ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
বাদী-সাক্ষী সবই ভুয়া
নতুন সময় প্রতিনিধি
প্রকাশ: Sunday, 5 September, 2021, 10:13 AM

বাদী-সাক্ষী সবই ভুয়া

বাদী-সাক্ষী সবই ভুয়া

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার স্কুলশিক্ষিকা জোলেখা আক্তার। হঠাৎ করেই খবর পান তার নামে একটি মামলা হয়েছে। বাদী তার স্বামী আনোয়ার হোসেন। মামলার অভিযোগে আনোয়ার দাবি করেন, তাকে ডিভোর্স না দিয়েই রুকোনুজ্জামান শাহ ওরফে বুলেট নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধভাবে বসবাস করছেন জোলেখা। মামলার কথা শুনে জোলেখার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তার পরিবারও হতবাক। কারণ জোলেখার স্বামীর নাম যে আনোয়ার নয়। কেনই বা তা হলে অপরিচিত আনোয়ার হোসেন তাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এমন মামলা করলেন? এ ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে আমাদের সময়। অনুসন্ধানের শুরুতে চারটি বিষয় সামনে রেখে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

কে এই আনোয়ার হোসেন? জোলেখা সত্যিই কি তার স্ত্রী? কবে তাদের বিয়ে হয়েছিল? দেনমোহর কত ছিল? অনুসন্ধানকালে আনোয়ার হোসেনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও কাবিননামার নথি সংগ্রহ করা হয়। এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যায়, মামলার বাদী ও চারজন সাক্ষীর সবাই ভুয়া।

পেছনের কথা : ২০১৫ সালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের ছেলে সোহেল রানার সঙ্গে নীফামারীর মেয়ে জোলেখা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সোহেল রানা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। তাদের একটি ছেলেও রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছর পর জোলেখার সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। একপর্যায়ে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ এনে সোহেল রানাসহ শ^শুরবাড়ির কয়েকজনের বিরুদ্ধে নীলফামারী জেলা আদালতে মামলা করেন জোলেখা। আর এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান সোহেল। কয়েক মাস পর জামিনে বেরিয়ে এসে জোলেখার

বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন তিনি। কিন্তু সেই মামলায় সোহেল খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তাই জোলেখাকে শায়েস্তা করতে বেছে নেন ভিন্ন পথ।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, জোলেখার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মামলা করার পথ খোঁজেন সোহেল। এ জন্য তিনি এক আইনজীবীর সহায়তা নেন। জনৈক আনোয়ার হোসেনের এনআইডির ফটোকপি ব্যবহার করে মামলা করা হয়। এতে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে জোলেখার বিয়ের প্রমাণ হিসেবে একটি কাবিননামাও সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী জেলার এক কাজী অফিসের নামে জমা দেওয়া ওই কাবিননামাটিও ভুয়া। মামলার আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মনিরউদ্দিন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রেমের সম্পর্ক থেকে জোলেখার সঙ্গে আনোয়ার হোসেনের ৩০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর আনোয়ার জানতে পারেন, রুকোনুজ্জামান শাহ ওরফে বুলেট নামে এক যুবকের সঙ্গে তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ জোলেখা তার স্বামী আনোয়ার হোসেনকে তালাক না দিয়ে রুকোনুজ্জামান বুলেটের সঙ্গে বসবাস করছেন। এ ছাড়া বিয়ের সময় দেওয়া স্বর্ণালঙ্কারও আত্মসাৎ করেছেন জোলেখা।

চলতি বছরের ৩১ মে নীলফামারী জেলা জজ আদালতে জোলেখার করা নারী নির্যাতন মামলার হাজিরা দিতে যান সোহেল রানা। এ সময় জোলেখাকে চরিত্রহীন হিসেবে উপস্থাপন করতে ঢাকার সিএমএম আদালতে দায়ের হওয়া ‘ব্যভিচার’ মামলার নথি রেফারেন্স হিসেবে আদালতে জমা দেন তিনি। এর পরই জোলেখা জানতে পারেন, তার নামে এমন অপবাদের মামলা হয়েছে।

কিন্তু মামলার বাদী হিসেবে যে আনোয়ার হোসেনের নাম রয়েছে তিনি আসলে কে? অনুসন্ধান বলছে, মাদারীপুরের বাসিন্দা আনোয়ার পেশায় গাড়িচালক। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ বাদী হিসেবে আমাকে একটি নোটিশ পাঠানোর পর জানতে পারি, আমি নাকি মামলা করেছি। আসলে আমি কোনো মামলা করিনি। আমাকে বাদী করে কে মামলা করল তার চেহারাটা একবার দেখতে চাই। কারা এ ঝামেলার ভেতর ফেলে আমাকে, তাদের বিচার চাই।

তিনি জানান, কয়েক মাস আগে নোটারি পাবলিকের একটি কাজে ঢাকার আদালত এলাকার দোকান থেকে নিজের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি করেছিলেন। তার ধারণা, ওই দোকান থেকেই তার আইডি কার্ডের ফটোকপি রেখে দেওয়া হয়েছিল। যেটি পরবর্তী সময় ভুয়া মামলায় তাকে বাদী হিসেবে উপস্থানের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জোলেখা আক্তারের বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সোহেল রানার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দেওয়াই ভুল হয়েছে। সে অনেক বড় প্রতারক। আমাদের নামে আগেই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সেটিতে সুবিধা করতে না পেরে এবার আমার মেয়ের নামে এমন অপবাদ দিয়ে ভুয়া মামলা করল। আমরা তার উপযুক্ত বিচার চাই।

সব ভুয়া ডকুমেন্টস দিয়ে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী মোহাম্মদ মনিরউদ্দিন বলেন, আনোয়ার হোসেন নিজে এসে মামলাটি করেছেন। সে নিজে এসে স্বাক্ষর করেছে। আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ তুলেছেন জানানো হলে এ আইনজীবী বলেন, তা হলে আর আমার কী বলার আছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে সোহেল রানাকে পাওয়া যায়নি। বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ঢাকার সিএমএম আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই ঢাকা মহানগর উত্তরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন থাকায় এ নিয়ে আমরা এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status