ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাংলাদেশ হার এড়ায়নি, একের পর এক ‘চ্যালেঞ্জ’ টপকে লজ্জা এড়িয়েছে
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Saturday, 9 March, 2024, 11:01 PM

বাংলাদেশ হার এড়ায়নি, একের পর এক ‘চ্যালেঞ্জ’ টপকে লজ্জা এড়িয়েছে

বাংলাদেশ হার এড়ায়নি, একের পর এক ‘চ্যালেঞ্জ’ টপকে লজ্জা এড়িয়েছে

বাংলাদেশ যে হারছে, সেটা তো পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার পরই নিশ্চিত হয়ে গেছে। ১৭৫ রানের লক্ষ্যে নেমে একটা দল ৬ ওভারে ২৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেললে আর ম্যাচ জেতার আলোচনাই তো আসে না!

বরং বাংলাদেশ কত রানের মধ্যে অলআউট হয়ে যাবে, লজ্জার কোনো রেকর্ড-টেকর্ড হয়ে যায় কি না সেটাই ছিল আলোচনা। কিন্তু এক রিশাদ হোসেন ধংসস্তুপে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে রাখার মতো বিধ্বংসী ফিফটি করে ফেললেন। ৩০ বলে ৭ ছক্কায় ৫৩ রানের ইনিংসে আলোচনাটা ঘুরিয়ে দিয়ে উল্টো বাংলাদেশকে ‘সম্মানজনক’হারের দিকে নিয়ে গেলেন রিশাদ, যে পথে তাঁকে সাহায্য করেছেন শেখ মেহেদি আর তাসকিন আহমেদও।

এতে যা হলো, লজ্জার রেকর্ডে নাম লেখাতে হওয়ার একের পর এক ‘চ্যালেঞ্জ’ পেরিয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত অলআউট হলো ঠিকই, তবে দুই বল বাকি থাকার সময়ে অলআউট হওয়ার আগে করে ফেলল ১৪৬ রান! যে ম্যাচে লজ্জার রেকর্ড নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছিল, তাতে বাংলাদেশ হারল মাত্র ২৮ রানে। উন্নতি বটে!  

বাংলাদেশের ইনিংসের আর ব্যাখ্যা কী হতে পারে! এক নুয়ান থুসারার বলই তো সামলাতে পারল না বাংলাদেশ!

স্লিঙ্গিং অ্যাকশন তো শ্রীলঙ্কার নতুন অনেক পেসারের বোলিংয়েই দেখা যায়। এক লাসিথ মালিঙ্গাকেই অনুকরণ করে যাচ্ছেন সবাই। তবে কেউই মালিঙ্গা হতে পারছেন না। নুয়ান থুসারা হতে পারবেন কি না, সেটা সময় বলবে। তবে আপাতত আজ সিলেটে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি যখন প্রসঙ্গ, থুসারা আজ বাংলাদেশের সামনে দেখা দিলেন সাক্ষাৎ ‘মালিঙ্গা’ হয়ে।

চতুর্থ ওভারে সিরিজে প্রথমবার বোলিংয়ে এলেন, এসেই মুগ্ধতা ছড়ালেন। ওভারের প্রথম চার বলেই তিন উইকেট, পরপর তিন বলে – হ্যাটট্রিক! দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বোল্ড, পরের বলে বোল্ড তাওহীদ হৃদয়, আর ইনিংসে ২১ বল যেতে না যেতেই নামতে বাধ্য হওয়া মাহমুদউল্লাহ হলেন প্রথম বলে এলবিডাব্লিউ! হ্যাটট্রিক! মাত্রই অষ্টম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা থুসারার হ্যাটট্রিকেই নিশ্চিত হয়ে গেল, ১৭৫ রানের লক্ষ্যটা আর পার করা হচ্ছে না বাংলাদেশের।

কিন্তু থুসারা সেখানেই থামলে তো! পরের ওভারেই আবার উইকেট নিলেন, পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারের মধ্যে ২৫ রানেই বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেক হাওয়া! এই ম্যাচ আর জেতার তো প্রশ্নই আসে না।

বরং তখন আলোচনা লজ্জার সব রেকর্ড নিয়ে। টি-টোয়েন্টির এই একটা স্বস্তির দিক, এখানে বিশ্ব মানচিত্রে থাকা প্রায় সব দেশই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় বলে লজ্জার রেকর্ডগুলোও একটু স্বস্তি জোগায়। এই দেখুন না, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো দলের সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ডটা মাত্র ১০ রানের, সেটা কজন হুট করে বলে দিতে পারবেন! গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্পেনের বিপক্ষে আইল অব মানের ১০ রানে অলআউট হওয়ার সে রেকর্ড নিয়ে আর ভাবতে হয় না বাংলাদেশকে।

তা এসব ‘মিনোজ’-এর রেকর্ড নিয়ে ভাবার পর্যায়ে কি বাংলাদেশ আছে নাকি! বাংলাদেশকে ভাবতে হবে আরও উঁচু পর্যায়ের রেকর্ড নিয়ে। বিশ্বকাপে একটু-আধটু খেলেছে, এমন দলগুলোর মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা কত? ৩৯, এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামেই ২০১৪ সালে এই রানে অলআউট হয়েছিল নেদারল্যান্ডস। পাওয়ার প্লে শেষেও সিলেটের গ্যালারিতে শঙ্কা, ওই রেকর্ড অন্তত পেরোতে পারবে তো বাংলাদেশ?

ওই ‘চ্যালেঞ্জ’ যে বাংলাদেশ পেরোতে পারবে, সেটা নিয়ে সংশয় আরও বাড়িয়ে দিল মধ্যে নবম ওভারে হাসারাঙ্গার বোলিং। হাসারাঙ্গা এসেই জাকের আলী অনিককেও ফিরিয়ে দিলে শঙ্কাটা আরও গেঁথে বসে। বসবে না-ই বা কেন! ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অনিক প্যাভিলিয়নে ফেরার সময়ে বাংলাদেশ রান মাত্র ৩২, এক সৌম্য (১১) ছাড়া তখন পর্যন্ত কারও স্কোর দুই অঙ্কেই যায়নি!

ওই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে পাল্টা লড়াই শুরু হলো রিশাদ হোসেন আর শেখ মেহেদির। লড়াইটা মান বাঁচানোরই বটে, জয়ের স্বপ্ন কেউ দেখে থাকলে সেটা তাঁর অতিআশাবাদ হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা।

দুজনের ব্যাটে কিছুক্ষণ পরই প্রথম ‘চ্যালেঞ্জ’, অর্থাৎ নেদারল্যান্ডসের ৩৯ রান পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ। এরপর এল দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের মানের চ্যালেঞ্জ বের করতে হবে না! সে অনুসন্ধানে বের হলো দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটা – আইসিসির পূর্ণ সদস্যদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা কার? উত্তর দিল ক্রিকইনফোর পরিসংখ্যান – ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা অলআউট হয়েছিল ৪৫ রানে।

১১তম ওভারে রিশাদ প্রথম আগ্রাসন দেখাতেই সেই ‘চ্যালেঞ্জ’ও পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ। হাসারাঙ্গার ওভারে টানা দুই বলে দুই ছক্কা রিশাদের, তাতে বাংলাদেশের ফিফটিও হয়ে গেল।

এবার নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এল। চ্যালেঞ্জ বলুন বা শঙ্কা আর কী! বাংলাদেশের তুলনা তখন শুধুই বাংলাদেশের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা ৭০ রানের কিনা!

কিন্তু রিশাদ আর মেহেদির ব্যাটে সে চ্যালেঞ্জও যখন পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ, বোঝা গেল, এ ম্যাচে আর লজ্জায় মাখামাখি হতে হচ্ছে না বাংলাদেশকে। হার-জিত তো থাকবেই, কোনো একদিন বড় ব্যবধানেও হারতে হতে পারে কোনো দলকে, কিন্তু বাংলাদেশ এ বেলায় আর লজ্জা গায়ে মাখাল না।

চোখে লেগে থাকল মুগ্ধতা। রিশাদের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধতা। ১২তম ওভারে তিকসানাকে ছক্কা মেরেছিলেন, ১৪তম ওভারে শেখ মেহেদি (১৯) আউট হয়ে গেলেও বাংলাদেশের রানের গতি ধরে রেখেছে নেমেই তাসকিনের দুই চার। এরপর ১৫তম ওভারে তিকসানাকে তিনবার গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন রিশাদ!

তাতে ১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ১০০ পেরিয়ে গেল। রিশাদের রান ততক্ষণে ৪৫। ফিফটির প্রতীক্ষা সিলেটে। ১৬তম ওভারে বিনুরাকে ছক্কা মেরে সে অপেক্ষায় শেষ কী সুন্দরভাবেই না টানলেন রিশাদ। ২৬ বলেই ৭ ছক্কায় এসে গেল তাঁর ফিফটি! সিলেটে ততক্ষণে ইনিংস শুরুর হতাশা উধাও, রিশাদের একেকটি ছক্কা সেখানে প্রাণের জোয়ার নিয়ে এসেছে।

অবিশ্বাস্য কোনো জয়ের আশা উঁকিঝুঁকি হয়তো মেরেছে অনেকের মনে, তবে সেজন্য ক্রিকেটকে তাঁর অনিশ্চয়তার গৌরবের সবচেয়ে সুন্দর পাতাগুলোর একটি মেলে ধরতে হতো। সে আশার বেলুন চুপসে গেল ১৭তম ওভারেই, যখন তিকসানাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়লেন রিশাদ। তাঁর ৩০ বলে ৫৩ রানের চোখধাঁধানো ইনিংস শেষ হলো, গ্যালারিতে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকা লোকগুলোর চোখে তখন মুগ্ধতার পাশাপাশি আফসোস – ইশ, রিশাদ আরও কিছুক্ষণ থাকলে, বা রিশাদকে আর কেউ সঙ্গ দিতে পারলে!

তাসকিন এরপর দুটি ছক্কা মেরেছেন, মোস্তাফিজও একটি, শরীফুল সঙ্গ দিয়েছেন এক চারে। জয়ের আশা তো আর ছিল না, ওগুলো শুধু ব্যবধানটা কমিয়েছে আর কী! 

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status