বাঘাইছড়ির মধ্যম পাড়ার সংযোগ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন; দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী
নোমাইনুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি
|
![]() বাঘাইছড়ির মধ্যম পাড়ার সংযোগ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন; দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটির বেশ কিছু অংশ বহুদিন ধরে কাঁচা ও নিচু অবস্থায় রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষাকালে সড়কের পাশের অংশ ভেঙে পড়ায় এখন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। সংযোগ সড়কের ভাঙা অংশের পূর্বপাশে দুটি পুরনো ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ভাঙা অংশের সঙ্গে লাগোয়া ব্রিজটি নড়বড়ে অবস্থায়, যার টেম্পার নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনো সময় ব্রিজটিও ধসে পড়লে পুরো এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে ভাঙা স্থানে দুটি কাঠের তক্তা বসিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও শ্রমজীবী মানুষ এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছেন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা—এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে বেশি সময় লাগবে না। বাইতুশ শরফ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হাফেজ আতিকুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন এই সড়ক দিয়েই শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে দুটি কাঠ বসিয়ে কোনোরকমে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকল্প পথে যেতে সময়ও লাগে দ্বিগুণ। এতে উপস্থিতি ও পড়ালেখায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত রাস্তার কাঁচা অংশ সংস্কার করে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করুক, যাতে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাই।” এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “রাস্তাটি অনেকদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। বাজারে যাওয়া বা অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়া এখন মহাবিপদ। বিষয়টি বারবার জানালেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি।” মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা মোঃ আবছার হোসেন বলেন, “সংযোগ সড়কটি তিন-চার মাস ধরে ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। আমি সরেজমিনে দেখে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশা করি প্রশাসন দ্রুত বিকল্প পথের ব্যবস্থা ও পরে স্থায়ীভাবে সড়কটি সংস্কার করবে। এটি শুধু একটি সড়ক নয়—মধ্যম পাড়া, মাস্টার পাড়া, মুসলিম ব্লকসহ অন্তত দুই হাজার মানুষের একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম। এখন তাদের পুরো জীবনযাত্রাই বাধাগ্রস্ত।” এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পৌরসভার অবহেলার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও কেউ সংস্কারে এগিয়ে আসেনি। অনেকে বলেন, “দুর্যোগের পর মেরামতের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও বাস্তবায়ন দেখা যায় না।” স্থানীয় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মাওলানা সুলতানা আহম্মদ, মাস্টার নূরমোহাম্মদ ও মাস্টার হুমায়ূন কবির মূসা যৌথভাবে বলেন, “মধ্যম পাড়া ও মাস্টার পাড়া সংযোগ সড়কটি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি। এটি সংস্কার না করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি প্রতিদিন বাড়বে। তাই দ্রুত স্থায়ী সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমেনা মারজান জানান, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন নোট করে রাখলাম। খুব দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে এলজিইডি ও পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে জরুরি সংস্কারকাজের উদ্যোগ নেবে।” বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার অনেক রাস্তাই এখনও কাঁচা বা আংশিক কাঁচা অবস্থায় রয়েছে। বর্ষাকালে এসব সড়কে চলাচল প্রায় অচল হয়ে যায়। এলাকাবাসীর মতে, প্রতি বছর বাজেট এলেও সংস্কারের কাজ স্থায়ী হয় না। ফলে বর্ষা মৌসুমে একের পর এক সড়ক ভাঙনের ঘটনা ঘটছে। মধ্যম পাড়া সংযোগ সড়কটি বাইতুশ শরফ মাদ্রাসা, কাচালং সরকারি ডিগ্রি কলেজসহ অন্তত আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সহজ পথ। এটি দীর্ঘদিন অচল থাকলে শিক্ষার পরিবেশ ও স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |