ভারতের আলোচিত মহাদেব বেটিং অ্যাপকাণ্ডে জড়িয়ে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি'র তদন্তে এবার এই অ্যাপের অন্যতম বিনিয়োগকারী অংশীদার হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বোন জান্নাতুল হাসানের নাম। ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। যদিও জানা গেছে, এই ঘটনায় জান্নাতুল প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নন।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, বেটিং অ্যাপকাণ্ডের তদন্তে সুরজ চোখানি নামে একজনকে গ্রেফতার করার পরেই তিনি সাকিব আল হাসানের বোনের নামটা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন। সুরজ বেটিং অ্যাপ 11wicket.com-র অন্যতম বিনিয়োগকারী। সুরজের দাবি, সেই বিনিয়োগেই বড় অংশীদারিত্ব ছিল সাকিব আল হাসানের বোন জান্নাতুল হাসানের।
ভারতের অন্যতম আলোচিত এই মহাদেব বেটিং অ্যাপ কাণ্ডের তদন্ত নেমে কয়েকদিন আগেই গিরিশ তালরেজা ও সুরজ চোখানি কে গ্রেপ্তার করে ইডি। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ইডি জানতে পারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির টিবরেওয়ালস শেয়ারে কয়েকশো কোটি টাকা এবং কাঠমান্ডুর একটি ক্যাসিনোয় ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তারা। যদিও সেই বিনিয়োগে সাকিবের বোনের অংশীদারিত্ব আছে কিনা সেই বিষয়টা এখনো স্পষ্ট হয়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অর্থপাচার সংক্রান্ত পিএমএলএ বা প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে মহাদেব বেটিং অ্যাপকে ঘিরে। অভিযোগ ছিল নির্বাচনের সময় সংযুক্ত আমিরাত থেকে বিপুল অর্থ প্রদান করে ভারতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করত এই বেটিং অ্যাপ। মহাদেব বেটিং অ্যাপের প্রোমোটার সৌরভ চন্দ্রাকরের বিলাসবহুল বিয়েতে বলিউডের একঝাঁক তারকার যোগদানের ঘটনা প্রথম এই অ্যাপের বিষয়ে মানুষের নজর কাড়ে। অ্যাপের প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে প্রায় ছয় হাজার কোটি রুপি পাচারের অভিযোগ ওঠে। এরপরেই গত একবছর ধরে এই অ্যাপ নিয়ে তদন্ত করছে ইডি। ইডির তদন্তের শুরু থেকেই বারে বারে উঠে এসেছে একাধিক বলিউড সেলিব্রেটি থেকে একাধিক রাজনীতিবিদদের নাম।
সম্প্রতি ইডির তরফে দাবি করা হয়, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে ৫০৮ কোটি টাকা দিয়েছিল মহাদেব বেটিং অ্যাপের প্রোমোটাররা। জানা গেছে, এই মামলায় অসীম দাস এবং ভিম সিং যাদব নামক দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ইডি জানায়, রায়পুরের এক হোটেল থেকে ৫.৩৯ কোটি নগদ উদ্ধার করে পুলিশ। জেরায় অসীম দাস বলে, বাঘেল নামক এক রাজনীতিবিদকে এই টাকা দিতে এসেছিল সে। এই টাকা নাকি দুবাই থেকে এসেছিল।
অ্যাপটির প্রবর্তক, সৌরভ চন্দ্রকর এবং রবি উপ্পল ছিলেন ভিলাইয়ের ফল বিক্রেতা। তাদের বিরুদ্ধে, অভিযোগ ওঠে অ্যাপের মাধ্যমে বেআইনি অর্থপাচারের। ভারতে গ্রেফতারি এড়াতে এসময় ছত্রিশগড় ছেড়ে দুবাইতে থাকতে শুরু করেন তারা। দুবাই থেকে অনলাইনে বেটিং চক্র চালাতেন উপল এবং তার কয়েক জন সহযোগী। ৭০-৩০ লভ্যাংশের অনুপাতে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে এই বেটিং চক্র চলত বলে ইডি সূত্রের খবর। প্রতিদিন ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হত এই অ্যাপের মাধ্যমে।
ভারত থেকে পালিয়ে গেলে এই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড কর্নার নোটিশ জারি করা হয়। গত বছর ডিসেম্বরে দুবাই থেকে আটক করা হয় মহাদেব বেটিং অ্যাপের অন্যতম কর্ণধার রবি উপ্পলকে। রবি ছাড়াও এই অ্যাপটির সঙ্গে জড়িত আর্থিক দুর্নীতির মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে একাধিক বলিউড সেলিব্রেটিকেও।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে, মহাদেব বেটিং অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত ৩৯টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৪১৭ কোটি টাকার সোনার বার, গয়না এবং নগদ উদ্ধার করেছিল ইডি। সবমিলিয়ে ভারতে এখনও পর্যন্ত ৪৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। অনুমান করা হয় ভারতের বাইরে পাচার করা হয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি রুপি। ইতিমধ্যেই ভারতে অ্যাপটি কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।