|
টেকনাফে র্যাব ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে মানবপাচারকারীর কবল থেকে ৫০ ভিকটিম উদ্ধার
রফিক মাহমুদ, কক্সবাজার
|
![]() টেকনাফে র্যাব ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে মানবপাচারকারীর কবল থেকে ৫০ ভিকটিম উদ্ধার র্যাব-১৫ এর অভিযানটি পরিচালিত হয় মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী এলাকার দুর্গম পাহাড়ে, আর কোস্ট গার্ডের অভিযান পরিচালিত হয় একই ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকার আব্দুল আলীর ঘাট সংলগ্ন সমুদ্র উপকূলে। র্যাব জানায়, সম্প্রতি উপকূলীয় এলাকায় মানবপাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১৫ এর সিপিসি-২ ও হোয়াইক্যং সিপিসি-১ এর সদস্যরা যৌথভাবে বাহারছড়ার উত্তর শীলখালী এলাকার পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে। দীর্ঘ সময় চিরুনি তল্লাশির পর পাহাড়ের চূড়ায় একটি ঘর থেকে ২৪ জন ভিকটিমকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ১০ জন নারী ও ১০ জন শিশু রয়েছে—তাঁরা সবাই রোহিঙ্গা নাগরিক। র্যাব জানায়, উদ্ধার ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের ওই পাহাড়ে আটক রাখা হয়েছিল। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাচারকারীরা। র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া) ও সহকারী পুলিশ সুপার আ. ম. ফারুক বলেন, “সম্প্রতি মানবপাচারকারীরা নতুন কৌশলে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের প্রলোভন দেখিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর ফাঁদে ফেলছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা চক্রটির কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করে আসছিলাম। অভিযানে ২৪ জন ভিকটিমকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। চক্রের মূলহোতাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “র্যাব মানবপাচারসহ সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে সর্বদা সচেষ্ট। কক্সবাজার উপকূলে মানবপাচার বন্ধে অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করা হবে।” অন্যদিকে, বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাহারছড়া আউটপোস্টের সদস্যরা জুম্মাপাড়া এলাকার আব্দুল আলীর ঘাট সংলগ্ন সমুদ্র উপকূলে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান চলাকালে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে নৌকায় অবস্থানরত নারী ও শিশুসহ ২৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, “উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র বিদেশে উন্নত জীবনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরি এবং অল্প খরচে বিদেশ যাত্রার প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল।” তিনি আরও যোগ করেন, “অভিযান চলাকালে কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। তবে মানবপাচারকারীদের শনাক্ত ও আটক করতে গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।” লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, “মানব পাচার রোধে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে।” এর আগে গত ২৬ অক্টোবর টেকনাফে এক বাংলাদেশি নাগরিকসহ ২২ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করেছিল র্যাব। গত এক মাসে র্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও বিজিবির যৌথ অভিযানে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকা থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ অন্তত ৪৫৩ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে মানবপাচারকারী চক্রের ৫১ সদস্যকে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
