|
আশ্রয়ণ প্রকল্পে জনশূন্য ঘর : শ্রীপুরে ১৪২টি ঘরের অর্ধেকেই ঝুলছে তালা
ফাহিম ফরহাদ, গাজীপুর
|
![]() আশ্রয়ণ প্রকল্পে জনশূন্য ঘর : শ্রীপুরে ১৪২টি ঘরের অর্ধেকেই ঝুলছে তালা ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ নয়াপাড়া গ্রামে ৮ একর ৯০ শতাংশ জমির ওপর ১৪২টি পাকাঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার। সুবিধাভোগীদের মাঝে এসব ঘর ও দুই শতাংশ জমির দলিল হস্তান্তরও করা হয়। উদ্বোধনের পরপরই বেশিরভাগ পরিবার ঘরে সুবিধাভোগীরা উঠে থাকলেও কয়েক মাস যেতে না যেতেই অনেকে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে ১৪২টি ঘরের মধ্যে ৬৭টিই একেবারে তালাবদ্ধ। প্রায় ৭৫টি ঘরে নিয়মিত মানুষ থাকলেও বাকি ঘরগুলোর দুই একটিতে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ আসে। খালি ঘরগুলোতে জন্মেছে ঝোপঝাড়, আর তালাবদ্ধ বারান্দায় সন্ধ্যার পর শুরু হয় মাদকসেবী অপরাধীদের আড্ডা। আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় কাজের সুযোগ না থাকা এবং শিক্ষা-সুবিধা না থাকায় অনেক পরিবার স্থায়ীভাবে এখানে থাকতে আগ্রহ বোধ করেন না। ফলে প্রকল্পের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদের ইমামের বেতন পরিশোধ নিয়েও চাপে পড়ছেন বসবাসকারী অল্প কয়েকটি পরিবার। সরেজমিন কথা বলে জানা গেছে, ঘর পেয়েছেন এমন অনেকেরই নিজস্ব বাড়িঘর রয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনরা অভিযোগ করেন, বারবার আবেদন করার পরেও তারা ঘর পাননি। বরাদ্দ পেয়েছেন এমন কয়েকজন পার্শ্ববর্তী বাড়িতে বসবাস করলেও আশ্রয়ণ ঘরটি তালাবদ্ধ রেখে দিয়েছেন। নগরহাওলা গ্রামের কাজল মিয়ার বরাদ্দ পাওয়া ৩৩ নম্বর ঘরটি এ প্রকল্পের অনিয়মের অন্যতম আলোচিত উদাহরণ। তার নিজস্ব বাড়িঘর থাকার পাশাপাশি মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই আমাকে ঘর দেওয়া হয়েছে।” একইভাবে ১২৬ নম্বর ঘরের মালিক সোহাগ ও ২৯ নম্বর ঘরের মালিক রিমা আক্তারসহ একাধিক বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি উদ্বোধনের পর থেকে প্রকল্পে বসবাস করেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৩, ৩৫, ৩৭, ৩৮, ৮৭ ও ১১৮ নম্বর ঘরেও দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলছে। নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল লতিফের স্ত্রী নাজমা আক্তার জানান, রাতে তালাবদ্ধ ঘরের বারান্দায় মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। এছাড়া ঘরে মানুষ না থাকায় মসজিদের ইমামের বেতন পরিশোধের বোঝা চাপছে অল্প কয়েকজন বাসিন্দার ওপর। তার দাবি যেসব ঘর ফাঁকা, সেগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে পুনর্বণ্টন করা হোক। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন,“আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সরকারি বরাদ্দে স্কুল নির্মাণ করা হয়নি, এটি ব্যক্তি উদ্যোগে হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম বা প্রভাব খাটিয়ে ঘর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উদ্দেশ্য ছিল ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, কিন্তু বর্তমানে ‘ঘর আছে মানুষ নেই’ পরিস্থিতি প্রকল্পের মূল লক্ষ্যকেই ব্যাহত করছে। স্থানীয়দের দাবি, তদারকি বাড়ানো, অনিয়ম তদন্ত এবং তালাবদ্ধ ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে পুনরায় বরাদ্দ দিলে প্রকল্পে শৃঙ্খলা ও প্রাণ ফিরে আসবে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
