সোনিয়া বশির কবিরের এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের বিনিয়োগ ভঙ্গ: সংকটে ৬ স্টার্টআপ
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() সোনিয়া বশির কবিরের এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের বিনিয়োগ ভঙ্গ: সংকটে ৬ স্টার্টআপ স্টার্টআপগুলো বুধবার (১ অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতিতে অভিযোগ করে জানায়, এসবিকে টেক ভেঞ্চারস গত এক বছর ধরে কোনো অর্থ ছাড়েনি। বরং হঠাৎ করেই প্রতিষ্ঠানটি কার্যত ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। অথচ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে তারা ইতোমধ্যে ইকুইটি হস্তান্তর করেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের পর এসবিকে টেক ভেঞ্চারস সক্রিয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, তারা বিভিন্ন স্টার্টআপে মোট ৭ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু আজ অবধি এক টাকাও তারা ছাড়েনি। মার্কোপোলোর প্রতিষ্ঠাতা তাসফিয়া তাসবিন অভিযোগ করে গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে, সোনিয়া বশির কবির সব স্টার্টআপকে ধ্বংস করার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। এই বিনিয়োগ ঘোষণাগুলো ছিল কেবল প্রচারমূলক কৌশল।” ফসলের প্রতিষ্ঠাতা সাকিব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “এক বছর ধরে এক পয়সাও ছাড়তে না পারা দায়িত্বহীনতা ও অপেশাদারিত্বের পরিচায়ক। এতে শুধু আমাদের নয়, পুরো স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের ওপর মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” অন্য উদ্যোক্তারাও গণমাধ্যমকে বলেন, এসবিকে টেকের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তাদের কার্যক্রম ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। যারা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন, তারাও পিছিয়ে যাচ্ছেন। এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে নেওয়া ১৫ কোটি টাকা এবং ‘ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড’-এর কাছ থেকে নেওয়া ১২ কোটি টাকা এখনো ফেরত দেয়নি। এ ছাড়া আরও নানা আর্থিক অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটি তদন্তের মুখোমুখি। সূত্র বলছে, স্টার্টআপগুলোকে মৌখিক আশ্বাস ও চুক্তির ভিত্তিতে কার্যক্রম সম্প্রসারণে উৎসাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ না আসায় এখন তারা টিকে থাকার লড়াই করছে। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, আবার কেউ কেউ কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যেমন কঠিন, তেমনি আস্থা ধরে রাখা আরও কঠিন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ পুরো খাতের সুনাম নষ্ট করছে। ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের ঘটনায় আরও সতর্ক হয়ে যেতে পারেন। উদ্যোক্তাদের মতে, এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দায় থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সোনিয়া বশির কবির কোনোভাবেই মুক্তি পাবেন না। তাদের মতে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী এবং এই ব্যর্থতা শুধু উদ্যোক্তাদের নয়, দেশের স্টার্টআপ খাতের জন্যও বড় ক্ষতি বয়ে এনেছে। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ নতুন সময়কে বলেন, এসবিকে টেক ভেঞ্চারসের মতো প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ শুধু কয়েকটি স্টার্টআপের ক্ষতি নয়, এটি পুরো উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেমের জন্য বড় আঘাত। সরকার একদিকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে, আর অন্যদিকে এ ধরনের প্রতারণা তাদের স্বপ্নকে ভেঙে দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উচিত দ্রুত তদন্ত করে সোনিয়া বশির কবিরসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। নইলে ভবিষ্যতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য এটি অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়াবে। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |