ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
সদস্য হোন |  আমাদের জানুন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ক্লিনিক'র ভূয়া রিপোর্ট, জোরপূর্বক রোগীর অপারেশন চেষ্টার অভিযোগ
নতুন সময় প্রতিনিধি
প্রকাশ: Sunday, 7 August, 2022, 1:05 PM

ক্লিনিক'র ভূয়া রিপোর্ট, জোরপূর্বক রোগীর অপারেশন চেষ্টার অভিযোগ

ক্লিনিক'র ভূয়া রিপোর্ট, জোরপূর্বক রোগীর অপারেশন চেষ্টার অভিযোগ

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভূয়া রিপোর্ট তৈরি করে জোরপূর্বক রোগীর অপারেশন চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে গেলে দিনভর ভবানীগঞ্জ বাজারের ক্লিনিক পাড়ায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ অব্যহত থাকে। ঘটনা টি তদন্ত করে জড়িত চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান তারা।

ঘটনার সাথে যে প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে সেই আত তাবারা মডেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত কার্যকলাপে লিপ্ত বলে স্থানীয়রা মত প্রকাশ করেছেন।

আসুন জেনে নেওয়া যাক কি ছিল এবারের সেই ঘটনা।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত আত তাবারা মডেল হাসপাতালে পেটে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসার আসে শিউলি (৩০) নামের এক নারী। শিউলী উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার জামলই গ্রামের মৎস ব্যবসায়ী বাবুর স্ত্রী।

রোগীর অভিভাবক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিউলি কে আত তাবারা মডেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার আল্ট্রাসনোগ্রাফী ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। আল্ট্রা রিপোর্টে লেখা হয়েছে রোগীর বাম কিডনি বড় হয়ে গেছে। এদিকে ডাঃ তৌহিদুল হাসান নাহিদ নামের রামেক হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করতে পরামর্শ দেন। উল্লেখ্য যে ডাঃ তৌহিদুল হাসান নিজেই রোগীর আল্ট্রাসনোগ্রাফী করেন।

এরপরই তৎপর হয়ে উঠে ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীরা। তারা রোগীর অভিভাবকদের দ্রুত অপারেশন করার জন্য চাপ দিতে শুরু করে। এখনই অপারেশন না করলে রোগী মারা যাবে ইত্যাদি বলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়। তাদের (ক্লিনিকের কর্মীদের) কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় রোগীকে সেখান থেকে নিয়ে একই এলাকায় অবস্থিত ভবানীগঞ্জ ক্লিনিক নামের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বলে জানান রোগীর বড় বোন। এক্ষেত্রেও তারা আত তাবারা কর্মীদের বাঁধার সম্মুখীন হোন বলে দাবি করেন।  

ভবানীগঞ্জ ক্লিনিকে পুনরায় রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হলে অ্যাপেন্ডিক্স বা কিডনির কোন সমস্যা পাওয়া যায় নি। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে রোগীটি ভালো আছেন এবং নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে বলে তিনি জানান। ভবানীগঞ্জ ক্লিনিকের মালিক ডাঃ মোঃ আব্দুল বারী জানান, আমার এখানে করা পরীক্ষা নিরীক্ষায় শিউলির কিডনিরোগ কিংবা অ্যাপেনডিক্সের মত কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি।

আত তাবারা মডেল হাসপাতালে করা শিউলীর পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ডাঃ তৌহিদুল হাসান শিউলীর আল্ট্রাসনোগ্রাফী পরীক্ষা করেন এবং তিনিই রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করতে পরামর্শ দেন।যদিও তার প্রতিবেদনে আল্ট্রাসনোগ্রাফীর রেফারাল চিকিৎসক হিসেবে ডাঃ রুবাইয়াত বিথির নাম রয়েছে। তাঁরা দুজনে স্বামী-স্ত্রী বলে নিশ্চিত করেছেন আত তাবারার এক কর্মকর্তা।

আল্ট্রাসনোগ্রাফী ছাড়াও রোগীর রক্ত ও প্রস্রাবের আরো কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোতে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। ডাঃ তৌহিদুল হাসানের সনোগ্রাফী প্রতিবেদন অনুযায়ী শিউলির বাম কিডনি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে গেছে।অথচ সে বিষয়ে কোন পরামর্শ না দিয়ে কি ভাবে রোগীকে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের ব্যবস্থাপত্র দেন তিনি, আর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও কর্মীরাই বা কিভাবে রোগী ও অভিভাবকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুল অস্ত্রপচারের জন্য চাপ দেয়? প্রশ্নগুলো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রোগীর অভিভাবক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ ও নেটিজেনদের মনে।

অবশ্য বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকদের কারো নাগাল পাওয়া যায় নি।আত তাবারার দুয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলেও তার কোন তথ্য দিতে চাননি। এমনকি ডাঃ তৌহিদুল হাসান এর ফোন নম্বর দিতেও অপারগতা জানান তারা।

বাগমারা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম রাব্বানী আত তাবারা মডেল হাসপাতালের এই ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তিনি রোগীর বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করেন। সেই সাথে ঘটনাটি সত্য হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

বাগমারা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি ডাঃ মোঃ সাব্বির আহমেদ অনিকের নিকট ঘটনাটি জানেন কিনা প্রশ্ন রাখা হলে, তিনি অনলাইনে এরকম পোস্ট দেখেছেন বলে ফোনে আমাদের প্রতিনিধিকে জানান। এধরনের ঘটনা উদঘাটন করে অপরাধীদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের প্রতিহত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। এছাড়াও রোগীর অভিভাবকেরা অভিযোগ করলে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সমিতি এধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে বদ্ধপরিকর বলে উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status