পানির অপর নাম জীবন। জীব জগতের অস্তিত্ব রক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে পানি। নদীমার্তৃক বাংলাদেশের দক্ষিণেই বঙ্গোপসাগর। জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজার নদীর দেশে পানি নিয়ে দুর্ভাবনার কথা নয়। কিন্তু পানি সংকটে পড়ছে দেশ। শত শত নদ-নদী শুকিয়ে গেছে। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বড় নদীগুলোর অনেক স্পটে হাঁটুপানি। পদ্মার উজানে ভারত ফারাক্কায় বাঁধ এবং তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেয়া নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার পথে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনে রাজধানীর পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে সারাদেশে ১ হাজার ২৭২টি পর্যবেক্ষণ কূপের মাধ্যমে পানির পরিমাণ ও গুণমান পর্যবেক্ষণ করছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ২ মিটার (প্রায় ৭ ফুট) করে নেমে যাচ্ছে। সংস্থাটি পানি স্তর নিচে নামার কারণ হিসেবে বলছে, একদিকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, অন্যদিকে ঢাকাকে ইট-পাথর দিয়ে ঢেকে দেয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে- এভাবে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে শুধু পানি সংকট সমস্যা নয়, সঙ্গে ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকিও বাড়ছে।
জানতে চাইলে ভূগর্ভস্থ পানি বিশেষজ্ঞ এবং পাউবো পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ঢাকার মাটির নিচে একটি বড় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। মাটির নিচে হচ্ছে বলে আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা বিপর্যয়ের ধারণাই পাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন আহমেদ সতর্ক করে বলেন, কাদামাটির স্তরগুলো বালির স্তরগুলোর ঠিক বিপরীত আচরণ করে। কাদার স্তরে (যার পুরুত্ব ৬০ ফুট পর্যন্ত) কোন অবস্থায় ডিপ্রেশন তৈরি হলে ভূমিধস হতে পারে এবং ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
এখন চৈত্র মাসের ৮ তারিখ। এর মধ্যে নদ-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। তিস্তা, যমুনা, পদ্মা, করতোয়ার অনেক স্পট দিয়ে পায়ে হেটে নদী পাড় হওয়া যায়। নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্তরের পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে।
পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজানে ভারত তিস্তা, পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে নেয়ায় নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্তরের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার একটি কারণ। এ ছাড়াও অনাবৃষ্টি, খরা, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে ৯ থেকে ১০ মাসই বাংলাদেশের সব নদী, খাল, বিল শুষ্ক থাকছে। কৃষি কাজের জন্য কৃষকদের পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। গত কয়েক বছরের আবহাওয়ার রিপোর্টে দেখা যায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রতি বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসছে। আগে উত্তরাঞ্চলে গড়ে প্রতি বছর ১৫শ’ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টিপাত হলেও এখন তা ৯শ’ থেকে এক হাজার মিলিমিটারের নিচে নেমে এসেছে। শুষ্ক মৌসুম ছাড়াও দেশের বেশিরভাগ নদ-নদীও শুকিয়ে খালে পরিণত হচ্ছে। এ কারণে প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিকমতো রিচার্জ হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বরেন্দ্র এলাকার কৃষি ভূগর্ভস্থ পানি নির্ভর। পদ্মা ও যমুনায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়া এবং মাটির নিচের পানির স্তর নিচে নামায় বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪০ ভাগ এলাকা ‘পানি সংকটাপন্ন’ হয়ে পড়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯৫ সালে এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ১১.৯৫ মিটার নিচে। অথচ ২০১০ সালে এসব এলাকায় পানির স্তর নেমেছে ২২.৭৫ মিটার নিচে। মাত্র ২০ বছরেই পানির স্তর দ্বিগুণ নেমে গেছে। বর্তমানে এই স্তর আরো নিচে নেমেছে। সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁও বিশ্ব মরুময়তা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদফতর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলা হয় উচ্চ তাপমাত্রা ও অনাবৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৮ হাজার ৭২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। দেশের ১৮ হাজার মাইল নদী শুকিয়ে ৮ হাজার মাইলে এসে ঠেকেছে। ওই অনুষ্ঠানের বক্তৃতাকালে অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, দেশে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মরুময়তাও বাড়ছে। ইতোমধ্যে দেশের এক-চতুর্থাংশ এলাকা মরুভূতিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে ১ কোটি ৫ লাখ হেক্টর অর্থাৎ আড়াই কোটি একর জমি মরুভূমির কবলে পড়তে যাচ্ছে। আর এতে ৫০ লাখ হেক্টর জমি চাষের অনুপযোগী হয়েছে। অথচ বর্তমান সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও দিল্লির মোদী সরকারের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে বন্ধুদেশ ভারত এক যুগ থেকে তিস্তার পানি চুক্তি ঝুলিয়ে রেখে ফেনি নদীর পানি চুক্তি করে নদী থেকে পানি উঠিয়ে নিচ্ছে।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) আয়োজিত ‘জীবন ও জীবিকার জন্য পানি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, উজানে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুষ্ক বালুচরে পরিণত হচ্ছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে বাড়ছে লবণাক্ততা। নদী দখল-ভরাট আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন। দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য ও জীববৈচিত্র্য শূন্য হয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। দেশের নদীগুলোর প্রায় প্রতিটিরই একই দশা। তিস্তার পানির প্রবাহ ব্যাপকহারে কমে গেছে। পদ্মা এখন মৃতপ্রায়, যমুনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলী দখল, ভরাট ও দূষণের ভারে বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলছে।
জানতে চাইলে ভূগর্ভস্থ পানি বিশেষজ্ঞ এবং পাউবো পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ঢাকার মাটির নিচে একটি বড় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। মাটির নিচে হচ্ছে বলে আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা বিপর্যয়ের ধারণাই পাচ্ছি। তাছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ অসীম না। সরকারকে অবশ্যই জাতীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় এর ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। না হলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনে রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানি স্তর প্রতিবছর ২ মিটার (প্রায় ৭ ফুট) করে নেমে যাচ্ছে। এতে করে মিঠা পানির সংকট শুধু নয়, ঢাকায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়ছে। একদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অন্যদিকে অপরিকল্পিত ভাবে পানি উত্তোলন। ঢাকার কেন্দ্রে ভূগর্ভস্থ পানি স্তর নেমে যাওয়ায় একটি শূন্যস্থান চিহ্নিত করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। ভূতত্ত্বের ভাষায় যাকে বলে ‘কম্পাউন্ড কোন অব ডিপ্রেশন’। এই ‘কম্পাউন্ড কোন অব ডিপ্রেশন’র বিস্তার ঢাকার কেন্দ্র থেকে আশেপাশের টঙ্গী, সাভার, ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নামতে থাকায় পানি সংকট ও ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এর জন্য পানির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। নগরবাসীর প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। দূষণ ও দখলের কারণে ঢাকার চারপাশের নদী ও নালা পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায়, নগরীর প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দার ঘরে ও শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা প্রায় ৭০ শতাংশ পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে মাটির নিচ থেকে। শুধু ঢাকা ওয়াসা প্রতিদিন প্রায় ৩৩ লাখ ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে; আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, উত্তোলন করা এই পানির অন্তত ২৫ শতাংশই অপচয় হচ্ছে সরবরাহ প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে। অপরিকল্পিভাবে পানি উত্তোলনে ঢাকার ভূগর্ভস্থ মাটির নিচে বড় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। মাটির নিচে হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে না।
অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে এই নগরী প্রতিনিয়ত বর্ধিত হচ্ছে এবং এর বাসিন্দার সংখ্যাও বাড়ছে। পানির চাহিদা বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে পাউবোর পরিসংখ্যানে। ১৯৭০ সালেও ঢাকা শহরে ৬ মিটার বা প্রায় ২০ ফুট মাটির নিচেই পানি পাওয়া যেত। অথচ ২০২৩ সালে ৭৩ মিটার বা প্রায় ২৪০ ফুটের আগে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েক দশক আগেই ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল পাউবো এবং গবেষকরা। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটারে, যা ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার, ২০১০ সালে ৬০ মিটার এবং ২০২৩ সালে এসে ৭৫ মিটারে নেমেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এটি নেমে যেতে পারে ১২০ মিটারে। কেননা, ওয়াসার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫ সালে প্রতিদিন ৩৫ লাখ ঘনমিটার, ২০৩০ সালে প্রতিদিন ৪৩ লাখ ঘনমিটার এবং ২০৩৫ সালে প্রতিদিন ৫২ লাখ ঘনমিটার পানির চাহিদা থাকবে ঢাকায়।
গত বছর তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের পর বিশ্বের ভূমিকম্পের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় ঢাকার নাম উঠে আসে। ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে এখানে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। পানির স্তর নিচে নামলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরো বাড়ে। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার ২০০৯ সালে করা এক যৌথ জরিপে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে ৭ কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান জানান, ঢাকায় নির্মাণ করা বিল্ডিংগুলোর যে কোয়ালিটি, সেটি অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। অনেক এলাকায়ই বিশেষ করে গত ১০ বছরে, অল্প কিছু মাটি ভরাট করে অনেক বড় বড় ইমারত হচ্ছে। রাজউকে যখন অনুমতির জন্য আবেদন জমা দিচ্ছে, তখন আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং জমা দিচ্ছে, কিন্তু আর্কিটেকচারালি ডিজাইনগুলো কীভাবে হবে, সেটি উল্লেখ করা হয় না। নীতিমালাতেই নেই। কিন্তু ভবনের নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরি। কিন্তু নতুন নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা মিয়া বলেন, যেকোনো সময় যেকোনো মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে বাংলাদেশে এমন সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় দেশকে তিনটা জোনে ভাগ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ, রংপুর থেকে শুরু করে সিলেটের এ জোনটা উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী থেকে শুরু করে কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চল মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ। আর দক্ষিণ-পূর্ব দিকটা নিম্নঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়ে থাকে। ঢাকায় যে ভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন তাকে ঝুঁকি বেশি।
বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ মানুষের আওতার মধ্যে পানির কোনো না কোনো উৎস রয়েছে। কিন্তু এর সবটাই পানযোগ্য নয়। বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলো আস্তে আস্তে দূষিত হয়ে পড়ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা ৮০ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর জীবাণু ই-কোলাই রয়েছে। এছাড়াও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, রাজউক এবং ওয়াসার মধ্যে সমন্বয় নেই। এর মধ্যে ইট-পাথরে ঢাকা অনেকটা ঢেকে গেছে। ফলে পানি মাটির নিচে প্রবেশ করতে পারছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, পানি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে এমন সব সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
২০১৩ সালে সরকার ‘বাংলাদেশ পানি আইন’ প্রণয়ন করে এবং ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে সে আইন পাস করে। অথচ, অথচ পর্যন্তও এই আইনটি কার্যকর করা হয়নি। সব ধরনের পানি নিয়ে এই আইন তৈরি করা হলেও এতে ভূগর্ভস্থ পানির বিষয়ে খুব একটা জোর দেয়া হয়নি। অথচ, দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার ও অপব্যবহার করা হচ্ছে এই ভূগর্ভস্থ পানি।
আইনে খাতভিত্তিক পানি ব্যবহারে অগ্রাধিকারের রূপরেখা, পানির চাহিদা বেশি থাকা অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ এবং পানিসম্পদ সংরক্ষণের জন্য পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থাকে (ওয়ারপো) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ভূ-বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলীদের নেতৃত্বে পরিচালনার বদলে ওয়ারপো পরিচালিত হচ্ছে আমলাদের মাধ্যমে এবং বাস্তবে তারা শুধু পরিকল্পনাই করছে, কোনো বাস্তবায়ন নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন আহমেদ বলেন, ভূগর্ভস্থ কাদামাটির স্তরগুলো বালির স্তরগুলোর ঠিক বিপরীত আচরণ করে। কাদার স্তরে (যার পুরুত্ব ৬০ ফুট পর্যন্ত) কোন অব ডিপ্রেশন তৈরি হলে ভূমিধস হতে পারে এবং ভূগর্ভস্থ পানির রিজার্ভ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।