ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১০ কার্তিক ১৪৩২
আবারও কী একপক্ষীয় নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Sunday, 26 October, 2025, 6:54 PM

আবারও কী একপক্ষীয় নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে?

আবারও কী একপক্ষীয় নির্বাচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে?

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে নাকি আবারও আওয়ামী লীগ আমলের তিনটি নির্বাচনের মতো এক পক্ষকে বাদ দিয়ে একটি নির্বাচন হবে- সেই আলোচনা রাজনৈতিক মহলে ক্রমশ বাড়ছে।

যদিও আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এখন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। ছোট ছোট অনেক দলই এখন এই দুই বলয়ে বিভক্ত।

তারপরেও ভোটের রাজনীতিতে এদের সবারই দীর্ঘকালীন পরিচিত হলো 'আওয়ামী লীগ বিরোধী' হিসেবেই।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন ও পুরনো কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে 'নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না', আবার কোনও দল বলছে 'বিচারের আগে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল' কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না'।

আর সেটি হলে সামনের নির্বাচনটিতে শুধুমাত্র 'আওয়ামী লীগ বিরোধীদেরই' দেখা যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।

কিন্তু এবার অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং এর সূত্র ধরে নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি বা ১৪ দলের বিষয়ে এমন কোনও সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।

একজন নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি সিলেটে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত। স্থগিত দল মানে তাদের সকল কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশ গ্রহণ করতে পারবে না'।

তবে 'নির্বাহী আদেশে দল নিষিদ্ধ করে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার' দাবির মধ্যে 'ভিন্ন কিছু' থাকতে পারে- এমন আশঙ্কার কথাও বলছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

প্রশ্ন উঠছে, এখন যারা আওয়ামী লীগ ও সমমনা সব দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখার দাবি করছে, শেষ মুহূর্তে তারাও যদি বিভিন্ন দাবি তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় তখন সেই নির্বাচনের কি হবে?

প্রসঙ্গত, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আশা প্রকাশ করেছেন যে, প্রার্থী হিসেবে না হলেও আওয়ামী লীগের ভোটারদের বড় অংশই নির্বাচনে ভোট দিতে আসবেন।

কোন দলের কী অবস্থান
বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতি দীর্ঘকাল ধরেই বিশ্লেষকদের কাছে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী- এই দুই ভাগে বিভক্ত। কিন্তু ২০২৪ সালের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টেছে কারণ দলটির কার্যক্রম ইতোমধ্যেই সরকার নিষিদ্ধ করেছে। তাদের নিবন্ধন ও প্রতীকও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেই ব্যক্তি জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এছাড়া সম্প্রতি মামলায় পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না - এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ছাড়াও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মামলা হয়েছে গত এক বছরে। অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন, আবার অনেকে আত্মগোপনে রয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে।

এখন আওয়ামী লীগ ছাড়াও তাদের সময়ে নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকেও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাইছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন শুক্রবার ঢাকায় দলীয় এক সভায় বলেছেন, 'আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যাবে না'।

সাবেক ডাকসু ভিপি নূরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ গত কয়েক মাস ধরেই জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার। দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন সম্প্রতি বলেছেন, 'বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ১৪ দল কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না'।

নির্বাচনে এই তিন দলের অংশ নেয়ার সুযোগের প্রশ্নে একই মনোভাব পোষণ করছে জামায়াতে ইসলামীও। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলছেন, চব্বিশের 'গণহত্যা'সহ ঘটনাবলীর পর এদের এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকা উচিত নয়।

"আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সরকার নিষিদ্ধ করেছে। একই সাথে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলও ফ্যাসিবাদ তৈরির জন্য দায়ী। তাদেরও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই,' বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

গত তিনটি সংসদ নির্বাচনই ছিলো একপক্ষীয়। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলো বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।  

তবে এ ক্ষেত্রে দেশের এ মুহূর্তের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অনেকটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। দলটি আগে থেকেই নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরোধিতা করছে।

দলটি বলেছে কোনও দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের মতো অভিযোগ থাকলে সেটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হোক।

"বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নির্ধারিত হোক। আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন," দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি বলেছেন।

ওদিকে আওয়ামী লীগ আমলে ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও ২৮টি নিবন্ধিত দল অংশ নিয়েছিলো। বিএনপি ও সমমনা সব দল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিলো।

এসব দল নির্বাচনের বাইরে থেকে গেলে এবং এখন যারা আওয়ামী লীগ ও তাদের সাথে নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিরোধিতা করছে শেষ মুহূর্তে তারাও 'নিজেদের সুবিধা মতো দাবি আদায়ের জন্য' নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কি হবে- সেই উদ্বেগ আছে বিএনপির ভেতরেও।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, "ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত না হলে বা আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ না হলে যে কোনো ব্যক্তির নির্বাচনের অধিকার আছে। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার হতে হবে। কিন্তু বাকী সবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকা উচিত। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাইলে সবাইকেই অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমার মনে হয় ঢালাওভাবে বিভিন্ন দলকে নিষিদ্ধ করার দাবির মধ্যে বিএনপিকে ফাঁদে ফেলার একটি কৌশল কাজ করছে"।

তার মতে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দল বা তাদের সমমনা দলগুলোকে বাদ দেয়ার পর বিএনপি বিরোধী দলগুলো যদি বিভিন্ন দাবি সামনে এনে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায় তখন দলটির (বিএনপির) আসলে কিছুই করার থাকবে না।

একপক্ষীয় নির্বাচনের আভাস?
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে দ্বিদলীয় বা বহুদলীয় গ্রহণযোগ্য হয়েছে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত, যদিও ৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন করে বিএনপি গণ আন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো।

১৯৯১ সালের আগে ও ২০০৮ সালের পরের সব নির্বাচন একপক্ষীয় হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ।

তার মতে, "আওয়ামী লীগ নিজেই বহুদলীয় নির্বাচনের সুযোগ ধ্বংস করেছে। জুলাই আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে যুদ্ধের মতো প্রতিযোগিতা। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে বাইরে রাখার কথা বলা হচ্ছে। আবার তারা (আওয়ামী লীগ) কামব্যাক করলেও তেমনটাই হবে"।

সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু অবশ্য বলছেন, নির্বাচন একতরফাই হবে কি-না সেটা এখনি বলা কঠিন, তবে নির্বাচন হতে হবে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক।

"যারা অন্যায় করেছে, দুর্নীতি করেছে তাদের শাস্তি হোক। কিন্তু কাউকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে বাধ্য করা যায় না। গত তিন নির্বাচন যথাযথ হয়নি বলেই আন্দোলন হলো। তার বিপরীতে স্বচ্ছ সুন্দর নির্বাচন হওয়াই হবে সঠিক জবাব," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ওদিকে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। সেই চিঠিতেও এসেছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ।

"অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথ বাধাগ্রস্ত করবে এবং বাংলাদেশি ভোটারদের বড় অংশকে কার্যত বঞ্চিত করবে," ওই চিঠিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন যে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বড় অংশই নির্বাচনে অংশ নেবে।

আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হলো কি-না সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে কি-না এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, " সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, স্বাভাবিক। আমাদের চিন্তা হলো- যারা ভোটারস আছে, পার্টিসিপেন্টস অব ভোটার, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই"।

আওয়ামী লীগের যে সমর্থকগোষ্ঠী তারা সবাই ভোটে আসবে, ভোট দেবে?-এমন প্রশ্নের জবাবে তখন তিনি বলেছিলেন, " আমি তো আশা করি তারা আসবে। এদের সমর্থকগোষ্ঠী আছে তো। তারা যে একেবারেই আসবে না এটা আমরা মনে করি না। লার্জ নম্বর অফ দেম পার্টিসিপেট ইন দ্য ইলেকশন, নট অ্যাজ অ্যা ক্যান্ডিডেট, বাট অ্যাজ এ ভোটার"।

কিন্তু কার্যক্রম নিষিদ্ধ অবস্থায় দলটির নেতা বা সমর্থকরা নির্বাচন বা ভোটে আদৌ অংশ নেবে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status