ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তাররা চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে শত শত রোগী। অনেকেই কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছেন। রোগীদের কেউ কেউ জরুরী বিভাগের সামনে শুয়ে পড়েছেন।
চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই যন্ত্রণায় সহ্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে জরুরী চিকিৎসার জন্য আনা রোগীদের নিয়ে কী করবেন- বুঝতে পারছেন না কেউ। রোগীর সাথে আসা স্বজনদের আহাজারির দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঢামেকে এসেছেন মরিয়ম। সারাদিন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরেও স্বামীকে ভর্তি করাতে পারেননি তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, "এভাবে হাসপাতালে যদি চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকে তাহলে আমরা গরিব মানুষ কোথায় যাব। আমাদের তো অত টাকাও নেই যে অন্য হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাব। চিকিৎসা বন্ধ করে- এটা কেমন আন্দোলন। দেশে কি কোন আইন নাই, আমরা যে কষ্ট পাচ্ছি তার বিচার কে করবে, আমাদের জন্য আন্দোলন কে করবে?"
এর আগে চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য 'কমপ্লিট শাটডাউন' চলবে বলে ঘোষণা দেন দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকরা।
আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ সংবাদমাধ্যমকে এই কর্মবিরতির কথা জানান।
তিনি বলেন, দেশের সমস্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, চেম্বার ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। এই সময়ে কোনো সেবা দেওয়া হবে না।
চিকিৎসকরা চার দফা দাবি জানিয়ে বলেছেন, দাবি আদায় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সবধরনের চিকিৎসাসেবা খাতে কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।
চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো:
হাসপাতালের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যে সকল ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকলকে চিহ্নিত করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ব্যতীত বহিরাগত ব্যক্তি বা মহল কোনোভাবেই হাসপাতালে ভেতর প্রবেশ করতে পারবে না, যা স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালে রোগীর সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসংগতি/অবহেলা পরিলক্ষিত হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
এই শাটডাউনের সময় চিকিৎসার অভাবে যদি কেউ মারা যায়, সেই দায় কার—এমন প্রশ্ন করা হলে সমন্বয়করা বলেন, 'সেই দায় সম্পূর্ণ প্রশাসনের। তারা যত দ্রুত এই দাবি মেনে নেবে, আমরাও তত দ্রুত চিকিৎসাসেবায় ফিরব।'
এর আগে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারধর এবং আরেক ঘটনায় জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।