের দৈন্য – এই পর্যায়ের ইংরেজি শিক্ষাদান বিঘ্নিত করছে। ২. মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকবৃন্দকে তুলনামূলকভাবে অনেকটা অগ্রসর মনে করা হয় কেননা তারা বিভিন্ন সময়ে ELTIP, EIA, SEQAEP, SESSIP, TQI ইত্যাদি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকবেন। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, তারা CLT এবং আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পাওয়া সত্ত্বেও তা তাদের শ্রেণিকক্ষে বাস্তবায়ন করেন না। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এবং নিজেদের অনাগ্রহের কারণে বহুলপ্রচলিত grammar translation method (GTM) এর মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে যান। এই শিক্ষাদান পদ্ধতিতে শিক্ষককে তেমন পরিশ্রমী বা সৃজনশীল হতে হয় না যা communicative language teaching (CLT) প্রয়োগের ক্ষেত্রে করতে হয়। ৩. উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরেও GTM ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং শিক্ষকগণ Lecture method অবলম্বন করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিপুল হওয়ার কারণে, শ্রবণ, কথন, পঠন ও লিখন দক্ষতাসমূহের অনুশীলন সম্ভব হয় না। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকগণ ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান বিষয়ে তেমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন এবং এদের অধিকাংশই ইংরেজি সাহিত্য (English Literature) বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। যদিও অধুনা ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স (M.A. in ELT/TESOL) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবর্তিত হয়েছে, কলেজসমূহে এমন শিক্ষক সংখ্যা নগণ্য । ৪. সব সমস্যার মূলে রয়েছে সনাতনী পরীক্ষা পদ্ধতি। যদিও ইংরেজি পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচিসমূহে Communicative Language Teaching-এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং পাঠ্যপুস্তকে এবং পাঠদানে তার প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে – শিক্ষকগণ তা বাস্তবায়নে পরান্মুখ। এর কারণ হলো NCTB Curriculum- এর পাঠ্যসূচি মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা বোর্ড পরিচালিত পরীক্ষাসমূহের ইংরেজি প্রশ্নপত্র প্রণয়নে অনুসৃত হয় না। Curriculum-এ শ্রবণ ও কথন (Listening & Speaking) দক্ষতার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু SSC বা HSC পরীক্ষায় এই দক্ষতাসমূহের যোগ্যতা শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পেরেছে কি না তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই । SSC এবং HSC পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নপত্রে কেবলমাত্র Grammar, Reading এবং Writing Skill সমূহের দক্ষতা নিরুপণ করা হয়। Listening এবং Speaking Skills এর দক্ষতাসমূহ • নিরূপণ করার ব্যবস্থা না থাকার ফলে শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে এগুলোর অনুশীলনের কোনো পদক্ষেপ নেন না। এর ফলে Communicative Language Teaching এবং ইংরেজি Curriculum-এর দুটি প্রধান উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিপুল সংখ্যক ছাত্রের Listening এবং Speaking Skills-এর দক্ষতাসমূহ যাচাই করা কঠিন বটে, তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন সম্ভব। এই দুটি দক্ষতা অর্জিত না হলে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি শিক্ষাদান কখনই সম্ভব হবে না । এ যেন ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? উত্তর হল আমরা সবাই – শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, পরীক্ষা বোর্ডসমূহ, সরকারের শিক্ষাপ্রশাসন ও আমরা শ্রেণি শিক্ষকেরা । আমরা জানি কী কী করতে হবে, এর জন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা। ২০২১ সালে প্রণীত (বর্তমানে স্থগিত) ইংরেজি নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি যদিও দাবি করা হয়েছে যে এটি শিক্ষার্থীদের সঠিক প্রয়োজনের আলোকে প্রণীত হয়েছে এবং এতে অত্যাধুনিক শিক্ষাদান ধারণাসমূহ সংযোজিত হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তা অমূলক প্রতীয়মান হয়েছে এবং সরকার সঙ্গত কারণে তা স্থগিত করেছেন। তবুও কিছু কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে আমরা একই ধরনের ভুলের শিকার না হই । বলা হয়েছে যে, এই শিক্ষাক্রম Competency- based, যা পূর্বেও ছিল । কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়ের ইংরেজি বিষয়ে কিছু কিছু দক্ষতা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে যা বিদেশি ভাষা শিক্ষাদান ক্ষেত্রে তেমনভাবে প্রযোজ্য নয়। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পাঠ্যসূচিতে নিচের দক্ষতাসমূহ সংযোজিত হয়েছে যা পূর্ববর্তী পাঠ্যসূচিতে ছিল না। যেমন: Competency: 6.3. Ability to comprehend and connect to a literary text using contextual clues, students will be exposed to different genres of literary texts, reflect on the elements of storytelling (plot, character and setting) which will enable them to connect to the text and based on that they will be able to express their appreciation. Learning experience: Students will listen to or/and read various literary texts and identify the literal and intended meaning. Students will engage in a discussion to analyse the plot. character and settings; subsequently, they will relate the storyline with their own experience and narrate their views on it. Students will produce similar literary texts reflecting the elements of storytelling ভাবতে অবাক লাগে, কোন বিশেষজ্ঞগণ এই স্থগিত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োজিত English Teaching Task Force মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা নিরূপণের যে গবেষণা করেছিলেন তার কিছু ফলাফল নিম্নরূপ: The English proficiency of students in class xii is at least four yours below the standard assumed in their textbooks. The majority of students at secondary teacher training institutions (at least 70%) are not proficient in material beyond that used in the class viii textbooks, yet they are expected to teach up to class x. ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ESP Curriculum Unit এর একটি গবেষণায় দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তৎকালীন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দক্ষতা নিরূপিত হয়েছিল নিম্নরূপ: Students are at instructional level at class viii texts, but their real reading level is class vii standard. শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে না কমেছে তা স্থগিত কারিকুলাম প্রণেতারা নিরূপণ করেছিলেন কি না জানা নেই, তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পাঠ্যসূচিতে ইংরেজি সাহিত্য পঠন ও তার সমালোচনামূলক মূল্যায়নের যে অভীক্ষা প্রণীত হয়েছে তা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। সপ্তম শ্রেণিতে আরও সংযোজিত হয়েছে: 7.4. Ability to connect emotionally with a literary text and express personal feelings on it. 7.4.1 Students analyse the features of the literary texts. 7.4.2 Students produce texts following the features of literary texts, based on their experience/imagination. অষ্টম শ্রেণিতে আছে: 8.5. Appreciate the use of stylistics and ornamentation (imagery, metaphor, simile, etc.) in a literary text. নবম শ্রেণিতে আছে: 9.5. Ability to appreciate aesthetic values in English literary texts and internalize aesthetic values in one’s articulation. উপরোক্ত অভীক্ষাসমূহ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করার কারণে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত যে সমস্ত পাঠ্যপুস্তক রচিত, মুদ্রিত ও শ্রেণিকক্ষে পঠিতব্য হয়েছে তাতে মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শেকস্পীয়র বিশেষজ্ঞ বানানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে মনে হয় । যেমন: ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে King Lear এর কিছু অংশ সংযোজিত হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির বইয়ে As You Like It-এর একটি অংশ সংযোজিত হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ে The Merchant of Venice নাটকের কিছু অংশ নেওয়া হয়েছে। নবম শ্রেণির বইয়ে Macbeth নাটকের অনেকটা সংযোজিত হয়েছে। এর সাথে Tragic Hero, Tragic Flaw, Supernatural Elements, Theme of Revenge ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাখ্যা, বর্ণনা ও আলোচনা করা হয়েছে। জানা গেছে যে দশম শ্রেণির বই লিখিত হয়েছিল, কিন্তু প্রকাশিত হয়নি। শোনা যায় যে এই বইয়ে শেকস্পীয়রের Hamlet নাটক অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আমাদের জানা মতে Macbeth এবং Hamlet এর মতো গভীর অর্থবহ নাটকগুলো সারা বিশ্বে ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পঠিত ও আলোচিত হয়ে থাকে। উপরোক্ত পাঠ্যপুস্তকগুলোতে শেকস্পীয়রের এত নাটক সংযোজন অবিবেচনাপ্রসূত কাজ হয়েছে বলে মনে হয় । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ইংরেজি ভাষা শেখার মূল উদ্দেশ্য হল সেই ভাষা শুদ্ধভাবে পড়তে, বলতে ও লিখতে পারা ও শুনে বুঝতে পারা এবং একে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিশ্বের অন্য ভাষাভাষীদের সাথে ব্যবহারের দক্ষ হওয়া, সাহিত্য সমালোচক হওয়া নয়। একটি ভাষা শিক্ষাদান ক্ষেত্রে সাহিত্য চর্চার প্রয়োজন হয় না, তবে সহজ সুন্দর কবিতা, মনোমুগ্ধকর ছোটগল্প ইত্যাদি অবশ্যই ব্যবহার করা যায় – শিক্ষায় আনন্দলাভ করার জন্য এবং অন্য ভাষাভাষীদের জীবন সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু কখনই তাদের শেকস্পীয়র বিশেষজ্ঞ করার প্রয়োজন নেই। গল্প পড়ার জন্য Tales from Shakespeare ব্যবহার করা যেত, সাহিত্য সমালোচনা নয়। দ্বিতীয়ত: মাধ্যমিক পর্যায়ের খুব নগণ্যসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন করতে যাবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের খুব কমসংখ্যক শিক্ষক হয়তো ইংরেজি সাহিত্যে B.A. Hons. এবং M.A. করে থাকবেন। সুতরাং তারা Macbeth ও Hamlet এর মতো নাটকের শৈল্পিক বিচার ইংরেজিতে খুব কাঁচা ছাত্র- ছাত্রীদের পড়িয়ে বোঝাতে পারবেন কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা যেতে পারে । পরিত্রাণের উপায়সমূহ : ১. প্রাথমিক পর্যায়ের সকল ইংরেজি শিক্ষককে স্বল্পমেয়াদী হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তারা সেই প্রশিক্ষণ শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করতে পারছেন কি না তা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠণ করতে হবে। ২. মাধ্যমিক পর্যায়েও স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নীতিসমূহ বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য একটি আলাদা বিশেষজ্ঞ দল গঠন করতে হবে। ৩.উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে, ভবিষ্যতে যারা শুধুমাত্র M.A. in ELT/ TESOL ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের নিয়োগ করতে হবে। সকল কর্মরত শিক্ষকদের ভাষা শিক্ষাদান বিষয়ে Jano প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করতে হবে। ৪. বিভিন্ন স্তরের ইংরেজি পাঠক্রমে পাঠ্যসূচির পরিমার্জন করতে হবে যাতে সঠিক ও প্রয়োজনীয় দক্ষতাসমূহ অন্তর্ভূক্ত হয়। এই কাজে ভাষা শিক্ষাদান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন । ৫. সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন । এটি পরিকল্পিতভাবে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত করতে হবে। শ্রবণ ও কথন দক্ষতা নিরূপণের কলাকৌশল সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, এই দক্ষতাসমূহ পরীক্ষা পদ্ধতিতে অন্তর্ভূক্ত করার পূর্বে। ৬. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি English Language Teaching Task Force গঠণ করা যেতে পারে, যাদের কাজ হবে সর্বস্তরে ইংরেজি শিক্ষাদান কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই দলে আমাদের দেশের প্রবীণ ইংরেজি শিক্ষাদান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করা যেতে পারে। সমস্যা অনেক, কিন্তু সকল সমস্যার সমাধান আছে – ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। – এই মূহুর্তে আমাদের শিক্ষাবিষয়ক নীতিনির্ধারকগণ একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করতে পারেন, যেখানে সকল স্তরের ইংরেজি শিক্ষক, শিক্ষক-প্রশিক্ষক, ইংরেজি ভাষা শিক্ষাদান বিষেশজ্ঞ ও গবেষকগণ উপস্থিত থেকে ভবিষ্যত ইংরেজি শিখন ও শিক্ষাদান বিষয়ে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন এবং একটি সুচিন্তিত কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার পথনির্দেশ করবেন অধ্যাপক এ.এম.এম. হামিদুর রহমান, ইংরেজি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনিস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |