শুধু সমরেশদার মুখটাই ভাসছে, লিখলেন ‘কালবেলা’র মাধবীলতা
লেখক সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুর খবরটা পেলেন ফোনে। মুম্বইতে শুটিয়ে ব্যস্ত এখন পাওলি দাম। তার মাঝেই কলম ধরলেন ‘কালবেলা’র মাধবীলতা।
নতুন সময় ডেস্ক
|
সমরেশদা আর নেই, তা ভাবতেই খুব অসুবিধা হচ্ছে! কলকাতা থেকে অনেক দূরে আছি। মুম্বইয়ে শুটিং করছি। কাজের মাঝে বাইরের অধিকাংশ খবরই কানে আসতে সময় নেয়। তাই বলে এমন ঘটনা ঘটে যাবে, ভাবতেও পারিনি। আনন্দবাজার অনলাইন থেকে ফোনটা পেয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। একসঙ্গে এত স্মৃতি ভেসে আসছে, কী বলব! গৌতমদার নেতৃত্বে ‘কালবেলা’ করার সময়েই সমরেশদার সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়। তার আগে ওঁর লেখা পড়েছি। মুগ্ধ ছিলাম। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে সমরেশদার সঙ্গে পরিচয় হওয়া ছিল আলাদাই অভিজ্ঞতা। সময়টা ২০০৬ সালের শেষের দিক হবে। ২০০৭-এ আমরা ‘কালবেলা’র শুটিং শুরু করি। তার আগে মাঝেমাঝেই সমরেশদার সঙ্গে আড্ডা হত। গৌতমদা থাকতেন, খুকুদিও থাকতেন। কাজ নিয়ে কথা তো হতই, কিন্তু সমরেশদা দারুণ আড্ডাবাজ ছিলেন। সিনেমা, সাহিত্য থেকে খাওয়াদাওয়া— সবেতেই সমান আগ্রহ। সব সময়ে মজার মজার গল্প বলতেন আর খুব হাসাতে পারতেন। ওপার বাংলার প্রতি ছিল খুব টান। আমি ফরিদপুরের মেয়ে শুনেই কত গল্প করেছিলেন। ওপারের রান্নাবান্না, মানুষজন— সবই ঢুকে পড়ত গল্পে। মাধবীলতা আমার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলা চলে। এর আগে এত বলশালী চরিত্রে কাজ করার দায়িত্ব সে ভাবে আসেনি। আমি খুবই যত্ন নিয়ে এগোচ্ছিলাম। তাই সেই চরিত্রের স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহও থাকত বেশি। তেমনই এক কথোপকথনের মাঝে সমরেশদা জানতে পারেন, আমি আসলে রসায়নের ছাত্রী। লেখাপড়ায় মন রয়েছে আমার। সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন, রসায়ন পড়ে হঠাৎ আমি অভিনয় করতে এলাম কেন। বলেছিলেন, রসায়নের শিক্ষা ব্যবহার করেই তো কাজ করতে পারতাম। আমি বলেছিলাম, অভিনয়েও তো রসায়নের ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমার রসায়নের জ্ঞান তো কাজেই লাগে। সে উত্তর শুনে দারুণ মজা পেয়েছিলেন সমরেশদা। পরে যখন দেখা হয়েছে, মাঝেমাঝেই আমার ওই উত্তরের কথা উল্লেখ করতেন। মাধবীলতা তো ভালবাসার প্রতীক। বাঙালির চোখে সেই চরিত্রের আলাদাই জায়গা রয়েছে। মাধবীলতা হয়ে ওঠার জন্য তাই আমিও নানা রকম ভাবে চেষ্টা করেছি। শেষে যখন ছবিটি তৈরি হল, সমরেশদা সেটি দেখে আমাকে খুব বড় সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার লেখার মাধবীলতা আর পর্দায় তোমার চরিত্রের মধ্যে কোনও পার্থক্য পাইনি। তুমি এটা কী করে করলে!’’ স্বয়ং লেখকের কাছ থেকে এ কথা শুনতে পাওয়া সত্যিই খুব বড় প্রাপ্তি। আমি পরে শীর্ষেন্দুদা, সুনীলদার লেখা চরিত্রেও অভিনয় করেছি। সমরেশদার ওই প্রশংসা আমাকে প্রতি পদে সাহস জুগিয়েছে। আর সেই ছবি দেখে সমরেশদা আবার বলেছিলেন, রসায়ন সম্পর্কে আমার বক্তব্যটা দারুণ ছিল। খুব সুন্দর সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল আমাদের। পরে অনেক সময়ে বলতেন এমনিই গল্প করতে যেতে। আমি ওঁর বাড়ি, অফিসে গিয়েছি আগে। তবে করোনার পর থেকে আর দেখাই হয়নি। অতিমারির এই সময়টায় যেমন সকলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, সমরেশদার সঙ্গেও খানিকটা তেমনই হয়। একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত যেমন সকলেরই কমে গিয়েছে আরকি। তবে আর যে কখনও দেখাই হবে না, তা তো ভাবতে পারিনি। এখনও পারছি না। শুটিংয়ের মাঝেই ফোনটা তুলেছিলাম। ভাবিনি এমন খবর আসবে। ফোনটা রাখার পর থেকে শুধু সমরেশদার মুখটাই ভাসছে চোখের সামনে। কাজ করতে করতে ওঁর কথাই মনে পড়ছে। কলকাতায় থাকলে অন্তত শেষ যাত্রার সময়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারতাম। এখান থেকে তো তা-ও সম্ভব নয়। মনটা বড্ড ভারী হয়ে আছে। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |