|
মরদেহ উদ্ধারের পেছনে ৬ বছর নিখোঁজ থাকার রহস্য, প্রশ্নে ঘেরা অতীত!
নতুন সময় প্রতিনিধি
|
![]() মরদেহ উদ্ধারের পেছনে ৬ বছর নিখোঁজ থাকার রহস্য, প্রশ্নে ঘেরা অতীত! মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আহাদের মরদেহ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নিজ গ্রামে পৈত্রিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার বড় ভাই শেখ আব্দুর নুর জানান, ফেনী থেকে মরদেহ নিয়ে গিয়ে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারের নেতৃত্বে পুলিশ মরদেহ শনাক্তের চেষ্টা চালায়। তখন মরদেহের পকেটে পাওয়া উত্তরা ব্যাংক ফেনী শহরের বিরিঞ্চি শাখার একটি চেক থেকে জানা যায়, মৃত ব্যক্তি মো. আবদুল আহাদ। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাব নম্বর যাচাই করে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। এদিকে, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উত্তরা ব্যাংকের বিরিঞ্চি শাখায় গিয়ে দেখা যায়, আবদুল আহাদ ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। তিনি এ হিসাবে নিজেকে ‘ফল বিক্রেতা’ হিসেবে পরিচয় দেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখান ‘দ্বিতীয় শ্রেণি পাস’। তবে পরিবারের বরাত ও গণমাধ্যমে প্রচারিত আগের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি সিলেট এমসি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তার এই দুটি পরিচয়ের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। ব্যাংক হিসেবে ২৫ মে ২০২৫-এ সর্বশেষ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। যদিও পরবর্তীতে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা উত্তোলনের তথ্যও পাওয়া গেছে। হিসাবটিতে উত্তরাধিকারী হিসেবে তিনি বড় মেয়ে বুশরা জান্নাতের নাম উল্লেখ করেন। পরিবারের তথ্যমতে, দ্বিতীয় মেয়ে তখনও মাতৃগর্ভে ছিল, আর সে সময়ই (২০১৯ সালে) তিনি নিখোঁজ হন। অপহরণের অভিযোগ ও রহস্য আবদুল আহাদ নিখোঁজ হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৭ মে তার ভাই শেখ আব্দুর নুর সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতে উল্লেখ ছিল, ২০১৯ সালের ২ মে আহাদ শেখঘাট এলাকার বাসা থেকে ব্যবসার কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি। পরে একই বছরের ১১ এপ্রিলের ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কমলগঞ্জ উপজেলার কুমড়াকাপন এলাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। এর আট মাস পর শেখ আব্দুর নুর বাদী হয়ে জামালপুর জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। আব্দুর নুর বলেন, ‘আহাদ নিখোঁজ হওয়ার পর অচেনা একটি নম্বর থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে দুইটি নম্বরে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছিল। এর পরপরই নম্বর দুটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সূত্র ধরে তদন্তে জামালপুরে কিছু তথ্য মেলে, তাই মামলাটি সেখানে করা হয়েছিল।’ ঠিকানা ও ফোন নম্বরেও অসঙ্গতি ফেনীতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিজের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সহদেবপুর এলাকা উল্লেখ করেছিলেন আহাদ। কিন্তু স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে সেখানে তার কোনো উপস্থিতি বা বসবাসের তথ্য মেলেনি। ফরমে থাকা তিনটি মোবাইল নম্বরের মধ্যে দুটি বন্ধ এবং একটি সিরাজগঞ্জের এক ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত বলে নিশ্চিত হয়েছে। ছাগলনাইয়ার স্থানীয় এক ব্যক্তি দাবি করেন, এবারের ঈদুল আজহায় আবদুল আহাদ স্থানীয় কসাইদের সঙ্গে কোরবানির পশু কাটার কাজে অংশ নিয়েছিলেন। তখন তাকে ‘অপ্রকৃতস্থ’ মনে হয়েছিল বলে জানান তিনি। ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বৃহস্পতিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, দেড় বছর ধরে তিনি ছাগলনাইয়ায় ধান কাটা, মাটি কাটা ও দিনমজুরির কাজ করতেন।’ পরিবারের দাবি ও পেশাগত বিভ্রান্তি আবদুল আহাদের বোন নাঈমা নাসরিন মনি ও ভাগিনা মোস্তাফিজুর রহমান শফিক জানান, তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পরবর্তীতে কাস্টমস বিভাগে কাজ করতেন। তবে কাস্টমস বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার চাকরিসংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি এখনও তদন্তাধীন। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও মোবাইল নম্বরগুলোর কললিস্ট বিশ্লেষণ করা হবে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
