স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোটা আন্দোলন চলবে
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোটা আন্দোলন চলবে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা তাঁদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। স্থায়ী সমাধানে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেলেও তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন। সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করার দাবিতে এই আন্দোলন চলছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথে ‘বাংলা ব্লকেড’ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনের সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, ‘আমাদের এক দফা দাবি সরাসরি নির্বাহী বিভাগের কাছে। হাইকোর্ট যে বিষয়ে কাজ করছেন, সেটি ২০১৮-এর পরিপত্র নিয়ে৷ আমাদের এক দফা দাবির সম্পূর্ণ সমাধান শুধু নির্বাহী বিভাগ বাংলাদেশ সরকার দিতে পারে। কারণ আমরা এখনো পূর্ণাঙ্গ রায়টি পাইনি৷ পূর্ণাঙ্গ রায়ে ১৮-এর পরিপত্র বহাল থাকতে পারে বা বাতিল হতে পারে। এই রায়ের ওপর নির্ভর করে আমরা থাকতে পারি না। সেটি আমাদের দাবির সঙ্গে যায় না। আমাদের কাছে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে অন্যায় ও অযৌক্তিক কোটা অনেক বেশি৷ আমাদের অবস্থান হচ্ছে, একটি দেশের এত বড় একটি জনশক্তিকে উপেক্ষা করে আপনি কোনো দিন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন না। তাই আমরা মনে করি, এই কোটার বিষয়ে একটি যৌক্তিক সমাধান প্রয়োজন। সেটি শুধু নির্বাহী বিভাগ বা সরকারের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত।’ তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পরিপত্রে কোনো কোটাই নেই। তাহলে আবার সংক্ষুব্ধ হয়ে কেউ যদি হাইকোর্টে রিট করে এবং হাইকোর্ট যদি সেটি বাতিল করেন, তাহলে আমরা কোনদিকে যাচ্ছি। এই যে পরিপত্র নিয়ে খেলা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কয়েক দিন পরপর বারবার রাস্তায় নিয়ে আসা—এটির একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া জরুরি। এটির স্থায়ী সমাধান তখনই হবে, যখন জাতীয় সংসদে এটি তুলতে হবে এবং আইন প্রণয়ন করে সেটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সার্জিস আলম বলেন, ‘যদি নির্বাহী বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে কিংবা ত্রুটিহীন একটি পরিপত্র জারি করে কিংবা কমিশন গঠনের মাধ্যমে গবেষণার মাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিক বাংলাদেশের কোটাব্যবস্থার মধ্যে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিয়ে কোটাকে সংস্কার করা হবে—এমন কমিটমেন্ট দেওয়া হয় এবং সেটা যদি কালকের (আজ বৃহস্পতিবার) সকালেই করা হয়, তাহলে আমরা রাজপথ ছেড়ে দেব। আমরা প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটাকে সমর্থন করি। কোনো নাতি-পুতি পোষ্য কোটা আমরা সমর্থন করি না।’ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের ব্লকেড কর্মসূচিকে সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। ছাত্ররা কিন্তু কোটা ইস্যুতে তাঁদের রায় জানান দিয়ে যাচ্ছেন, জানান দিয়ে যাবেন। আমাদের আগামী কালকের (আজ বৃহস্পতিবার) কর্মসূচি বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে প্রতিটি সড়কে প্রতিটি রেললাইনে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা তাঁদের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো অবরোধ করবেন।’ গতকাল বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির আওতায় রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো দিনভর অবরোধ করে রেখেছিলেন আন্দোলনকারীরা৷ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা৷ সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ অভিমুখে রওনা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা মধুর ক্যান্টিনে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য মধুর ক্যান্টিনের সামনে কিছু সময় অবস্থান করেন। এরপর মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এর আগে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালসহ সাত দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এ সময় সকাল ১১টা পঞ্চাশে ঢাবি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা শাহবাগ ত্যাগ করেন।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |