লালবাগে ‘ফ্রি ফায়ার’ গেম নিয়ে মারামারি, আহত ১
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() লালবাগে ‘ফ্রি ফায়ার’ গেম নিয়ে মারামারি, আহত ১ ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে লালবাগের আমলিগোলা বাজার এলাকায়। রাত দেড়টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় শহিদকে তার ছেলে মামুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। মামুন জানান, তিনি ও প্রতিবেশী মাহমুদউল্লাহর ছেলে (নাম জানা যায়নি) মোবাইলে ফ্রি ফায়ার খেলছিলেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের অভিভাবকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শহিদ মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত শহিদ লালবাগের আমলিগোলা কলারঘাট ইউসুফ আলীর বাড়িতে পরিবারসহ ভাড়া থাকেন। তার বাবার নাম মো. আব্দুর রশিদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, আহত অবস্থায় শহিদ নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। বিষয়টি লালবাগ থানায় জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য : অনলাইন গেম ‘ফ্রি ফায়ার’ ও ‘পাবজি’ নিয়ে দেশে একের পর এক সহিংস ঘটনার শিকার হচ্ছে তরুণরা। গত ৯ মে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে মাত্র ৫০০ টাকার জন্য ফ্রি ফায়ার ও পাবজিতে আসক্ত কিশোর আকসান মিয়া (১৩) তার সহপাঠী হোসেন মিয়াকে (১২) ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এর আগে ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নাটোরের লালপুরে মোবাইলে পাবজি খেলতে গিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় কলেজছাত্র ফারুক হোসেনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৮ জুন বগুড়ার শেরপুরে গেম আসক্তির কারণে আত্মহত্যা করে তরুণ রকি হোসেন। দেশে এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে হাইকোর্ট বাংলাদেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ সব ধরনের সহিংস অনলাইন গেমস তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই আদেশে বলা হয়, এসব গেম তরুণ সমাজকে সহিংসতার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল হাইকোর্ট আবারও এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সম্প্রতি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই গেমগুলোর প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রবি করপোরেট অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল অপারেটর রবি তাদের ব্র্যান্ড এয়ারটেল এর মাধ্যমে ‘এয়ারটেল গেমিং এরেনা’ নামে একটি জাতীয় ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট চালুর ঘোষণা দেয়। একই অনুষ্ঠানে তারা পাবজি মোবাইল এর সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বের ঘোষণা দেয়, যা তরুণদের মধ্যে এই সহিংস গেমগুলোকে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একইভাবে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনফিনিক্স তাদের জিটি সিরিজ গেমিং ফোনের প্রচারণায় ক্ষতিকর গেমস পাবজি ও ফ্রি ফায়ারকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করছে, তারা ই-স্পোর্টস সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি তরুণ সমাজকে সহিংসতা ও আসক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ নতুন সময়কে বলেন, আমাদের সংগঠন থেকে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দেশে পাবজি ও ফ্রী ফায়ার এর মত সহিংসতা সৃষ্টিকারী গেমগুলি বন্ধ করে দেয়ার। বিগত সরকার আমাদের দাবির মুখে কিছু সময়ের জন্য কিছু লিংক বন্ধ করলেও পুরো পুরি এই গেমগুলি বন্ধ করেনি। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা লক্ষ্য করলাম বর্তমান সরকার এই গেমগুলিকে বন্দনা করে বরং বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছে। মাদক এবং জুয়ার চাইতেও ভয়ংকর এ গেম দুটি বিগত সময়ে অনেকগুলি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সরকার এর কাছে আমরা আহ্বান জানাবো এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন এবং পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে গেমগুলি চিরতরে বন্ধ করে দিন। তরুণ সমাজকে প্রযুক্তির উন্নয়নের দিকে ধাবিত করুন সহিংসতা সৃষ্টি কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |