সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় আইনজীবীদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
কয়েকজন আইনজীবী জানান, রাত ৩টার দিকে ভোট বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়। স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী ও বিএনপি প্যানেলের প্রার্থীরা রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার হন। তারা নির্বাচন কমিশনকে ভোট গণনা করে ফল ঘোষণা করতে বলেন।
তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বিকাল ৩টায় দিনের আলোতে ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এ বিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়। শুক্রবার ভোরে হাতাহাতি মারামারির ঘটনাও ঘটে। এতে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। সেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে মারধর করা হয়। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বহিরাগতরা এ হামলা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
তারা বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের।
তিনি বলেন, ভোট গণনার সময় অন্য সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত না থাকায় সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুপ্রিমকোর্টে এসে বহিরাগতদের বের করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ভোটের বাক্সগুলো পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
ফলাফল ঘোষণার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ভোট তো গণনাই হয়নি। সকাল ৮টার পর পুলিশের পাহারায় আমি সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি। আমাদের নেতারা সার্বিক বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভোটের পর আমরা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলাম। এখনো আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। আমরা এখন ব্যালট বাক্সও খুঁজে পাচ্ছি না, নির্বাচন কমিশনকেও খুঁজে পাচ্ছি না।
শুক্রবার সকালে দেখা যায়, ভোটের ব্যালট বাক্স সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে পুলিশের পাহারায় রয়েছে। এ প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ছাড়া কোনো দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকাদের কাউকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
গতকাল সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। দুই দিনে ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
গতকাল সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে দ্বিতীয় দিনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে শেষ হয়। ২০৫৮ জন আইনজীবী এদিন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আর প্রথম দিনে ৩২৬১ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে- সৌমিত্র সরদার রনী, খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন ও রায়হান রনী।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুই সহ-সভাপতি পদে হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও আব্দুল করিম।
সাতটি সদস্য পদে- ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, শফিকুল ইসলাম শফিক, রাসেল আহমেদ, আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও ইব্রাহিম খলিল।
এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান নির্বাচন করছেন।
এছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন।