রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও বদলায়নি বাজার সিন্ডিকেট, সমাধান কী?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 16 September, 2024, 3:51 PM
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক কিছু বদলালেও, উল্টোচিত্র বাজারে। চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটে হয়েছে কেবল মুখবদল। ফলে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম এখনও পকেট কাটছে ভোক্তাদের।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পতন হয় বিগত সরকারের। এরপর দেশের শাসনভার গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ক্ষমতা নিয়েই বাজার সিন্ডিকেটসহ নানা অনিয়ম ও আর্থিক খাত সংস্কারের ঘোষণা দেয় এ সরকার।
সম্প্রতি অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নিত্যপণ্যের দাম কমাতে এরইমধ্যে শুল্ক প্রত্যাহারসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে একবারে তাদের দৌরাত্ম্য কমবে না। আস্তে আস্তে তাদের দমন করা হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার মনিটরিংয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছি। তারা নিয়মিত করছেও তা। চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এগুলোর প্রভাব এরইমধ্যে বাজারে পড়তে শুরু করেছে।’
তবে বাজার ঘুরে দেখা যায় উল্টোচিত্র। এখনও নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। আর ক্রেতারা বলছেন, কোনো একটি ইস্যু বা অজুহাত পেলেই দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আর তাতে পকেট কাটা হয় ভোক্তাদের।
আশরাফুল আলম নামে এক ভোক্তা বলেন,ঝড়, বৃষ্টি, গরম বা শীত- যাই হোক না কেন, সবসময় অজুহাত থাকে ব্যবসায়ীদের। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে তারা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটেন।
সুরঞ্জন নামে আরেক ভোক্তা বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলায়নি। বাজারে এসে সেই সিন্ডিকেটের কবলেই পড়তে হচ্ছে। সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। না হলে কখনোই স্বস্তি ফিরবে না বাজারে।’
ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজার চলে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী হয়তো সিন্ডিকেট করে থাকেন। যার দায় পড়ে গোটা ব্যবসায়ী সমাজের ওপর। তাছাড়া বিভিন্ন গ্রুপের চাঁদাবাজিতো আছেই।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন,ব্যবসায়ীরা বরাবরই সুযোগসন্ধানী। আগে যেসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করতেন, তারা এখন খোলস বদলেছেন, পদ্ধতি বদলেছেন। তারা পেছনে থেকে অন্য আরেকজনকে দিয়ে বাজারে সিন্ডিকেট করেন বা অপকর্ম চালান।
বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন সরকারকে কিছুটা সময় দেয়া দরকার। আশা করা যায়, সরকার আইন প্রয়োগ করে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে।
আর অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন,বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে আবারও ছাত্র-জনতার সক্রিয়তা দরকার। সরকার পতনের পর ছাত্ররা যেভাবে বাজার তদারকি করেছিল, সেটি আবারও নিয়মিত করা যেতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সমন্বয়ে।
ভোক্তা অধিকারকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এখনই সময় বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলার। নবগঠিত নাগরিক কমিটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভোক্তা অধিকার সিন্ডিকেটকে চাপে রাখতে পারে। এতে স্বস্তি ফিরবে বাজারে।