১৫ বছর অপেক্ষার পর এমন সকাল দেখল বাংলাদেশ
নতুন সময় ডেস্ক
|
নাহিদ রানার দারুণ এক ইয়র্কারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ব্যাটসম্যান শামার জোসেফ বোল্ড হতেই উদযাপনে মেতে উঠল বাংলাদেশ। পেয়ে গেল ১০১ রানের জয়। সঙ্গে টেস্ট সিরিজও সমতায় (১-১) শেষ করল বাংলাদেশ। অনন্য, অসাধারণ, অনবদ্য- যে বিশেষণই দেন না কেনো, প্রত্যেকটা শব্দই যুতসই মনে হবে বাংলাদেশের এ জয়ে। এমন একটা জয়ের জন্য বাংলাদেশের অপেক্ষা ছিল দীর্ঘ ১৫ বছরের। শেষবার উইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছিল ২০০৯ সালে। এরপর ক্যারিবিয় দীপপুঞ্জের দেশটিতে আরও ৭টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিবারই ফলাফলের ঘরে একটাই শব্দ যোগ হয়ে বাংলাদেশের নামের পাশে- পরাজয় বা হার। এর মাঝে ২০১৮ সালে উইন্ডিজকে লাল বলের ক্রিকেটে দুবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ, কিন্তু সেটা ছিল দেশের মাটিতে। উইন্ডিজের মাটিতে দেড় দশকের অপেক্ষার পর বাংলাদেশের এমন জয় তাই ইতিহাসই হয়ে থাকবে। ইতিহাসের এ মুহূর্তটা ধরে রাখতে কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কের স্ট্যাম্প সংগ্রহে নেওয়ার চেষ্টা করলেন কয়েকজন। শাহাদাত হোসেন দীপু-মাহমুদুল হাসান জয়েরা স্ট্যাম্প পেলেও ক্যামেরা ক্যাবল লাগানো থাকায় স্ট্যাম্প নিতে পারলেন না নাহিদ রানা। কিন্তু তাতে কী, ২২ বছর বয়সী এ তরুণ পেসার যা করেছেন, তাতে ইতিহাসই বরং মনে রাখবে রানাকে। বাংলাদেশের এ জয় যতবার আলোচনায় আসবে, ততবার নাম উঠে আসবে ডান হাতি এ পেসারের। অ্যান্টিগায় সিরিজের প্রথম টেস্টে ২০১ রানে হারের পর কে-ই বা ভেবেছিল, পরের টেস্টে এভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। তার ওপর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ-লিটন দাসেরা। এমন সংগ্রহ নিয়েও প্রথম ইনিংসে ১৮ রানের লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটা নাহিদ রানার কল্যাণেই। কিংস্টনে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে উইন্ডিজকে ১৪৬ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত গতিতে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের নাকানি-চুবানি খাইয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন নাহিদ রানা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তখন সফরকারীদের লিড ২১১ রানের। বাংলাদেশ জয়ের সুবাস পেতে থাকে তখন থেকেই। কিংস্টনের ইতিহাসই বরং সে আভাসটা দিচ্ছিল মিরাজ-লিটনদের। স্যাবাইনা পার্কে এর আগে টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটাও যে এটাই। গতকাল টেস্টের চতুর্থ দিন নিজেদের সংগ্রহটাকে আরও বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ। জাকের আলী অনিকের চোখ জুড়ানো সব শটে ৯১ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৮। তাতে জয়ের জন্য উইন্ডিজের প্রয়োজন ২৮৭ রান। জয় পেতে কিংস্টনে নতুন ইতিহাসই লিখতে হতো স্বাগতিকদের। কিন্তু সেটা হতে দিলেন না বাংলাদেশি বোলাররা। এবার পেসারদের সঙ্গে যোগ দিলেন স্পিনার তাইজুল ইসলামও। বাংলাদেশের বোলিং তোপে দ্বিতীয় ইনিংসে উইন্ডিজ গুটিয়ে যায় ১৮৫ রানে। তাতে ১০১ রানের জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে সফরকারীরা। উইন্ডিজকে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ধাক্কাটা দেন তাইজুল ইসলাম। লাঞ্চের আগে স্বাগতিকরা যে ৪.২ ওভার খেলার সুযোগ পেয়েছিল, এর মধ্যেই ওপেনার মিকাইল লুইসকে (৬) ফেরান তাইজুল ইসলাম। ২৩ রানে ১ উইকেটে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়া উইন্ডিজ দ্বিতীয় সেশনের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালায়। তবে ইনিংসের ১৫তম ওভারে কিসি কার্টিকে (১৪) ফিরিয়ে সে চেষ্টা ব্যর্থ করেন তাসকিন আহমেদ। এরপরও কেভাম হজকে সঙ্গে নিয়ে উইন্ডিজকে টানছিলেন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। দুজনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩৫ রান যোগ হয় উইন্ডিজ স্কোরবোর্ডে। তবে বিপদ বাড়ার আগেই দারুণ এক ডেলিভারিতে ব্র্যাথওয়েটকে (৬৩ বলে ৪৩) জয়ের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন তাইজুল। চা বিরতির আগে আলিক আথানেজের (৫) উইকেটটাও বাগিয়ে নেন বাঁহাতি স্পিনার। ৪ উইকেটে ১৩৩ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। কেভাম হজ ততক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন বলে হয়তো আশার প্রদীপ নিভুনিভু করে হলেও জ্বলতে শুরু করেছিল উইন্ডিজের। কিন্তু তৃতীয় সেশনের পঞ্চম ওভারে কেভাম হজকে (৫৫ রান) এলবিডাব্লিউ করে সে প্রদীপ নিভিয়ে দেন তাইজুল। একটু পরে জাস্টিন গ্রেভসের (২০) স্ট্যাম্প ভেঙে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম ফাইফার (৫ উইকেট) তুলে নেন বাঁহাতি স্পিনার। পরের কাজটা সারেন পেসাররা। ১১ রানের ব্যবধানে উইন্ডিজের শেষ ৩ উইকেট আদায় করে বাংলাদেশকে এনে দেন দেড় দশকের অপেক্ষার এক জয়। তাতে জয় দিয়েই বছরের টেস্ট অধ্যায়ের সমাপ্তি টানল বাংলাদেশ। তাইজুলের ৫ উইকেটের দিনে হাসান মাহমুদ ও তাসকিন ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। এছাড়া প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করা নাহিদ পেয়েছেন ১ উইকেট।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |