|
গাজীপুরে আড়াই কোটি টাকার বাজার ভবন দেড় বছরেও অসম্পূর্ণ
মাহাবুব হোসেন, গাজীপুর
|
![]() গাজীপুরে আড়াই কোটি টাকার বাজার ভবন দেড় বছরেও অসম্পূর্ণ সরেজমিন দেখা যায়, ভবনটি দুই তলা হলেও এখনো অনেক কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এছাড়াও ভবনটির পাশে রয়েছে গাজীপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি) পিরুজালী ইউনিয়ন হাটখোলা বাজারে কৃষি পণ্য বিক্রয় সেড এর আরেকটি প্রকল্প। যা এটিও কোন কাজে আসছে না স্থানীয়দের। আরও দেখা যায়—এলাকাটি মূলত জনশূন্য; সেখানে সক্রিয় কোনো বাজার নেই, নেই মানুষের আনাগোনাও। বহু বছর ধরে এখানে নিয়মিত বাজার বসে না বলেই স্থানীয়দের দাবি। একজন প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, এখানে এক সময় বাজার বসলেও এখন আর বাজার বসেনা। দোকান নেই, ক্রেতা নেই। এখানে বাজার ভবন বানানো মানে সরকারি টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছু না। আরেকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, এখানে হাতেগোনা দু একটি দোকান সেগুলো ঠিকমতো চলছে না। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনচাহিদা বিবেচনা করা হয়নি। বাজার না থাকতেই বাজার প্রকল্প—স্পষ্টতই দুর্নীতি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বাস্তবায়নে দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (সি আর এম আই) এর ২ তলা বাজার ভবন (৪ তলা ভিত্তি) নির্মাণে প্রায় ২ কোটি ৫৩ লাখ ৩২হাজার ৬শ টাকা চুক্তি মূল্য। এম.এস.টি স্টার জেভি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শুরু করে ২০২৩ সালের ১৫ মে মাসে, আর শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের ১৮ জুনে। আর প্রকল্পটির তদারক কারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন গাজীপুর সদর উপজেলার এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন। এখন স্থানিদের মধ্যে প্রশ্ন: নির্ধারিত সময়ের বহু পরও ভবনটির কাজ শেষ হয়নি কেন? ভবনের অভ্যন্তরে স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন কাজ এখনো অসম্পূর্ণ। দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকায় এখন ভবনটিতে মাদকাসক্তদের আড্ডাসহ বিভিন্ন অপরাধের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ প্রকল্পটি বাস্তবে জনগণের উপকারে আসছে না। কারণ যেখানে বাজার বসে না, সেখানে কোটি টাকার বাজার ভবন কেন? কে বা কারা স্থান নির্বাচন করেছেন, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একজন এলাকার শিক্ষক বলেন, সরকারি তহবিলের টাকায় বাজার উন্নয়নের প্রকল্প হলে সেটি জনগণের কাজে লাগতে হবে। এখানে বাস্তবতা বিবেচনা না করেই কাগজে-কলমে বাজার দেখিয়ে ভবন নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। এলজিইডির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এ ধরনের প্রকল্পে আগে বাজার জরিপ, জনসমাগম, স্থানীয় চাহিদা—সব কিছু যাচাই করা হয়। এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছিল কি না তা নতুন করে যাচাই করা প্রয়োজন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কেউই কাজ বিলম্বের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। গাজীপুর সদর উপজেলার এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও প্রকল্পটির তদারকি কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনটির কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি, পরবর্তীতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে জনশূন্য এলাকায় এ ধরনের ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই, কারণ তিনি যোগদানের আগেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে এলাকাবাসীর দাবি এই প্রকল্পের স্থান নির্বাচন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া তদন্ত করা দরকার। তাদের মতে, জনশূন্য এলাকায় বাজার ভবন নির্মাণ সরকারি অর্থের চরম অপব্যবহার, এবং দুর্নীতির শামিল। এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
