রাঙ্গুনিয়া থেকে মাসে কোটি টাকার বাঁশ পাচার!
এম মতিন, রাঙ্গুনিয়া
|
রাঙ্গুনিয়ায় পানির স্রোতের মতোই পাচার হচ্ছে লাখ লাখ বাঁশ। সমানতালেই চলছে চাঁদাবাজি। বনবিভাগের অন্তত ৩০টি চেকপোস্টকে ম্যানেজ করেই দিনরাত চলছে পাচার কার্যক্রম। সক্রিয় সিন্ডিকেটের বেপরোয়ায় অসহায়ের দৃষ্টিতে নীবর দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন। নদী ও সড়ক পথে এসব বাঁশ পাচার সিন্ডিকেট থেকে প্রতিমাসে পুলিশের পকেটে যাচ্ছে অন্তত ১০ লাখ টাকার ঘুষ। সিন্ডিকেট পুরোই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের। অবৈধ বাঁশ পাচার থেকে প্রতিমাসে অন্তত আরও ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বনের কর্তারা। আর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে এ প্রতিবেদকের কাছে অবৈধ বাঁশ পাচার থেকে মাসোহারা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন রাঙ্গুনিয়ার ইছামতি রেঞ্জের বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমি কিছুদিন আগেই এই রেঞ্জে যোগদান করেছি। আগে কে কী করেছে তা আমার জানা নেই। তবে টিপির বাইরে বাঁশ বোঝাই ট্রাক থেকে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয় না। সরকারি রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যে আমরা নদী ও সড়কপথে বাঁশ পাচার রোধে সজাগ রয়েছি। সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার অন্তত সহস্র স্পট থেকে প্রতিনিয়তই উজাড় হচ্ছে সরকারি বেসরকারিভাবে বনায়নকৃত বাঁশ বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এসব বাঁশ পাচার করছে অন্তত ৩০টি সিন্ডিকেট। আর এসব সিন্ডিকেটের অধীনে কাজ করছে অন্তত শতাধিক চোরাই বাঁশ পাচারকারী উপ সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট আর উপ সিন্ডিকেটের হাত দিয়েই কাপ্তাই জেটি ঘাট হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লাখ লাখ বাঁশ পাচার হচ্ছে প্রতিদিন। শুধুমাত্র রাঙ্গুনিয়ায় রয়েছে ১৫টি পাচারকারী সিন্ডিকেট। এরা হচ্ছেন রাঙ্গুনিয়ার শামসুল, বাবুল, কুদ্দুস, নুরউদ্দিন, সামাদ, ফজল করিম, সানাউল্লাহ, চাঁনমিয়া, বশর, রেজাউল করিম, হেলাল, বাঁচামিয়া ও রানা। রাঙ্গামাটির জেলার কাপ্তাই ইছামতি, রাঙ্গুনিয়া, পোমরা চেক ষ্টেশন, কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বনবিভাগের অন্তত ৩০টি চেকপোস্টের দায়িত্বরতদের ম্যানেজ করেই নির্দিষ্ট স্থানে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাঁশ। আর এসব অবৈধ বাঁশ পাচারে একমাত্র সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাপ্তাই আর রাঙ্গামাটি সড়ককে। বহন কাজে ব্যবহার হচ্ছে শতশত ট্রাক। এছাড়া নদীপথে কাপ্তাই নতুন বাজার, কর্নফুলি নদী, ইছামতি নদীর রানীরহাট হয়ে বাঁশের চালি তৈরি করে পাচার করা হচ্ছে লাখ লাখ বাঁশ। জানা যায়, কাপ্তাই বাঁধের উপর থেকে কর্ণফুলি কাগজ কলের ঠিকাদাররা কাগজ কলে বাঁশ সরবরাহ না করে খোলা বাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছে একাধিক ঠিকাদার। বাঁশ ব্যবসা সহজ ও লাভবান হওয়ায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এ ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই। আর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আওয়ামীলীগ সহ এর অঙ্গসংগঠনের নাম। কাপ্তাই জেটির ফরেস্ট ষ্টেশন, রাম পাহাড় বিট, চন্দ্রঘোনা ফরেস্ট স্টেশন, পোমরা চেক ষ্টেশনসহ বিভিন্ন ফরেস্ট চেক ষ্টেশনে প্রতি ট্রাক বাঁশ থেকে ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা হারে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। ট্রানজিট পাস (টিপি) নিয়ে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের রানীরহাট বাজার ও কাপ্তাই বাজার থেকে ৪০-৫০টি ট্রাকে করেই প্রতিদিন লাখ লাখ বাঁশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন হচ্ছে। প্রতিটি বাঁশ থেকে সরকার ১ টাকা ৪০ পায়সা হারে প্রতি হাজার ১৪শ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে।একটি ট্রাকে দেড় থেকে দু’হাজার বাঁশ পরিবহন হচ্ছে দেখানো হচ্ছে। অথচ ২ হাজার বাঁশের গাড়িতেও ঝুঁকি নিয়ে নেয়া হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বাঁশ। আর এসব গাড়ি থেকে বন কর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা হারে। আর সরকার রাজস্ব দেখানো হচ্ছে প্রতি গাড়িতে ১৪শ থেকে ২ হাজার টাকা হারে। সড়ক পথের চাঁদাবাজির চিত্র এটি।কর্ণফুলী আর ইছামতি নদী পথে পাচারের হিসেব এর তিনগুন বেশি। দিনরাত লাখ লাখ বাঁশ ভেসে যাচ্ছে পানির স্রোতে সাথে। আর পানিতে চাঁদাবাজির পরিমাণও সড়কপথের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। বন কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিদিষ্ট স্পষ্টে তাদের চাকুরির বাদ নজর রাখে পানিতে ভেসে যাওয়া বাঁশের ওপর। মরিয়ম নগরের বাঁশ ব্যবসায়ী আহমদ হোসেন জানান, ট্রানজিট পাস (টিপি) নিয়ে বাঁশ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে টিপির চেয়ে বেশি বাঁশ নিলে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে হয় ।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |