ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫ ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
ইরানের সাফল্য ও বিজয় সুস্পষ্ট
মেহেদী হাসান পলাশ
প্রকাশ: Thursday, 26 June, 2025, 3:14 PM

ইরানের সাফল্য ও বিজয় সুস্পষ্ট

ইরানের সাফল্য ও বিজয় সুস্পষ্ট

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলার মূল লক্ষ্য ছিল তাদের পরমাণু কার্যক্রমকে কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে দেয়া। এখন মার্কিনী নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট হচ্ছে, সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের হামলায় ইরানের পরমাণু কার্যক্রমকে মাত্র কয়েক মাসের জন্য, হয়তো মাস তিনেকের জন্য পিছিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে।

ব্যর্থতা ঢাকতে পশ্চিমারা প্রচার করছে যে, আমেরিকা ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার পূর্বে তাদেরকে নোটিশ করেছিল এবং ইরান সেখান থেকে সেনসিটিভ সব কিছু সরিয়ে নিয়েছিল। কয়েকদিন পূর্বে আমি আমার একটি লেখায় লিখে ছিলাম, যুদ্ধ শেষ করার পন্থা হিসেবে আমেরিকা হয়তো ইরানি পরমাণু স্থাপনায় নামকাওয়াস্তে হামলা করে ঘোষণা দিতে পারে যে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে, এবার যুদ্ধ থামাও। কেননা এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থামানোর নামে। সে ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট ফায়সালা না করে এই যুদ্ধ থেকে সরে আসার কোন উপায় ট্রাম্পের ছিল না। বাস্তবেও তাই ঘটে। তবে এটা নয় যে, আমেরিকা ইরানের পরমাণু স্থাপনায় কোন ডামি হামলা করেছে, বা লোক দেখানো হামলা করেছে। 

প্রকৃত ঘটনা ঘটনা বুঝতে হলে আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে, ইরান কেন তাদের পারমাণবিক স্থাপনা ও মিসাইল ভান্ডার এত গভীর ভূগর্ভে তৈরি করেছে। শুধু পরমাণু স্থাপনা বা প্রতিরক্ষা স্থাপনা নয় ইরান সংরক্ষণ করতে চায় এমন স্থাপনা গুলোও ভূগর্ভে তৈরি করেছে। আমি নিজে দেখেছি গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরী ও আর্কাইভ এর মত ভবনগুলো তারা ভূগর্ভে স্থাপন করেছে। এর কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তারা উত্তর দিয়েছে, ইসরাইলি মিসাইল থেকে সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা।

বিপ্লবের পর থেকে ইরান নিশ্চিতভাবেই জানতো ও বিশ্বাস করত তাদের এই সকল পরমাণু স্থাপনা ও মিসাইল ‌ ভান্ডারের উপর কোন না কোন দিন ইসরাইল ও আমেরিকানরা মিসাইল ও বোমা ফেলবে। এ কারণে তারা তাদের সকল সুরক্ষা স্থাপনা মাটির অনেক গভীরে, এমনকি পাহাড়ের নিচে স্থাপন করেছে। যখন এই পরিকল্পনা তারা করেছে তখন তাদের মাথায় আমেরিকা ও ইসরাইলের পারমাণবিক বোমা থেকে শুরু করে বি-৫২ বিমান এবং মার্কিন ৩০ হাজার পাউন্ডের বাংকার বাস্টার বোমাগুলো বিবেচনায় ছিল ‌। ফলে তাদের সুরক্ষা পরিকল্পনা গুলো এ সমস্ত হামলা প্রোটেক্টেড করেই তৈরি করা হয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকেই ইরান প্রতিদিন এ নিয়ে ভেবেছে এবং সুরক্ষার উপায় বের করেছে। পারমাণবিক বোমার আঘাত কী রকম হতে পারে, ওই বাংকার বাস্টার বোমা কতটুকু গভীরে যেতে পারে এগুলো বিবেচনা করেই এই স্থাপনা গুলো তৈরি করা। ফলে ইজরাইল ও আমেরিকান কোন অস্ত্রের পক্ষে সেগুলো ধ্বংস করা সম্ভব ছিল না। এটাই সত্য। 

আরো একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, ইসরাইল ব্যাপকভাবে বিমান হামলা করেও ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও মিজাইল রিজার্ভ নিঃশেষ করতে পারেনি। কারণ ইরান ইসরাইলের সক্ষমতার কথা জানতো। সে কারণে কোন একটি দুটি নির্দিষ্ট জায়গায় এই রিজার্ভার গড়ে না তুলে সমগ্র ইরান ছড়িয়ে অসংখ্য রিজার্ভার গড়ে তুলেছে। বড় ক্যান্টনমেন্টের পরিবর্তে ছোট ছোট হাজার হাজার ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তুলেছে। কেননা তারা জানতো শত্রুরা যদি আক্রমণ করে কয়েকশত ক্যান্টনমেন্ট ধ্বংস করে দেয় তবুও যেন আরো সহজল্যাধিক ক্যান্টনমেন্ট দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ইরানের প্রতিরক্ষায়। বাস্তবে তাই হয়েছে। 

হামলা শুরুর পূর্বে ইসরাইল দুটি লক্ষ নির্ধারণ করেছিল: এক. পারমাণবিক সক্ষমতা পিছিয়ে দেয়া, দুই. শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন। দুটোতেই তারা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। 

উল্লিখিত আলোচনায় আমরা দেখেছি, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার খুব বেশি ক্ষতি করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ইরান আইএইএ থেকে বেরিয়ে গেছে। এখন যদি ইরান পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলে এটা দেখার কেউ থাকবে না। এবং ইরানের উচিত অতি দ্রুত সেটা বানিয়ে ফেলা। যতদিন সেটা বানাবে না বা বানাতে দেরি করবে ততদিন ইরানকে এই থ্রেটের মুখে থাকতে হবে। 

অন্যদিকে শাসন ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প অনেক আলোচনা করেছে। প্রবাসে দীর্ঘদিন আলোচনার আড়ালে থাকা রাজ পরিবারের সদস্যকে সামনে এনে চাপ সৃষ্টির কৌশল অবলম্বন করেছে। মিডিয়া দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়েছে। আমি তখনই বলেছিলাম, এই কাজটি ওরা করবে না। কেননা বর্তমান শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটলে মুসলিম বিশ্বে শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব অনেকটা এক পেশে হয়ে যাবে। এটা কখনোই ওরা চাইতে পারে না। বাস্তবেও সেটাই ঘটেছে। মিডিয়ায় চেহারা দেখানো ছাড়া রাজ পরিবারের কপালে কিছুই জোটেনি। বরং ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা আরো জনপ্রিয় ও শক্তিশালী হয়েছে। আমেরিকা ও ইসরাইলকে ঠেকিয়ে দিয়ে তারা জনগণের সামনে দেখানোর সুযোগ পেয়েছে যে ইরানের সুরক্ষায় বর্তমান শাসনব্যবস্থা কতটা কার্যকর। তারা এখন জনগণকে বলতে পারবে, আমরা এতদিন যা বলেছি, তা সঠিক বলেছি এবং সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছি। কিন্তু নেতানিয়াহু এই এই বলার জায়গায় নেই। তিনি তার দেশের আকাশকে যেভাবে দুর্ভেদ্য বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন সেটা তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। এতে এই শাসন ব্যবস্থা আরো বহু বছরের জন্য টিকে গেল। 

যুদ্ধ আগে শুরু না করা এবং যুদ্ধ আগে শেষ করা ও যুদ্ধ বিরতি মেনে চলার মধ্য দিয়ে ইরান বিশ্বে নিজেকে শান্তিবাদী দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনকি ইরানের এই অবস্থানের কারণে ট্রাম্প নিজে অনেকটা ইরানের পক্ষে দাঁড়িয়ে ইসরাইলকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে বাধ্য হয়েছে। ইরানের ক্ষয়ক্ষতি এখন বিশ্ববাসীর কাছে সহানুভূতির দৃষ্টিতে বিবেচিত হবে। বিশ্বের অনেক দেশ ইরানকে সহায়তায় এগিয়ে আসবে। ইরানের অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ায় অনেকেই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে এই অস্ত্রের দিকে ধাবিত হবে। ইরানের উপর ইসরাইল, আমেরিকা, পশ্চিমা ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কিছুটা অকার্যকর হয়ে পড়বে। আজকে ইরানিরা যখন তেহরানের আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করে বিজয়ী উদযাপন করছে, ইজরাইলিরা তখন সরকারি ক্ষতিপূরণের ফরম পূরণ করতে ব্যস্ত।
এটা ইরানের বিরাট সাফল্য ও সুস্পষ্ট বিজয়। 

লেখক: চেয়ারম্যান, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও সম্পাদক, পার্বত্যনিউজ।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status