ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৯ কার্তিক ১৪৩২
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন
রাজনৈতিক সমঝোতায় বড় বাধা পারস্পরিক অবিশ্বাস
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 3 November, 2025, 10:38 AM

রাজনৈতিক সমঝোতায় বড় বাধা পারস্পরিক অবিশ্বাস

রাজনৈতিক সমঝোতায় বড় বাধা পারস্পরিক অবিশ্বাস

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি, গণভোটের সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নিলেও দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহের কারণে তা সফল হচ্ছে না। গতকাল রোববার পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিজ অবস্থানে অনড় ছিল। যদিও জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে। 

এই বৈঠকে আলোচনার পর সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি, গণভোটের সময় এবং নোট অব ডিসেন্ট বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের আগের বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য উপদেষ্টারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করেন। 

উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য গতকাল সমকালকে জানিয়েছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন বাতিল করে জোট শরিকের প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ পুনর্বহাল বিষয়েও আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিএনপি জোটের শরিকদের ধানের শীষ প্রতীক দিতে চায়। কিন্তু আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনীতে এ সুযোগ রাখা হয়নি।   

তিনজন উপদেষ্টা এবং সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দুইজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তারা জানিয়েছেন, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোটের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। এর মাধ্যমে বিএনপির প্রধানতম দাবি পূরণ করা হবে। আর গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট না রেখে জামায়াতের দাবি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

তারা জানিয়েছেন, বিএনপির আপত্তি থাকলেও সমঝোতার জন্য এবারের নির্বাচন থেকেই পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনে জোর দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। কারণ জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল উচ্চকক্ষে পিআরের দাবিতে অনড়। 

ঐকমত্য কমিশনের তৈরি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছে, আগামী সংসদ এটি ২৭০ দিনের মধ্যে পাস না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস বলে গণ্য হবে। বিএনপি বলছে, এভাবে সংসদকে বাধ্য করা যায় না। উপদেষ্টারা জানিয়েছেন, এ বাধ্যবাধকতা আদেশে থাকবে না। এটা হবে নির্দেশনামূলক। অর্থাৎ আদেশে বলা হবে– আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে  জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে। 

আস্থার অভাব, পাল্টাপাল্টি চলছে

একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কে আগে ছাড় দেবে, তা নিয়েও টানাপোড়েন আছে। সব পক্ষই মনে করছে, তারা ছাড় দিলেও অন্য পক্ষ পরে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে না। 

বিএনপি নেতারা উপদেষ্টাদের জানিয়েছেন, জামায়াতকে নিম্নকক্ষে পিআর এবং নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের দাবি আগে ছাড়তে হবে। 

জামায়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, বিএনপিকে আগে উচ্চকক্ষে পিআর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে। 

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সৃষ্ট সংকট নিরসনে বিএনপিকে আলোচনার আহ্বান জানালেও দলটিকে সংস্কারবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছেন। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একই দিন সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, একটা অত্যন্ত পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে– বিএনপি সংস্কার চায় না। 

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, বিএনপি সংস্কার ভন্ডুলের চেষ্টা করছে; আর জামায়াত নির্বাচন ভন্ডুল করতে চায়। তিনি বলেন, সাংবিধানিক আদেশে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কারের বাধ্যবাধকতা থাকলে গণভোটের সময় নিয়ে আপত্তি নেই এনসিপির। জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট হতে পারে। 

বিএনপি নেতারা গতকালও বলেছেন, নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি অযৌক্তিক। এটা নির্বাচন পেছানোর অপচেষ্টা। আর জামায়াত বলেছে, গণভোট নির্বাচনের আগেই হতে হবে। 

পিআর ও নোট অব ডিসেন্টে আটকা

সাত মাসের সংলাপের পর গত ১৭ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জুলাই সনদে সই করে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাব রয়েছে। ৬১টি প্রস্তাবেই কোনো না কোনো দলের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। ২২ মৌলিক সংস্কারের ৯টিসহ ১৫ প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। দলটি জানিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে এগুলো বাস্তবায়ন করবে না। 

বিএনপির দাবিতে স্বাক্ষরের আগের দিন সনদে নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বলা হয়, যে দল যে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে সেই অনুযায়ী সংস্কারের এখতিয়ার রাখবে। তবে ২৮ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে সুপারিশ করেছে, তাতে যুক্ত সনদে নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশের খসড়ায় তা রাখা হয়নি। 

দ্বিতীয় খসড়ার তপশিলে ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কমিশনের তৈরি দ্বিতীয় খসড়া আদেশ অনুয়ায়ী, গণভোট হবে আদেশ এবং এই তপশিলের ওপর। নোট অব ডিসেন্ট থাকবে না। 

সনদ স্বাক্ষরের পর এমন প্রস্তাবকে বিএনপি প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে জামায়াত ও এনসিপি নোট অব ডিসেন্টমুক্ত তপশিলের ওপর নভেম্বরে গণভোট চায়। একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা। 

গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না করে আগামী সংসদের সংবিধান সংস্কার পরিষদের জন্য নির্দেশনামূলক রাখার পরামর্শ দেন অধিকাংশ উপদেষ্টা। তারা সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এক দিনে আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা নয়, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির অভিমত দেন তারা। তবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে উপদেষ্টারা প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।   

রাজনৈতিক সমঝোতার দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টারা গত শনি ও রোববার রাতে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। একজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, আগামী নির্বাচনের পথে সরকার যাত্রা শুরু করেছে। রোববার প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নির্বাচনী যাত্রার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এটা এমন ইঙ্গিত দেয় যে, নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে এমন কোনো কাজ সরকার করবে না। 

একাধিক উপদেষ্টা জানান, টেকসই সংস্কার এবং সংবিধান সুরক্ষার জন্য পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনে প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ রয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট রেখে গণভোট করা সমীচীন হবে না। এ দুটি বিষয় সুরাহা করতে পারলেই সনদের বাস্তবায়ন যে রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে, তা মিটে যাবে। 

পরিষদের বৈঠক আজ 

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বিরোধের মধ্যে আজ বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের বিস্তারিত জানানো হবে। 

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সাধারণত বিভিন্ন অধ্যাদেশ ও নীতিমালা অনুমোদিত হলেও আজকের বিশেষ সভায় নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। ফলে শুধু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণভোটের দিন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া আরপিও সংশোধনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সব দাবি নিয়ে আলোচনা হবে।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল বলেছিলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কিংবা গণভোট নিয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। 

একজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, এনসিপি অনেকটাই নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত হয়তো রাজি করানো যাবে। কিন্তু বিএনপি পিআর ইস্যুতে ছাড় না দিলে সরকারের কাজ কঠিন হবে। 

সরকার এবং কমিশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ আদেশের খসড়ার ওপর কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়। ফলে উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হলেও আদেশ জারি করতে আরও কয়েক দিন লাগবে। জামায়াত ও এনসিপি আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদেশ জারির বিরোধিতা করলেও সরকার আইনি পথে হাঁটবে। 

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status