বান্দরবানে থানচিতে সাঙ্গু নদী তীরে চরগুলো থেকে অবৈধভাবে মেশিন বসিয়ে হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। বালু খেকোদের দখলে সাঙ্গু নদীচর, কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই বালুখেকোরা প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে কয়েক মাস ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। সাঙ্গু নদীর চরে থেকে অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে মহোৎসবে বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা ও ইউপি সদস্য উচনু মারমা বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু বালু উত্তোলনই নয়, ক্ষতি সম্মুখীনের চরে পাশেই ফসলে জমির। জমি ব্যবহার করে চরে জমিতেই রেখেছে বালু স্তুুপ। সেখানে থেকে প্রতিদিন শত শত ফুট বালু ট্রাক যোগে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন বালু খেকোরা আর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গনে বিলীনে আশঙ্কায় নদী তীরের ফসলি জমিগুলো। থানচি উপজেলায় বলিপাড়া ইউনিয়নের কনাংজৈ পাড়া সংলগ্ন অক-থাইক্ষ্যং নামক স্থানে সাঙ্গু নদী তীরে চরে অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন প্রভাবশালী চক্র হওয়ায় অসহায় এলাকাবাসী। ফলে কোনোভাবেই সাঙ্গু নদী তীরের চরে থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন- স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বলিপাড়া ইউনিয়নের কনাংজৈ পাড়া পার্শ্ববর্তী অক-থাইংক্ষ্যং এলাকায় সাঙ্গু নদী তীরের চরে থেকে অবৈধভাবে মেশিনে মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে বালুখেকোরা। সেখানে বলিপাড়া ইউনিয়নের ডাকছৈ পাড়া বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য উচনু মারমা অধীনে ৪ জন শ্রমিক প্রায় এক মাস ধরে মেশিনে সাহায্যে বালু তোলার কাজ করছেন। দিনভর বিরতিহীনভাবে বালু উত্তোলন করেন শ্রমিকরা। সন্ধ্যা নামলেই রাতে আন্ধারে উত্তোলিত শত শত ফুট বালু ট্রাকের ভর্তি করে বিক্রি করতে বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে কাজের বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা জড়িত বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এদিকে সাঙ্গু নদী তীরে চরে পাশেই ফসলি জমি মালিক আপ্রুসে মারমা জানান, সাঙ্গু নদী তীরে জমাট থাকার বালুচর পাশেই আমার জমি। প্রথম দফায় উচনু মেম্বার এসে সাঙ্গু নদী তীরে চরে জমাট থাকার বালুগুলো উত্তোলনের জন্য খুঁজছিল, আমি দেননি। কয়েক সপ্তাহে পরে আবারও দ্বিতীয় দফায় আমার দোকানে এসে উচনু মেম্বারসহ বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা এসে জমাট থাকার বালু উত্তোলন করতে খোঁজেন, জমি ক্ষতি হবে না, কোথাও যেতে হবে না বলেছেন তাঁরা। যেহেতু মেম্বারসহ ইউপি চেয়ারম্যান বারবার খুঁজছেন, তাতে বাঁধা করা যাচ্ছে না আর। চরে থেকে উত্তোলন করে জমিতে বালুস্তুপ রাখছে তাঁরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বলিপাড়া ইউনিয়নের কনাংজৈ পাড়া সংলগ্নে থাইংক্ষ্যং মুখ এলাকায় সাঙ্গু নদী চরে থেকে ২৪হর্স ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিনে ১০ ইঞ্চি পাইপ যুক্ত করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। সেখানে হাজার ফুটের ২টি বালুস্তুপ করা হয়েছে। শ্রমিকদের থাকার ১টি তাবুও আছে। এবং কনাংজৈ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘেঁষে গাড়ি রাস্তা করে বালু বিক্রি কাজে ব্যবহার করেছে, বর্ষা মৌসুমে স্কুলটি বারান্দায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পাড়ার বাসিন্দা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ফলে বর্ষা মৌসুমে এলেই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অক-থাইক্ষ্যং নামক ঝিড়িতে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি নদী ভাঙনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই ব্যাপারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের একজন ইউপি মেম্বার উচনু মারমা বালু তোলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যবহার করার জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, বালু উত্তোলন করার ব্যাপারে প্রশাসনের অনুমতি নেই।
অন্যদিকে অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন কাজের জড়িত থাকার বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা মুঠোফোনে বারবার কল দিয়েও রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয়নি।
থানচি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা একেবারেই নিষিদ্ধ। অভিযানের মাধ্যমে যারা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।