ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৯ কার্তিক ১৪৩২
পূর্ব এশীয় পপ সংস্কৃতি যেভাবে জেন-জি আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করছে
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Tuesday, 4 November, 2025, 9:06 PM

পূর্ব এশীয় পপ সংস্কৃতি যেভাবে জেন-জি আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করছে

পূর্ব এশীয় পপ সংস্কৃতি যেভাবে জেন-জি আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করছে

এক সাড়া জাগানো জাপানি মাঙ্গা আর অ্যানিমে সিরিজ 'ওয়ান পিস' । সম্প্রতি নেটফ্লিক্সেও এসেছে এটি। এর প্রধান চরিত্র মাংকি ডি. লুফি এক প্রাণবন্ত কিশোর জলদস্যু, খড়ের টুপির নিচে যার মুখে সবসময় লেগে থাকে একগাল হাসি। লুফি আর তার সঙ্গীরা বিশাল সমুদ্রে পাড়ি দেয় দুর্লভ সম্পদের খোঁজে, আর রুখে দাঁড়ায় তাদের শাসনকারী দুর্নীতিগ্রস্ত বিশ্ব সরকারের বিরুদ্ধে। তাদের যাত্রাপথে সবসময় উড়ে চলে তাদের নিজস্ব পতাকা—লুফির টুপিতে আঁকা একটি জলদস্যু চিহ্ন।

কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পর্দার বাইরে এই পতাকাটি এক নতুন গুরুত্ব লাভ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার তরুণরা অর্থনৈতিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে 'ওয়ান পিস'-এর এই জলদস্যু পতাকা ওড়াতে শুরু করে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনার হুমকি দেয়, যা উল্টো এই পতাকার আবেদনকে গণবিক্ষোভে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে।

সেপ্টেম্বরে, এই পতাকা দেখা যায় নেপালে, যেখানে তরুণরা স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে এটি উত্তোলন করে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পতন ঘটে। অক্টোবরে মাদাগাস্কারেও একই ধরনের বিক্ষোভে এই পতাকা দেখা যায়, যা এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এছাড়াও ফিলিপাইন, পেরু এবং মরক্কোতেও এর দেখা মিলেছে।

লুফির এই জলদস্যু পতাকা আসলে এক বিশাল পরিবর্তনেরই প্রতিচ্ছবি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, পশ্চিমা পপ সংস্কৃতিই ছিল তারুণ্যের প্রতিবাদের ভাষা—পাঙ্ক থেকে হিপ-হপ পর্যন্ত। কিন্তু আজকের প্রজন্মের বিক্ষোভকারীরা অনুপ্রেরণা খুঁজে নিচ্ছে অ্যানিমের কাল্পনিক চরিত্র আর কে-পপ গানের সুরে।

দক্ষিণ কোরিয়ায়, 'গার্লস জেনারেশন' ব্যান্ডের 'ইনটু দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড' গানটি ২০১৬-১৭ সালের দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ এবং ২০২৪ সালের সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে, যার ফলে দুজন প্রেসিডেন্টের পতন ঘটেছে।

ইন্দোনেশিয়ার তরুণরা অর্থনৈতিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ‘ওয়ান পিস’-এর এই জলদস্যু পতাকা ওড়াতে শুরু করে। একই গান ২০১৯ ও ২০২০ সালে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী সমাবেশে এবং ২০২০ সালে থাইল্যান্ডেও বেজে উঠেছিল। থাই বিক্ষোভকারীরা হ্যামস্টারের কান পরে জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমে সিরিজ 'হ্যামটারো'-র জিঙ্গেলের সাথে স্লোগান দিচ্ছিল, 'জনগণের করের টাকাই সবচেয়ে মজার খাবার!' টোকিওর পপ-সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ রোল্যান্ড কেল্টস বলেন, পূর্ব এশিয়া, যা একসময় রক্ষণশীলতার প্রতীক ছিল, এখন তারাই কি না বৈশ্বিক প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর 'ছবি আর সংগীত' সরবরাহ করছে।

এর একটি কারণ হলো, আজকের তরুণদের কাছে কে-পপ এবং অ্যানিমে এক সাংস্কৃতিক ভিত্তি, ঠিক যেমনটা আগের প্রজন্মের কাছে ছিল পশ্চিমা সংগীত, চলচ্চিত্র বা বই। এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতার কারণে কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রতীকের ব্যবহার খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। অনলাইনে নেপাল আর ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভ দেখে মাদাগাস্কারের ২৬ বছর বয়সী সমাজকর্মী শেলি আন্দ্রিয়ামিহাজা বলেন যে, পৃথিবীর সব জায়গার তরুণরা লড়ছে 'একই লড়াই… দুর্নীতি, কুশাসন আর অবহেলার বিরুদ্ধে'।

তিনি এবং তার সঙ্গীরা সংহতি প্রকাশের জন্য 'ওয়ান পিস'-এর পতাকা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। সহজেই চেনা যাওয়ায়, এই পতাকাটি তাদের নিজেদের প্রতিবাদকেও ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আরও বেশি দৃশ্যমান করে তুলেছিল।

তবে এর পেছনে হয়তো আরও গভীর কোনো কারণ লুকিয়ে আছে। দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পরপরই, ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে কে-পপ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির লি গিউ-তাগ যুক্তি দেন, এর বেশিরভাগ গানের কথা সরাসরি রাজনীতি নিয়ে না হলেও, এটি নাগরিক প্রতিরোধের এক চেতনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

প্রতিবাদী তরুণদের কাছে লুফির অফুরন্ত আত্মবিশ্বাস এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণের বিষয়। অন্যদিকে, অ্যানিমের চরিত্রগুলো কোনো নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর নয় এবং তারা বাস করে এক কাল্পনিক জগতে, তাই আজকের তরুণরা আগের দিনের নিখুঁত আমেরিকান হিরোদের চেয়ে এদের সাথে অনেক সহজে একাত্ম হতে পারে, বলেন কেল্টস। লুফি এবং তার সমুদ্রচারী বন্ধুরা যে সবার কাছে সবকিছুর প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, সেটাই নেপাল, ইন্দোনেশিয়া এবং মাদাগাস্কারের মতো ভিন্ন ভিন্ন জায়গার বিক্ষোভকারীদের তাদের নিজেদের বলে দাবি করতে সাহায্য করে।

যেসব সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা শেকলে বাঁধা, সেখানে এই হাসিখুশি অ্যানিমে চরিত্রগুলো গুরুতর সমালোচনাকে আড়াল করার এক চতুর ঢাল হিসেবেও কাজ করে, যদিও তা অল্প সময়ের জন্য (ইন্দোনেশিয়ার এমপিরা আন্দোলন শুরুর কদিন পরেই লুফির পতাকাকে জাতীয় ঐক্যের জন্য হুমকি হিসেবে ঘোষণা করে)।

শেষ পর্যন্ত, লুফি এবং তার সঙ্গীদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের এই তীব্র আকর্ষণের মূলে হয়তো রয়েছে তাদের অফুরন্ত আশাবাদ, কৈশোরের দুরন্ত উচ্ছ্বাস এবং বন্ধুত্ব ও সংহতির প্রতি আন্তরিক উদযাপন। লুফি ঘটনাক্রমে একটি 'ডেভিল ফ্রুট' খেয়ে ফেলে, যা তাকে রাবারের মতো প্রসারিত হওয়ার এবং ভয়ঙ্কর শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি দেয়। কিন্তু এই ফলটি তার সাঁতার কাটার ক্ষমতাও কেড়ে নেয়—যা একজন জলদস্যুর জন্য এক মারাত্মক দুর্বলতা। কিন্তু যখনই সে অথৈ সাগরে পড়ে যায়, তার বন্ধুরা সবসময় তাকে টেনে তোলার জন্য পাশে থাকে।

যে তরুণরা সরকারের কানে নিজেদের কথা পৌঁছানোর জন্য লাঠি আর কাঁদানে গ্যাসের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়, তাদের কাছে লুফির এই অফুরন্ত আত্মবিশ্বাস এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ। এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েও সে বলে, 'তুমি সারাদিন আমাকে মারতে পারো, কিন্তু আমি আমার স্বপ্নকে কখনো জলাঞ্জলি দেব না।'

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status