সত্যি না ভুয়া খবর?
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ভিনগ্রহী মহাকাশযান!
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ভিনগ্রহী মহাকাশযান! কেউ কেউ দাবি করছেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের এই ধূমকেতুটি নাসার অ্যাটলাস টেলিস্কোপে গত ১ জুলাই শনাক্ত হয়। সেটিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার উপায় নিয়েই এখন আলোচনা চলছে। এমনকি কেউ কেউ ‘সামরিক প্রস্তুতি’ ও ‘আন্তর্জাতিক সমন্বয়’ নিয়ে খবরও ছড়াচ্ছেন-যেন এই ধূমকেতুর সম্ভাব্য আঘাত ঠেকানো যায়। এতে অনলাইনে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। কখন এবং কীভাবে ধূমকেতু নিয়ে গুজবের সূত্রপাত? গুজবের শুরু ২৯ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে ঘিরে। যার শিরোনাম ছিল- ‘আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে বিশাল ধূমকেতু, যা আগের ধারণার চেয়েও বড়; এটি ভিনগ্রহী প্রযুক্তি হতে পারে, বিজ্ঞানীর দাবি: এটি আমাদের জন্য সবকিছু বদলে দিতে পারে।’ প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ব্যবহারকারীরা স্ক্রিনশটসহ পোস্ট শেয়ার করতে থাকেন। এক অ্যাকাউন্টে স্টিভেন গ্রিনস্ট্রিট নামে একজন লেখেন, ‘বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি বিশাল ভিনগ্রহী মহাকাশযান পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। কেন আরও মানুষ এ নিয়ে কথা বলছে না?’ আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট ড. ডিসক্লোজার ওই খবরটি পুনরায় পোস্ট করে লেখেন, ‘এই কারণেই সব জেনারেলরা একত্র হচ্ছেন!’ তিনি ইঙ্গিত দেন ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ-এর সভাপতিত্বে এক বৈঠকের দিকে। ওই পোস্টটি দেখা হয় ৫ লাখেরও বেশি বার, যা গুজবকে আরও ছড়িয়ে দেয়। ছড়িয়ে পড়া ধূমকেতু আতঙ্ক নিয়ে রিচার্ড রোপর নামে এক ব্যবহারকারী এক্সে লিখেছেন, ‘একটি বিশাল ধূমকেতু নাকি ঘণ্টায় ১ লাখ ৩০ হাজার মাইল বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে! আমরা কি একে থামাতে পারব? শুনেছি, ইতোমধ্যে দুটি মিশন শুরু হয়েছে- একটির নাম ‘মেসায়া ক্রু’, অন্যটি ‘ফ্রিডম টিম’ ও ‘ইনডিপেনডেন্স টিম’। আমরা পারব!’ এই মন্তব্যের পরই গুজবের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। অনেকে এখন দাবি করছেন, এটি আদৌ কোনো ধূমকেতু নয়, বরং পৃথিবীর দিকে আসা এক ভিনগ্রহী মহাকাশযান। লর্ড বিবো নামের এক ব্যবহারকারী এক্সে দাবি করেছেন, মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু নাকি বলেছেন, ‘এই বস্তুটি পৃথিবীর দিকে আসছে একটি ‘রেকনাইসেন্স মিশন’ পরিচালনার জন্য-সম্ভবত শত্রুতামূলক উদ্দেশ্যে।’ তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব দাবি পুরোপুরি কল্পনানির্ভর ও ভিত্তিহীন। তাদের মতে, ভুয়া স্ক্রিনশট, বিকৃত উক্তি এবং মহাকাশবিষয়ক ভয়ের গল্প মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একধরনের ডিজিটাল আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। আল জাজিরার তথ্য-যাচাই সংস্থা সানাদ ধূমকেতু ৩আই/অ্যাটলাস-সম্পর্কিত দাবিগুলো যাচাই করেছে। এই আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর বিষয়ে তারা খতিয়ে দেখেছে, এটি আদৌ পৃথিবীর জন্য কোনো বাস্তব হুমকি তৈরি করছে কি না, কিংবা এটি শত্রুতামূলক উদ্দেশ্যে পাঠানো কোনো প্রোব হতে পারে কি না। ধূমকেতুটি আসলেই শনাক্ত করা হয়েছিল ২০২৫ সালের ১ জুলাই নাসার অ্যাটলাস টেলিস্কোপের মাধ্যমে। নাসা জানিয়েছে, এটি একটি বরফাচ্ছন্ন কেন্দ্র থেকে নির্গত অশ্রুবিন্দুর মতো ধূলিকণার আবরণে ঘেরা বস্তু, তবে এটি পৃথিবীর জন্য কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করছে না। সংস্থাটি জানায়, ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল ২১ জুলাই, যখন এটি ছিল প্রায় ২৭ কোটি কিলোমিটার (১৬ কোটি ৭৮ লাখ মাইল) দূরে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)ও নিশ্চিত করেছে যে, ধূমকেতুটি পৃথিবী বা অন্য কোনো গ্রহের জন্য কোনো ধরনের হুমকি নয়। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এর নিকটতম দূরত্ব ছিল পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্বের ২.৫ গুণেরও বেশি। নাসার তথ্যমতে, ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে ২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর। তখন এটি সূর্য থেকে প্রায় ২১ কোটি কিলোমিটার (১৩ কোটি ৫ লাখ মাইল) দূরে থাকবে, অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের ভেতরে। তবে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ধূমকেতু, কারণ হাবল স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এটি ঘন্টায় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কিলোমিটার (১ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ মাইল) গতিতে চলছে- যা আমাদের সৌরজগতে আগত কোনো ‘অতিথি বস্তু’র মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |