ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৫ কার্তিক ১৪৩১
ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড
এম এ আজিজ, নাগাল্যান্ড থেকে ফিরে
প্রকাশ: Wednesday, 9 October, 2024, 1:41 PM
সর্বশেষ আপডেট: Wednesday, 9 October, 2024, 1:55 PM

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

নাগাল্যান্ড যার সৌন্দর্য কল্পনাকেও হার মানায়। ছবির চেয়েও সুন্দর এই পাহাড়ি রাজ্যটি।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নাগাল্যান্ড পর্যটনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। যেমন দুর্গম পাহাড়ি পথ তেমনই নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্য
নাগাল্যান্ড। 

সবুজ পাহাড়, দিগন্ত বিস্তৃত গাছপালায় ভরা উপত্যকা, দুধসাদা মেঘ ফেনার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে  উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। পাহাড়, কুয়াশা, মেঘের সৌন্দর্য ছাপিয়েও আদিবাসীদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, তাদের ইতিহাস জানার ইচ্ছা চেপে বসল আমায়।

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

হিংসা, সংঘর্ষের জেরে নাগাল্যান্ড এখন রক্তাক্ত। কিন্তু উত্তর-পূর্বের এই ছোট্টো রাজ্যটি আদতে কিন্তু হাসিখুশি, শান্ত, নির্মল এবং চিরসবুজ। প্রকৃতিদেবী যেন সবুজ গালিচা পেতে দিয়েছে গোটা রাজ্যজুড়ে। পাহাড়ি এই গ্রামের বাস করেন বহু আদিবাসী। তাঁদের জীবনযাত্রা, উৎসব পর্যটকদের কাছে বরাবরই আকর্ষণীয়। সারা বছরই এখানকার জলবায়ু মনোরম। বিশেষ করে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নাগাল্যান্ড পর্যটনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। যেমন দুর্গম পাহাড়ি পথ তেমনই নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্য।

নাগাল্যান্ড ঘুরতে চাইলে এই কয়েকটি জায়গায় যেতেই হবে।

কোহিমা :নাগাল্যান্ডের ইতিহাসের অনেকটাই এই  কোহিমার সঙ্গেই জড়িত।

নাগাল্যান্ডের অনেকে মনে করেন, একাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে নাগাদের পূর্বপুরুষেরা চিনের ইউনান প্রদেশ থেকে পাটকি এলাকা অতিক্রম করে 'মাখেল'-এ এসে বসতি স্থাপন করে। ১৮৩২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মণিপুর রাজ্যের ভিতর দিয়ে 'আঙ্গামি' অঞ্চলে এসে উপস্থিত হয় এবং ১৮৬৬ সালে 'নাগা হিলস' জেলা গঠন করে আসামের সঙ্গে জুড়ে দেয়। ব্রিটিশ ডেপুটি কমিশনার পজি-র (১৯৩৭-৪৭) তত্ত্বাধানে ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে গঠন করা হয় 'নাগা হিলস ডিস্ট্রিক্ট ট্রাইবাল কাউন্সিল'। এটি ১৯৪৬ সালে 'ওখা' তে নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল (এনএনসি) নামে পরিচিত হয়। কিন্তু ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে গেলে নাগা হিলস আর ভারতের অংশ থাকবে না, এমন খবর ছড়াতে শুরু করে। দীর্ঘ আলোচনার পরে ১৯৪৭ সালে কোহিমাতে 'বরদোলই সাব কমিটি' তৈরি করা হয়। ওই বছরই  ১৪ অগস্ট নাগাল্যান্ডকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় চরম অশান্তি। নাগাল্যান্ডকে 'ডিসটার্ব এরিয়া' ঘোষণা করে ভারতীয় সেনা সেখানে ঢোকে। গ্রামের পর গ্রামজুড়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বহু চড়াই-উতরাই, রক্তাক্ত দিন পেরিয়ে ১৯৬৩ সালে বর্তমান নাগাল্যান্ড তৈরি হয়।

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

কোহিমা স্টেট মিউজিয়ামে গেলে আদিবাসীদের সংস্কৃতির নিদর্শন যেমন পাওয়া যায়, তেমনই দেখা যায় ঐতিহাসিক নাগা অস্ত্রশস্ত্র। ব্রিটিশ আমলের অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার দীর্ঘ লড়াইয়ের বহু নিদর্শন রয়েছে এই মিউজিয়ামে।

ডিমাপুর : নাগাল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর ও অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র বলা হয় ডিমাপুরকে। ডিমাপুর টাওয়ার খুব বিখ্যাত। প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় এই টাওয়ার নানা আলোয় সাজানো হয়। পর্যটকদের থাকার মতো হোটেল, লজ সবই রয়েছে ডিমাপুরে। ১৯০৩ সালে এই ডিমাপুরেই নাগাল্যান্ডের প্রথম রেলস্টেশন ছিল। এখন দ্বিতীয় রেলস্টেশন পেয়েছে নাগাল্যান্ড। ডিমাপুরের কাছেই এই স্টেশনের নাম শোখুভি। নাগাল্যান্ড রাজ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই স্টেশন। 

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

জুকু ভ্যালি নাগাল্যান্ড এবং মণিপুর রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত জুকু উপত্যকা। পূর্ব-ভারতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দু হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতায় জুকু উপত্যকা তার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য বিখ্যাত। শোনা যায়, এখানে যে ফুল ফোটে তা ভারতের অন্য কোথাও নাকি দেখা যায় না।

এই জুকু ভ্যালির ইতিহাসও বেশ আকর্ষণীয়। মনে করা হত, আদিম মানুষের আবাসস্থল ছিল জুকু। এখন যদিও জুকু ভ্যালি খুব জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মরসুমি ফুল, গাছপালা আর উঁচু পাহাড়ের সৌন্দর্যে ঘেরা এই উপত্যকা। নাগাল্যান্ডের বিশ্বেমা গ্রামের পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে এখানে সহজেই যাওয়া যায়।

জুকু ভ্যালি যাওয়ার দুটো পয়েন্ট আছে-- ভিসামা আর জাখামা। কিসিমা গ্রাম থেকে ভিসামা যেতে মোটামুটি ৪৫ মিনিট সময় লাগে। ভিসামা থেকে জুকু ভ্যালি যাওয়ার পারমিট নিতে হয়। পারমিট নিয়ে আরও ৪০ মিনিট গেলে ভিসামা বেস পয়েন্ট। লম্বা, ঘন গাছের সারির মধ্যে দিয়ে হাঁটা পথ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, দূরে ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে।

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

জাপফু পাহাড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,০৪৮ মিটার উঁচুতে ঘন বাঁশ ঝোপ দিয়ে ঘেরা। জাপফু পাহাড় ট্রেক করা বেশ কঠিন ও পরিশ্রমের। কিন্তু এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাষায় বলার নয়। রাজধানী শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এর চূড়া থেকে গোটা কোহিমা শহর দেখা যায়। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস জাপফু চূড়া সফরের সেরা সময়। গরম পড়তেই পাহাড় চূড়ায় রডোডেনড্রন ফুলের রঙিন সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করে। ১৩০ ফুট উচ্চতার বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা রডোডেনড্রন গাছ এখানেই পাওয়া যায়।

ছবির মতো সুন্দর গ্রাম তুওফেমা। পর্যটকরা নাগাল্যান্ড গেলে এই গ্রামে একটা দিন অন্তত কাটান। এখানকার আদিবাসীদের রান্না  খুবই ভাল। মোককচং জেলার তুলি শহরের নির্মল পরিবেশ স্ট্রেস কাটানোর জন্য আদর্শ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১,১৪৮ ফুট। মেলাক নদীর ডান তীরে অবস্থিত তুলি শহরে পাহাড়, নদী মুগ্ধ করবে।

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

খোনোমা ভিল্যাজ নাগাল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে খোনোমা গেট। ব্রিটিশ অনুপ্রবেশকারীদের থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এই বিপুল দ্বার বানিয়েছিলেন তাঁরা। রাজধানী  কোহিমা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম খোনোমা। এখানে ২০টি ভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ হয়। এখান থেকে ধান বিভিন্ন রাজ্যে রফতানি করা হয়।

   

নাগিনিমোরা : নাগাল্যান্ড গেলে নাগিনিমোরা একবার যেতেই হবে। নাগা রানি মোরার নামে এই জায়গার নামকরণ হয়েছে। 

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

নাগিনিমোরা কথার অর্থ হল 'রানির কবরস্থান।' শপিং করতে যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের জন্য নাগিনিমোরা আদর্শ জায়গা। নাগাল্যান্ডের স্থানীয় পোশাক থেকে হাতের কাজের নানা জিনিস, বাঁশ ও বেতের আসবাব, হাতে তৈরি অলঙ্কার, বাঁশের নানা জিনিস, মধু ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়।



পর্যটকদের কাছে অবশ্যই থাকতে হবে পরিচয় পত্র।
নাগাল্যান্ডে ঢুকতে গেলে লাগে ইনার পারমিট আই এল পি লাগে। দেশি ও বিদেশি সব পর্যটকদের জন্যই ইনার পারমিট বাধ্যতামূলক। অনলাইনে এটির জন্য আবেদন করতে হয়।

নাগাল্যান্ডে ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর অবধি চলে হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল। মার্চ-এপ্রিলে হয় ফুলের উৎসব।

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

ছবির চেয়েও সুন্দর নাগাল্যান্ড

আমরা গিয়েছিলাম সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। ত্রিপুরা থেকে ট্রেনে করে লামডিং তারপর ডিমাপুর হয়ে রাজধানী কোহিমা। ত্রিপুরা থেকে ডিমাপুর বিমানেও যাওয়া যায় তারপর সড়ক পথে কোহিমা। তবে ট্রেন দিয়ে যাবায় সময় রাস্তার যে অপূর্ব সৌন্দর্য সেটা উপভোগ করা যাবেনা।

আরেকটি মজার বিষয় হলো নাগাদের বিচিত্র সব খাবার। যেখানে বাদ যায়না সাপ ব্যাঙ পোকা মাকড় কুকুর শুকর  কোনোকিছুই। রাস্তায় বিক্রি হয় কুকুরের নাড়িভুড়ি পোকা মাকড় আর নাম না জানা আরো অনেক প্রাণী শাক সবজি ও ফলমূল। আমরা ছিলাম খোনোমা ভিলেজে ওখানে প্রবেশ ফি ভারতীয়দের জন্য ফ্রী আর বিদেশীদের জন্য ১০০ টাকা আর গাইড নিতে হবে বাধ্যতামুলক। ছবির মত শান্ত ভদ্র আর শতভাগ শিক্ষিত মানুষের গ্রামটি দেখলে প্রাণ জুড়াবে যে কারো।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status