প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ
মায়ের হয়েই আজমতের সঙ্গে মাঠে লড়বেন জাহাঙ্গীর
সরে গেলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮ জন মেয়র, ২৩৯ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন
নতুন সময় ডেস্ক
|
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে রয়ে গেলেন সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় গতকাল শেষ হওয়ার পর তাকেসহ ৮ জনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছেন এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন জায়েদা খাতুন। ঋণখেলাপির দায়ে প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলম এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তিনি নির্বাচনে থাকতে না পারলেও মাকে প্রার্থী করা এবং তার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা আগেই দিয়েছেন। এ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হতে না পারায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে অনেকটাই নির্ভার হয়ে গেছেন আজমত উল্লা খানের কর্মী-সমর্থকরা। যদিও মেয়র পদে আরও লড়ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম (রনি সরকার) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমানসহ মোট আটজন। গতকাল গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এদিন ৩৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীও তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এতে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে একক প্রার্থী থাকায় গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মহানগর যুবলীগের সভাপতি রাসেল সরকারের বড় ভাই। যদিও এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করে আসছে বিএনপি। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আজ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। প্রচারের সময় প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন কিনা তা দেখভালে ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। এছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই অনেক প্রার্থী প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে প্রচার চালিয়ে আসছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান ইসিতে গিয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন। প্রসঙ্গত, আগামী ২৫ মে এ সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের আচরণ বিধিমালা মেনে প্রচার করার আহ্বান জানাচ্ছি। আচরণ বিধি প্রতিপালন দেখভালে ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি নির্বাচন কর্মকর্তারা মাঠে থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাদের মধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে এবং একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকি ৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া ৫৭টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে বৈধ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্য থেকে ৩৬ জন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ২৩৯ জন। অপরদিকে সংরক্ষিত ১৯টি কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রার্থীর কেউই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সব মিলিয়ে ৩২৪ জন প্রার্থী চূড়ান্ত লড়াইয়ে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় রাজনীতিক ও স্থানীয়দের মধ্যে বড় কৌতূহল ছিল জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থিতা ফেরত পেলেন কিনা? উচ্চ আদালতে তার রিট আবেদন খারিজ হওয়ার পর আজমত উল্লা খানের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসব দেখা যায়। অপরদিকে জাহাঙ্গীর সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হতে যাচ্ছে। কারণ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও স্থানীয় রাজনীতিতে বহুল আলোচিত ছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ধনাঢ্য ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবেও পরিচিতি রয়েছে তার। তিনি এ সিটি করপোরেশনের মেয়র ছাড়াও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন আজমত উল্লা খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দলের পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। যদিও পরে তাকে সাধারণ ক্ষমা করা হলেও পদ ফিরে পাননি। এরই মধ্যে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এবার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ঋণখেলাপির দায়ে ওই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পরে এ নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষ এবং সর্বশেষ উচ্চ আদালতে গিয়েও প্রার্থিতা ফেরাতে পারেননি। তার মাকে এ নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন। এমন অবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ায় তার পরিণতি কী হবে এবং তার মা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা-তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। মেয়র পদে প্রার্থী যারা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট আটজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, মো. হারুন অর রশীদ ও সরকার শাহনুর ইসলাম। তাদের মধ্যে মো. হারুন অর রশীদ আওয়ামী লীগ সমর্থক। অপরদিকে সরকার শাহনুর ইসলাম (রনি সরকার) বিএনপি সমর্থক। তবে তার কোনো দলীয় পদ নেই। তিনি আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করছেন সরকার শাহনুর ইসলাম। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছি না। এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। গতকাল বেলা পৌনে ১টার দিকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দল ও নগরবাসীর স্বার্থে আমি আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আগামীকাল (আজ) থেকে আমি আজমত উল্লা খানকে সমর্থন জানিয়ে তার জন্য ভোট ও দোয়া চাইব। নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে যেভাবে ভালোবেসেছেন, সেভাবে আজমত উল্লা খানকে এবং নৌকা প্রতীককে ভালোবাসবেন। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারে চাপ ছিল কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে চাপ দেওয়া হয়নি। দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত সমন্বয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দলের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে গেছি। কমিটির সিদ্ধান্ত হলো দলের একজন প্রার্থী থাকবে। সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন। আমি ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।’
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |