গাজীপুরে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন, মহাসড়ক অবরোধে জনদূর্ভোগ
ফাহিম ফরহাদ, গাজীপুর
প্রকাশ: Monday, 23 September, 2024, 3:35 PM
গাজীপুরে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষে আন্দোলন কর্মসূচী পালন করছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টঙ্গী ও বাঘের বাজার এলাকায় তিনটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষে এ আন্দোলন দেখা দিয়েছে। সোমবার (২৩সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে এ আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা।
এসময় কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক কিছু সময় অবরোধ করে রাখেন। এতে যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যৌথ ভাবে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করেন। তাৎক্ষণিক আটক শ্রমিকদের নাম পরিচয় জানা যায় নি।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস বাৎসরিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন অসন্তোষের জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেন।
কিন্তু বন্ধ ঘোষণার পরেও আজ সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কারখানা বন্ধ থাকার পরও কারখানার ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, সংশ্লীষ্ট থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এদিকে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীর পশ্চিম থানার এরশাদ নগরের খাঁ পাড়া এলাকায় অবস্থিত সিজন ড্রেসেস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সোমবার সকাল ৭টায় কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী-সহ মহাসড়কে চলাচলকারী চলাচলকারী সাধারণ মানুষজন। এসময় গাড়ি না পেয়ে অনেকে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে রওনা হতেও দেখা গেছে। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে দীর্ঘসময় চেষ্টা করে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়।
সড়ক অবরোধ করা গার্মেন্টস শ্রমিকেরা বলেন, তিন মাস ধরে গার্মেন্টসের মালিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে না। বাকি রয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ওভারটাইমের পাওনা, এমনকি তিন বছরের ছুটির টাকাও। বারবার আশ্বাস দিয়েও তারা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন বলেও শ্রমিকদের অভিযোগ। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাঁদের। পরিবারপরিজন নিয়ে অনেককেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে বলেও শ্রমিকদের অভিযোগ।
এদিকে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেনরিফিউ গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। সোমবার সকালে শ্রমিকরা ১২ দফা দাবি জানিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিল-সহ ৮টি দাবি মেনে নেয়। ১২দফা দাবির মধ্যে ৮টি দাবি মেনে নিলেও বাকি চারটি দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন।
এতে সকাল থেকেই মহাসড়কের উভয় অংশের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার বাস-সহ ব্যক্তিগত যান আঞ্চলিক সড়ক হয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। পরে দাবি মানার আশ্বাস পেয়ে দুপুর ১২ টার দিকে শ্রমিকেরা সড়ক থেকে চলে যান। এছারা ঢাকার আশুলিয়া এলাকাতেও বিভিন্ন পোষাক কারখানায় বিভিন্ন দাবীতে শ্রমিক অসন্তোষে আন্দোলনের খবর পাওয়া গেছে।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বাঘের বাজার জোনের পরিদর্শক সুমন বলেন, সকাল থেকে শ্রমিকেরা মহাসড়কে আন্দোলন করছেন। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রমিকদের বলা হয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে মালিক পক্ষের যোগাযোগের চেষ্টা চলছে, আলোচনায় সমাধানের পথ খোঁজা হবে।